ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার চিঠির (নোট ভারবাল) প্রেক্ষিতে ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে, নয়াদিল্লি ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না এবং তারা সতর্ক অবস্থানে থাকতে চায়।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লির সূত্রগুলি বলেছে, ভারত বিরোধী অবস্থান গ্রহণকারী ছাত্র এবং ডানপন্থী সংগঠনগুলির কার্যকলাপে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টতই ইতোমধ্যে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে তাতে ভারত আর কোনো অসুবিধা যোগ করতে চায় না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সোমবার স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য একটি নোট ভারবাল পাঠিয়েছে এবং এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, “এই মুহুর্তে, এই বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য করার নেই।” গত ৫ আগস্ট নাটকীয় দৃশ্যের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ত্যাগের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে যে বাক্য বিনিময় হয়ে আসছে ভারতের এই পরিমিত প্রতিক্রিয়া তাতে সর্বশেষ স্তর যুক্ত করেছে। অক্টোবরে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
দিল্লির সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেসব ঘটনা ঘটছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যা প্রফেসর মহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর “ক্রমবর্ধমান চাপ” তৈরি করছে। ৯ ডিসেম্বর, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি ঢাকা সফর করেন এবং ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফসিও) অংশ নেন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ ও ঢাকার ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলার মতো বিষয়গুলো উত্থাপন করেন।
মিসরির সফরের পর থেকে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যা এখানে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রাক্তন প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডের প্রাক্তন মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলামের এই সপ্তাহের শুরুতে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাকে আটক করা হয়েছে এমন খবরের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। ২৬ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ এর আগে বৈধতা নিতে হবে। তা না হলে তাদের আইনি উপায়ে মোকাবেলা করা হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিপুল সংখ্যক বিদেশি নাগরিকের কথিত উপস্থিতি মোকাবেলায় সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত জনতা একটি নেতৃস্থানীয় নিউজ চ্যানেলের পাঁচজন সিনিয়র সাংবাদিককে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছে বলে জানা গেছে। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডিডব্লিউ-এর তথ্যমতে, ছাত্র-সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একদল জনতা সময় টিভির পাঁচজন সিনিয়র সাংবাদিককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। একটি ফেসবুক পোস্টে আবদুল্লাহ স্বীকার করেছেন, তিনি সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে “প্রতিবাদ” জানাতে সময় টিভির বিনিয়োগকারীদের কাছে গিয়েছিলেন। “সময় টিভি আমার মন্তব্যকে বিকৃত করছে এবং একটি দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক দলের নীতিকে সমর্থন করছে,” বলেন আবদুল্লাহ।
দিল্লির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্ত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রফেসর ইউনূস সরকারের ক্ষমতা কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ যে চাপ তৈরি হচ্ছে তার বিষয়ে তাদের একটি পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। ইউনূস প্রশাসন নভেম্বর মাসে উপদেষ্টা পরিষদকে আরও প্রসারিত করেছে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন ছাত্র সমন্বয়কারী মাহফুজ আলম সহ নতুন উপদেষ্টাদের যুক্ত করেছে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, তারা তরুণ কর্মী ও নেতাদের বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বের দাবিকে মানিয়ে নিতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, তারা “নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি” শীর্ষক একটি সভা করবে। ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই সভায় আমন্ত্রিত দুই বক্তা থাকবেন নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এতে সরকারে হাসিনাবিরোধী ছাত্র কর্মীদের পদমর্যাদার থেকে উঠে আসা উপদেষ্টাদের যে প্রভাব রয়েছে তা মূল্যায়ন করা যায়।
অনুবাদ: মমিনুল ইসলাম