ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্রূপে ভারত হতভম্ব।

ট্রাম্পের একটি ভিডিও নয়াদিল্লিতে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি মোদিকে নকল (https://www.youtube.com/watch?v=KUL0CP4ZNpk) করেছেন। পাশাপাশি এ খবরও ছড়িয়ে পড়েছে, ট্রাম্প একান্ত আলোচনায় প্রায়ই তাঁর ভারতীয় পক্ষকে নিয়ে তামাশা করে থাকেন।

দ্য হিন্দু পত্রিকার পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এখানে একটি সাধারণ বিশ্বাস প্রচলিত, ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে মোদি নিশ্চিত নন। ভারত এখন বুঝতে শুরু করেছে, ভারতকে আগের প্রেসিডেন্টরা যেমন বদান্যতা দেখিয়েছেন, ট্রাম্প তেমন দেখাবেন না।’

আগামী বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসকে সঙ্গে করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন নয়াদিল্লি সফরে আসবেন, তখন এই মাথাব্যথা তাঁদের সামলাতে হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ট্রাম্পের হঠকারী আচরণ সেগুলোর একটি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা টাইমসকে এ কথা বলেন।

অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা। ইরান থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কেনা বন্ধ করার জন্য ভারতকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিচ্ছে, ভারত রাশিয়ার থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা অব্যাহত রাখলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ছিল মোদির প্রধান বৈদেশিক নীতিসম্পর্কিত প্রচেষ্টা। কিন্তু নয়াদিল্লি সহসাই ওয়াশিংটনের মনোভাব সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় মোদি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় মস্কো ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।

বহু বছর হলো যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, ভারত অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করুক। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স ডব্লিউ টিলারসন ভারতের উদ্দেশে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেওয়াকে তাঁর সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর একটি বলে বর্ণনা করেন।

ম্যাটিসের নেতৃত্বে পেন্টাগনও বিষয়টিতে সমানভাবে নিবেদিত। তারা ভারতকে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে হাওয়াইভিত্তিক প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধ কমান্ডের নাম বদলে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড রাখে।

ভারতের উত্থানকে এতটাই যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় বলে দেখা হতো যে সাবেক প্রেসিডেন্টরা নয়াদিল্লির বাণিজ্য সংরক্ষণনীতির বিষয়টি উপেক্ষা করেন। রাশিয়ার থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়টিও ওয়াশিংটনের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল—যতক্ষণ এর অর্থ দাঁড়ায় আরও শক্তিশালী ভারত।

কিন্তু ট্রাম্পের অধীনে বাণিজ্যের ব্যাপারে কারও জন্য ছাড় নেই। রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রচেষ্টার অর্থ দাঁড়িয়েছে মস্কোর থেকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনায় ভারতীয় পরিকল্পনা—যা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও কেনার কথা ভাবছেন—দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে।

কোনো কোনো অর্থে, মোদি আর ট্রাম্প একে অপরের পরিপূরক। দুজনেই কেন্দ্র থেকে ডানে হেলা জাতীয়তাবাদী, যাঁদের নিজেদের দেশের কিছু সংখ্যালঘু অসহিষ্ণু জননেতা মনে করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here