ঢাকা ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয়

সবুজদেশ ডেস্ক:

ছবি সংগৃহীত-

 

চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘের (ইসকন) নেতা ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার ও তার জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে চিন্ময়ের অনুসারীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

সোমবার রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সনাতনী সম্প্রদায় বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল বের করে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় চিন্ময় প্রভুকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। ১১টা ৭ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আদালত প্রাঙ্গন জুড়ে পুলিশসহ যৌথবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবলয় ছিল।

বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৬ষ্ঠ) কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবীকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আদালতে তার জামিন শুনানি শুরু করেন। আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সনাতনী সম্প্রদায়ের কয়েকশ আইনজীবী আদালতের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করেন। আদালত আবেদনের শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

জামিন নামঞ্জুরের খবর শুনে আদালত চত্বরে অবস্থানরত সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চিন্ময় প্রভুকে আদালত থেকে বের করে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন প্রিজন ভ্যানের সামনে পেছনে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কেউ কেউ প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন। তারা চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীরাও আদালত চত্বরে থাকা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর করতে থাকে। বিকাল ৩টার দিকে প্রিজন ভ্যান কারাগারের উদ্দেশে এগোতে থাকে। পথে-পথে চিন্ময়ের অনুসারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। জেলা পরিষদের সামনের সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর শুরু করলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিক্ষেপ করতে থাকে ইটপাটকেল। আদালত ভবনের মসজিদের জানালার কাচ ভাংচুর করা হয়।

এতে ক্ষুব্দ আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে সনাতনীদের ধাওয়া দিয়ে রঙ্গম সিনেমার গলিতে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীর ওপর হামলা করে সনাতনীরা। তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও অন্যান্য আইনজীবীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সনাতনীদের হামলায় নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ। তার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামে। ২০১৮ সালে তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০২৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকা ভুক্ত হন। আইনজীবী শাপালা ভবনের ৩৩১ নম্বর চেম্বারে বসতেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ ঘিরে সহকর্মী আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। তারা সাইফুল হত্যার জন্য ইসকনকে দায়ী কারে তাদের শাস্তি দাবি করেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আদালত চিন্ময় প্রভুর জামিন নামঞ্জুর করেছেন। উনাকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের আরেকটা আবেদন ছিল। উনি যেহেতু নিরামিষভোজী ও শাকাহারি, উনাকে যেন ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত সেটা মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আইনজীবী বলেন, তারা নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বুধবার রিভিশন করবেন। সেখানে আবার জামিন চাইবেন।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
২২ Time View

তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয়

আপডেট সময় : ০৮:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

 

চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘের (ইসকন) নেতা ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার ও তার জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে চিন্ময়ের অনুসারীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

সোমবার রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সনাতনী সম্প্রদায় বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল বের করে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় চিন্ময় প্রভুকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। ১১টা ৭ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আদালত প্রাঙ্গন জুড়ে পুলিশসহ যৌথবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবলয় ছিল।

বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৬ষ্ঠ) কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় কয়েকজন আইনজীবীকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আদালতে তার জামিন শুনানি শুরু করেন। আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সনাতনী সম্প্রদায়ের কয়েকশ আইনজীবী আদালতের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করেন। আদালত আবেদনের শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

জামিন নামঞ্জুরের খবর শুনে আদালত চত্বরে অবস্থানরত সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চিন্ময় প্রভুকে আদালত থেকে বের করে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন প্রিজন ভ্যানের সামনে পেছনে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কেউ কেউ প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন। তারা চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীরাও আদালত চত্বরে থাকা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর করতে থাকে। বিকাল ৩টার দিকে প্রিজন ভ্যান কারাগারের উদ্দেশে এগোতে থাকে। পথে-পথে চিন্ময়ের অনুসারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। জেলা পরিষদের সামনের সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর শুরু করলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিক্ষেপ করতে থাকে ইটপাটকেল। আদালত ভবনের মসজিদের জানালার কাচ ভাংচুর করা হয়।

এতে ক্ষুব্দ আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে সনাতনীদের ধাওয়া দিয়ে রঙ্গম সিনেমার গলিতে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীর ওপর হামলা করে সনাতনীরা। তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও অন্যান্য আইনজীবীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সনাতনীদের হামলায় নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ। তার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামে। ২০১৮ সালে তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০২৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকা ভুক্ত হন। আইনজীবী শাপালা ভবনের ৩৩১ নম্বর চেম্বারে বসতেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ ঘিরে সহকর্মী আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। তারা সাইফুল হত্যার জন্য ইসকনকে দায়ী কারে তাদের শাস্তি দাবি করেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আদালত চিন্ময় প্রভুর জামিন নামঞ্জুর করেছেন। উনাকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের আরেকটা আবেদন ছিল। উনি যেহেতু নিরামিষভোজী ও শাকাহারি, উনাকে যেন ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত সেটা মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আইনজীবী বলেন, তারা নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বুধবার রিভিশন করবেন। সেখানে আবার জামিন চাইবেন।

সবুজদেশ/এসইউ