নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

টানা ১০ বছর কাজ করার পর কর্মস্থল হারানোর শঙ্কায় ঝিনাইদহের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের শতাধিক উদ্যোক্তা। ৩ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা হতে জারিকৃত হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর তাদের এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকারের তৃণমূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেন। এরপর থেকে তারা জেলার ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ করে আসছেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তথ্যসেবা কেন্দ্রকে ডিজিটাল সেন্টার ঘোষণা করা হয়।

ঝিনাইদহে মোট ৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভা রয়েছে। এসব ইউনিয়ন ও পৌরসভাগুলোতে স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতিদের দিয়ে তথ্যসেবার কাজ পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিটি সেন্টারে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। সরকার বা ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগার থেকে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তারা জনগণকে সেবা প্রদান করছেন। সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সামান্য আয় দিয়ে এসব উদ্যোক্তারা জীবন চালাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বাদ রেখে নতুন জনবল নিয়োগ করায় কর্মস্থল হারানোর পথে এসব উদ্যোক্তারা।

যদিও জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে তাদের কর্মসংস্থান হারাবে না, তবে নতুনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আর উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে ‘খেদাব না উঠান চাষ’র অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পূর্বের উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা তাদের স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন তারা। কিন্তু তাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত না করায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। তাতেও কোনো ফল না পেয়ে উদ্যোক্তারা স্থায়ী নিয়োগের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন।

উচ্চ আদালতে একাধিক রিটের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারীদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন কিন্তু রায়ের বিপক্ষে সরকার পক্ষ আপিল করে। আপিলের শুনানিতে শর্তসাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও আদালতে মামলা এখনও চলমান রয়েছে।

এদিকে উল্লেখিত পদে স্থায়ী নিয়োগের আশায় থেকে ইতোমধ্যে অনেকের চাকরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের বয়সও শেষ হয়ে গেছে। যাদের মধ্যে ঝিনাইদহের ২৮ উদ্যোক্তা আদালতে রিট করেন।

গত ৩ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আদালতের দেওয়া শর্ত পূরণ করায় ১৫ জন উদ্যোক্তাকে চূড়ান্ত ফলাফলে রাখা হয়েছে। বাকি ৩৪ জন নতুন। এদের মধ্যে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হোসেন আলী বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রভাগে কাজ করছি। প্রায় ১০ বছর হলো সরকারের কোষাগার থেকে কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য টাকায় বেঁচে আছি। আমাদের হাত ধরেই প্রথম দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বসবাসকারীদের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছেছে। তাই আমাদের মানবিক দাবি ছিল, অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে কর্মরত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া। কিন্তু আমাদের কষ্ট কেউ বোঝেনি। আমরা এখন কাজ হারানোর শঙ্কায় আছি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের পরিবারের খাবার কেড়ে না নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, সরকার নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। তাদের বেকার করেনি। তাদের চাকরি রয়েই গেছে। কাউকে বলা হয়নি কমর্সংস্থান ছাড়তে। তাদের দাবি ছিল কম্পিউটার অপারেটর পদে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের। ঝিনাইদহে ১৫ জনের চাকরি হয়েছে আর যারা বাদ আছেন তাদের নিয়োগ পর্যায়ক্রমে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here