ঢাকাঃ

সব অভিযোগ যাচাই শেষে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্মেলন হওয়া ৩১ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চান আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

ইতোমধ্যে জেলার নেতাদের নিয়ে এক বা একাধিক বৈঠকও হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও কয়েকটি জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকের কথা। একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৭ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন।

এর আগে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করার কথা ভাবা হচ্ছে। দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, অভিযোগ ধরে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তারা।

জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে। আমরা ফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সামনা-সামনিও বসব। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ত্যাগী ও দুর্দিনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা সুন্দর কমিটি করতে চাই। নিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুলনার ১০ জেলার মধ্যে ৬ জেলার সম্মেলন হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। কীভাবে দ্রুত এ কমিটিগুলো দিতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে বাকি যে ৪টার সম্মেলন হয়নি, সেগুলোর সম্মেলন আগামী দুই মাসের মধ্যেই করার চেষ্টা করব।

প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যে জেলা কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম অভিযোগগুলো দেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবে। পরে একটা কমিটি দলীয় সভাপতির কাছে জমা দেব। এর পরেই যেখানে যেখানে সম্মেলন হয়নি সেগুলোর সম্মেলন করার কাজ শুরু করব।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলনের কাজ আরও আগেই শুরু করার কথা ছিল। শুরুও করেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই কাজ শেষ করতে পারিনি। তারপরও যেহেতু নতুন করে জীবন শুরু হয়েছে। তাই জীবন ও সুরক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সতর্কতার সঙ্গে আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজগুলোকেও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

গত বছর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে তড়িঘড়ি করে ২৯টি জেলার সম্মেলন করা হয়। চলতি বছর সম্মেলন হয় মাত্র দুটি জেলার।

এসব জেলা সম্মেলন কোথায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বা সাংগঠনিক সম্পাদক বা সদস্য পদেরও নাম ঘোষণা করা হয়। অধিকাংশ জেলাই দুই নেতা, কোথায় এক নেতা, কোথায় বা তিন নেতায় চলছে।

জানা গেছে, সম্মেলন হওয়া এই জেলাগুলোর প্রস্তাবিত প্রায় প্রত্যেকটি কমিটির বিরুদ্ধেই একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। অভিযোগে দেখা গেছে, যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সন্তান, জামায়াত পরিবারের সদস্য, শিবির কর্মী, নিষ্ক্রিয় নেতা, মাদককারবারি ও সন্ত্রাসীদের রাখা হয়েছে। আত্মীয়করণ করা হয়েছে। দলের প্রাথমিক সদস্য নয়, অচেনা মুখের ছড়াছড়ি প্রস্তাবিত কমিটিতে। বাদ দেয়া হয়েছে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরে ওই কমিটিগুলো নতুন করে গঠনের কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক টিমের বৈঠক হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে জেলার নেতাদের নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি সভায় অভিযোগগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শুরু এবং জানুয়ারি থেকে সম্মেলনের কাজ শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সভায় চলমান করোনা সংকট এবং এই সংকটে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে গতিশীল রাখা যায় তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

জানতে চাইলে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চাই। কমিটির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগ ধরে ধরে যাচাই-বাছাই করব। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করতে হবে। পাশাপাশি দলের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। ইতোমধ্যে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কিছু কিছু স্থানে সম্মেলন শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে মেয়াদোত্তীর্ণ যেসব উপজেলা আছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তার সম্মেলন শেষ করতে কাজ শুরু করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তারা। সেখানে উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন। ওই বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলাগুলোর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাবনার দুটি উপজেলার সম্মেলনে তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নেত্রীর নির্দেশনা মেনে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দল কার্যক্রম শুরু করেছি। উপজেলা সম্মেলনগুলো করতে নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটির তারিখও ঠিক হয়েছে। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে আমরা নভেম্বরের মধ্যেই কমিটিগুলো নেত্রীর কাছে জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।

আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, আমরা জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। যারা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের কাছে কী কী প্রমাণ আছে, সেগুলোও চাচ্ছি। যাচাই-বাছাই করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা করব।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here