ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে ফিরছে মানুষ: ‘নিরাপদ’ যশোরে সংক্রমণ আতংক
জাহিদ হাসান, যশোরঃ
‘অবরুদ্ধ’ নারায়নগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা মানুষজনের মাধ্যমে যশোরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই কমবেশি মানুষ সেখান থেকে ফিরে এসে যশোরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখানো পর্যন্ত করোনামুক্ত জেলা যশোর সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ ফেরত মানুষদের মাধ্যমে এখানেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার পর নারায়নগঞ্জে করোনার সবচে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে গড়ানোয় লকাডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে নারায়নগঞ্জে ঢোকা ও বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও থেকে ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে চেপে পালিয়ে আসছে লোকজন যশোর ফিরছেন। তারপর যশোরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছেন।
তবে এখনও লকডাউন না হলেও অন্য জেলা থেকে যশোর প্রবেশের ব্যাপারে প্রশাসনের বিধি নিষেধ রয়েছে। এমনকি যশোরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া আরেক জেলা থেকে যশোরে যেমন আসা যাবেনা। তেমনি যশোরের বাইরে অন্য জেলাতেও যাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যশোরের ভেতরে বাইরে এই যাওয়া আসা সমানতালেই চলছে। করোনায় আক্রান্ত ঢাকা ও নারায়গঞ্জ থেকে এই জেলায় মানুষজন আসা থেমে নেই। তাই দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতন যশোরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আশংকায় আতঙ্কে ভুগছেন এখানকার মানুষ।
জানা যায়, (৯ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার যশোর শহরের বেজপাড়া আনাসার ক্যাম্পের এলাকায় নারায়গঞ্জ থেকে তিনজন যশোরে ফিরেছেন। ফেরার পর তারা অবাধে এলাকায় ঘোরাফেরা করছেণ। যার ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, বেজপাড়া আনছার ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২), তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৩৫) ও পরিবারের অপর একজনকে নিয়ে সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে নিজ বাড়িতে ফেরেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রশাসন ও স্থানীয়দের চাপের মুখে তারা হোমকোয়ারেন্টিন মেনে চলছেন।
এদিকে, যশোরের উপশহরের সাত নাম্বার সেক্টরে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ও ই-ব্লকে একটি পরিবার এসেছে কিশোরগঞ্জ থেকে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে তাদের হোমকোয়ারেন্টাইন থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সদরের বাহাদুরপুর এলাকা থেকেও নারায়নগঞ্জ থেকে এসেছে এক পরিবার। এলাকাবাসী তাদের হোম কোয়ারেনটাইনে থাকতে বাধ্য করেছেন।
এদিকে চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের দফাদার পাড়ায় নারায়নগঞ্জ থেকে আসা দুই জন গার্মেন্টস কর্মী আবু বক্কার ও হাবিুরর রহমান এলাকায় অবস্থান করছেন। এদের পাশাপাশি খাঁ-পাড়ায় রাজিব, সাইফুল্লাহ ও বিল্লাল নামে তিন যুবক নারায়গঞ্জ থেকে পালিয়ে এসেছে। স্থানীরা জানান, এভাবে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে এলাকায় ফিরে আসছে। যেটি মানুষজনের মাঝে করোনার ভীতি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ বাড়িতে ফেরার পর এদের অনেকেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছে।
এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোরের ঢোকার প্রধান সড়কগুলোর মুখে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। তারপরও অনেকে ভিন্ন পথে দিয়ে চলে আসছেন। তারপরও এমনটি যাতে না হয় সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত আছে।
তিনি আরও জানান, মানুষজন এখন অনেক সচেতন। বাইরের জেলা থেকে কেউ যশোরে আসলে এলাকাবাসীর মাধ্যমে সেই খবর খুব দ্রুই প্রশাসনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আর এমন খবর পাওয়ার পর তাদের হোমকোয়ারেন্টিন করতে বাধ্যও করা হচ্ছে। তাদের হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।