ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

 

ঝিনাইদহ ভাসছে মাদকে। জেলায় মাদকের ছড়াছড়ি ও ভয়াবহতা চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের এই নীল ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে ছাত্র ও যুব সমাজ। পাড়ায় পাড়ায় মাদক কেনাবেচা নিয়ে তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।

গত ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগেই ব্যাপারী পাড়ার শাপলা চত্বরে দুই মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের একজন সদস্য। ক্যাডেট কলেজের সামনে ঝিনুকমালা আবাসনের সামনে মাদক কেনাবেচা নিয়ে দুই গ্রুপে মারমারিতে মারাত্মক আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও এক যুবক। নেশার টাকা জোগাতে ঝিনাইদহ শহরে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে মাকদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ঐক্য গড়ে তুলে তা নির্মূলের তাগিদ দিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা। গতকাল (রোববার) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক সভা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ঝিনাইদহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়। সভায় বলা হয়, জেলা ও উপজেলা শহরে ব্যাপকভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাদকের এই সহজলভ্যতা ছাত্র ও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মাদক কেনাবেচা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেভাবে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বরং প্রশাসনের সহযোগিতায় মাদক কেনাবেচা হচ্ছে বলে সভায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুকমালা আবাসন, খাজুরা আম বাগান, খাজুরা এতিমখানার মোড়ে, খাজুরা নবগঙ্গা নদীর পাড়ে, পবহাটি কলা বাজারের উত্তর পাশে, আরাপপুর ব্রিজ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পূর্ব ও উত্তর পাশে, ষাটবাড়িয়া, কাঞ্চননগর চার রাস্তার মোড়ে ও প্রান্তিক পার্কের পশ্চিম দিকের কলবাগান পাড়ায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইপার কলোনি, চাকলাপাড়া মির্জা মহলের পিছনের আম বাগানে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর পুরাতন জেলখানা ও রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখকদের কুঁড়েঘরের মধ্যে এক কথায় সদর থানার পিছনের প্রাচিরের সঙ্গেই বসে মাদকের আসর।

এ ছাড়া শহরের পাগলাকানায় বেঁকা ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ায়, পাগলাকানাই মোড় থেকে খালপাড়, কাঞ্চনপুর, ট্রাক টার্মিনাল, হামদহ হাসপাতালে পিছনে ও পশ্চিম দিকে কাঞ্চনপুরের ভিতরে, হামদহ বাইপাস মোড়ে, হামদহ লাশকাটা ঘর এলাকা, হামদহ পাওয়ার হাউজের পাশে, হামদহ টুভুটিয়ারগাতি বাইপাস রোড, ব্যাপারীপাড়া ঢাকালেপট্টি, বৌ-বাজার, শাপলা চত্বর, জোড়া পুকুর এলাকা, সরকারি বালক বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম উত্তর কোণে টেলিফোন টাওয়ারের পাশে, পলিটেকনিক কলেজের পিছনে, বিসিকের পূর্ব পাশে, জোহান পার্কের পিছনে ও টিভি রিলে সেন্টার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতারা প্রতিদিন মাদক কেনাবেচা করছে। এতগুলো স্পটে মাদক বেচা কেনা হয় কিন্তু প্রশাসনের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসার ও সদর থানার সঙ্গে সাপ্তাহিক কমিশনের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে মাদক ব্যবসা প্রকাশ্যে পরিচালনা করে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঝিনাইদহ আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, জামায়াত নেতা আব্দুল আওয়াল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট হুমায়ন বাবর ফিরোজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আবু হুরায়রা ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বুলবুলি খাতুন।

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল ও পুলিশ সুপার মনজুর মোরশেদ মাদক নির্মূলে সবাইকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাদক কেনাবেচা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এ বিষয়ে তারা মাদকের স্পট ও মাদক কারবারিদের তথ্য প্রদানের আহ্বান জানান।

সুত্র: মানবজমিন

Tag :

