টাঙ্গাইলের সরকারি ও বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই সাপে কাটা রোগীর ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সরকারিভাবে নিয়মিত ভ্যাকসিন সরবরাহের পরও রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে বিষধর সাপে কাটা রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটার রোগীদের জন্য ভ্যাকসিন ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের ব্যবস্থা টাঙ্গাইলের কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে নেই। তাই সাপে কাটা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ঢাকা বা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন টাঙ্গাইলের চিকিৎসকেরা। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।

টাঙ্গাইলের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, বিষধর সাপের বিষে নিউরোটকসিন থাকে। আবার ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ প্রয়োগ করার পরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাপের বিষের কারণে বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই রোগীর ‘এনাফাইলাকটিক শক’ (স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ) হতে পারে। দুই ক্ষেত্রেই রোগীকে তখন বাঁচিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে হয়। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা টাঙ্গাইলের কোনো হাসপাতালে নেই। তাই ভ্যাকসিন থাকার পরও রোগীদের তা প্রয়োগ করা হয় না।

গত ১৬ জুলাই কালিহাতী উপজেলার চরভাবলা গ্রামের আবু সাঈদ (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে সাপে কাটলে তাঁকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সাপে কাটার ভ্যাকসিন প্রয়োগের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সাপে কাটা অনেক রোগীই বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

টাঙ্গাইলের জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুজাউদ্দিন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, এখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকলেও যদি আম্বু ব্যাগ (কৃত্রিম শ্বাস দেয়ার ম্যানুয়াল যন্ত্র) সরবরাহ করা হয়, তাহলে সাপে কাটা রোগীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। এই ব্যাগ থাকলে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে কোনো রোগীর স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হলে আম্বু ব্যাগের সাহায্যে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে ঢাকা বা ময়মনসিংহে আইসিইউ সুবিধা আছে, এমন হাসপাতালে পাঠানোর সময় পাওয়া যাবে।

সুজাউদ্দিন তালুকদার আরও বলেন, সাপে কাটলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ দেশের ৯৫ ভাগ সাপ বিষধর না। বিষহীন সাপে দংশন করলে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। বিষধর সাপে দংশন করলে দংশনের স্থান কালো বর্ণের হবে। রক্ত ঝরতে পারে। দংশনের কিছুক্ষণ পর রোগীর মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব ও চোখে ঘোলা দেখতে পারেন। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।

টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল হুদা বলেন, আধুনিক এই যুগে জেলা পর্যায়ে একটি হাসপাতালে সাপে কাটার রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়। অবিলম্বে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

টাঙ্গাইলে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় সাপে কাটা রোগীর ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here