ঝিনাইদহে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

Update Time : ০১:১০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

 

ঝিনাইদহ ভাসছে মাদকে। জেলায় মাদকের ছড়াছড়ি ও ভয়াবহতা চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের এই নীল ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে ছাত্র ও যুব সমাজ। পাড়ায় পাড়ায় মাদক কেনাবেচা নিয়ে তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।

গত ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগেই ব্যাপারী পাড়ার শাপলা চত্বরে দুই মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের একজন সদস্য। ক্যাডেট কলেজের সামনে ঝিনুকমালা আবাসনের সামনে মাদক কেনাবেচা নিয়ে দুই গ্রুপে মারমারিতে মারাত্মক আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও এক যুবক। নেশার টাকা জোগাতে ঝিনাইদহ শহরে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে মাকদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ঐক্য গড়ে তুলে তা নির্মূলের তাগিদ দিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা। গতকাল (রোববার) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক সভা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ঝিনাইদহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়। সভায় বলা হয়, জেলা ও উপজেলা শহরে ব্যাপকভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মাদকের এই সহজলভ্যতা ছাত্র ও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মাদক কেনাবেচা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেভাবে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বরং প্রশাসনের সহযোগিতায় মাদক কেনাবেচা হচ্ছে বলে সভায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুকমালা আবাসন, খাজুরা আম বাগান, খাজুরা এতিমখানার মোড়ে, খাজুরা নবগঙ্গা নদীর পাড়ে, পবহাটি কলা বাজারের উত্তর পাশে, আরাপপুর ব্রিজ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পূর্ব ও উত্তর পাশে, ষাটবাড়িয়া, কাঞ্চননগর চার রাস্তার মোড়ে ও প্রান্তিক পার্কের পশ্চিম দিকের কলবাগান পাড়ায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইপার কলোনি, চাকলাপাড়া মির্জা মহলের পিছনের আম বাগানে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর পুরাতন জেলখানা ও রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখকদের কুঁড়েঘরের মধ্যে এক কথায় সদর থানার পিছনের প্রাচিরের সঙ্গেই বসে মাদকের আসর।

এ ছাড়া শহরের পাগলাকানায় বেঁকা ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ায়, পাগলাকানাই মোড় থেকে খালপাড়, কাঞ্চনপুর, ট্রাক টার্মিনাল, হামদহ হাসপাতালে পিছনে ও পশ্চিম দিকে কাঞ্চনপুরের ভিতরে, হামদহ বাইপাস মোড়ে, হামদহ লাশকাটা ঘর এলাকা, হামদহ পাওয়ার হাউজের পাশে, হামদহ টুভুটিয়ারগাতি বাইপাস রোড, ব্যাপারীপাড়া ঢাকালেপট্টি, বৌ-বাজার, শাপলা চত্বর, জোড়া পুকুর এলাকা, সরকারি বালক বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম উত্তর কোণে টেলিফোন টাওয়ারের পাশে, পলিটেকনিক কলেজের পিছনে, বিসিকের পূর্ব পাশে, জোহান পার্কের পিছনে ও টিভি রিলে সেন্টার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতারা প্রতিদিন মাদক কেনাবেচা করছে। এতগুলো স্পটে মাদক বেচা কেনা হয় কিন্তু প্রশাসনের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসার ও সদর থানার সঙ্গে সাপ্তাহিক কমিশনের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে মাদক ব্যবসা প্রকাশ্যে পরিচালনা করে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঝিনাইদহ আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, জামায়াত নেতা আব্দুল আওয়াল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট হুমায়ন বাবর ফিরোজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আবু হুরায়রা ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বুলবুলি খাতুন।

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল ও পুলিশ সুপার মনজুর মোরশেদ মাদক নির্মূলে সবাইকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাদক কেনাবেচা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এ বিষয়ে তারা মাদকের স্পট ও মাদক কারবারিদের তথ্য প্রদানের আহ্বান জানান।

সুত্র: মানবজমিন