ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাড়াহুড়ো করে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না: প্রধানমন্ত্রী

Reporter Name

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে নতুন নতুন জোট হোক, তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি ভোট করা যাবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর মতো কারও কোনো শক্তি নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না।

বিমসটেক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে আসার পর আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আজ বিকেল চারটায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতে বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য পড়েন।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বাবা-মার কাছ থেকে এই শিক্ষা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে। সুদখোর, ঘুষখোরদের কেন মানুষ নির্বাচিত করবে? একটি কথা আছে, ফাঁকা হাঁড়ি বাজে বেশি। রাজনৈতিক জোট হোক, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই। ষড়যন্ত্র আছে, থাকবে। তাই বলে ভয় করে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। মৃত্যু লেখা থাকলে, হবে। হয়তো গুলি, বোমা খেয়ে মরতে হবে। বিমানের বল্টু খুলে গেল, মরি নাই তো। যত দিন বেঁচে থাকব, কাজ করে যাব।’

ইভিএম মেশিনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক। ইভিএম নিয়ে বিএনপি অনেক বেশি সোচ্চার। কারণ বিএনপি কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হতে পছন্দ করে। ব্যালট পেপারে নির্বাচন হলে একেকজন একাধিক ভোট দিতে পারে, তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা কারচুপির মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ভরাতে পারে। মাগুরা, ঢাকা-১০ আসনের মতো নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। ইভিএমে এই সুযোগ নেই, এ কারণে বিএনপি এটি চায় না।’ তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইভিএম শুরু করা যেতে পারে। এটি নতুন প্রযুক্তি। কিছু কিছু জায়গায় শুরু হলে তো সমস্যা নেই। শহর এলাকায় এটি শুরু করা যেতে পারে। ত্রুটি পেলে বাদ দেওয়া যাবে, এটি নিয়ে বিএনপির এত আপত্তি কেন?’

জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া দেখিয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হলো খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও এই জঘন্য অপরাধ সে করেছে। কিন্তু এই মোশতাকের কতটুকু বিশ্বস্ত ছিল জিয়াউর রহমান? সায়েম সাহেবকে অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়াউর রহমান।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোন প্রক্রিয়ায় জন্ম হয়েছে, সেটি তারা খুঁজে দেখুক। বিএনপি বৈধ সূত্রে বা কোন লগ্নে জন্ম নিয়েছে—শুভ না অশুভ লগ্ন থেকে বিএনপি জন্ম নিয়েছে, সেটি আগে বিএনপি দেখুক।’

ড. কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোটের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে একটি জোট করেছে। দেশে তো দুটি দল। একটি আওয়ামী লীগ, অপরটি অ্যান্টি আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘একটি ভালো জোট হোক, আবার একটি ভালো নির্বাচন করি। একটি বিকল্প তো থাকতে হবে। যাঁরা জোট করেছে, তাঁদের সাধুবাদ জানাই। আমাদের দেশে কিছু হলেই উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমিও তো মৃত্যুর মুখে আছি। সফলভাবে দেশ চালিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি, এতটুকু করতে পেরেছি, তাতেই খুশি। আমরা পারি, তা প্রমাণ করেছি।’

ড. কামাল হোসেন ‘নির্বাচন হবে কি না’ এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (কামাল হোসেন) আদৌ নির্বাচন চান কি না? কামাল হোসেন ও গংয়েরা নির্বাচন চান কি না? অসাংবিধানিক গোষ্ঠী ক্ষমতা নিলে তো তাঁরা একটি পতাকা পাবেন, ক্ষমতা পাবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও চক্রান্ত করা হয়েছিল। ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের কথা বলা হয়। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে সংবিধানেই বলা আছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনকের আসন থেকে ড. কামাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই তিনিই আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, নিজেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেন।’

গণমাধ্যমে বিএনপিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির সৌভাগ্য মিডিয়া তাদের সাহায্য করে। আমি তো তিন-চার নম্বরে। মিডিয়ায় তারা প্রাধান্য পায়। সংসদে বিরোধী দল থাকার পরও বিএনপিকে বিরোধী দল হিসেবে ধরে প্রাধান্য দেওয়া হয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আজও দেখলাম আমি তিন-চার সিরিয়ালে।’

খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর তো ওদের সঙ্গে কথা বলব না। তারা (খালেদা জিয়া) আমার বাড়িতে এসে বসে থাকত, তারা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার তো একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। আমি বারবার অপমানিত হতে কেন যাব?’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেপ্তার করিনি। সে গ্রেপ্তার হয়েছে এতিমের টাকা চুরি করে। তাদের আমলে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি মুক্তি চান, কোর্টের মাধ্যমে আসতে হবে। দ্রুত চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মামলা আমাদের সরকারের দেওয়া নয়। ওনারই পছন্দের ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন সাহেবের আমলে দেওয়া।’

কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির তো অনেক হোমরাচোমরা আইনজীবী আছেন। তবু তাঁদের নেত্রী বন্দী হয়ে আছেন। তাঁরা আন্দোলন করুক। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে, করবে না। নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই।’

মিথ্যা ছবি দিয়ে মিয়ানমারের বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তারা ছবিটা নিয়ে যেটা করল, এটা আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এখানেও কিন্তু এ রকম হয়েছে। প্রশ্নটা হলো এরা শিখল কার কাছ থেকে? স্মরণ করাতে চাই, জামায়াত-বিএনপি মিলে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল।’

রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার যা করেছে, তা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। নিজেরাই নিজেদের সম্মানটা খারাপ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান খারাপ করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো চায়নি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতপূর্ণ অবস্থা তৈরি হোক। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সব সময় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমার কখনো আপত্তি করে না। বলে নিয়ে যাবে। এটা ঠিক, বাস্তবতা হলো, তারা বলে, কিন্তু করে না।’

বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশে সব রকমের সরকার ব্যবস্থার অনুশীলন দেখেছি। কোনোটিই কাজে লাগে না। আর একবার কেউ ক্ষমতায় বসলে ক্ষমতা কেউ ছাড়তে চায় না। কেয়ারটেকার, মার্শাল ল—সবই তো দেখা হয়েছে। কোনোটিই কাজ করে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ভারতে নির্বাচনের সময় পার্লামেন্ট বহাল থাকে। আগামী মে মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার দুই মাস আগে তাদের নির্বাচন করতে হবে। সেখানে তো পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হয় না।

গত শুক্রবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাত দেশের জোট বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি আজ সংবাদ সম্মেলনে এলেন। বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ওই দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিমসটেক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
৪১৪ Time View

তাড়াহুড়ো করে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে নতুন নতুন জোট হোক, তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি ভোট করা যাবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর মতো কারও কোনো শক্তি নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না।

বিমসটেক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে আসার পর আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আজ বিকেল চারটায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতে বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য পড়েন।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বাবা-মার কাছ থেকে এই শিক্ষা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে। সুদখোর, ঘুষখোরদের কেন মানুষ নির্বাচিত করবে? একটি কথা আছে, ফাঁকা হাঁড়ি বাজে বেশি। রাজনৈতিক জোট হোক, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই। ষড়যন্ত্র আছে, থাকবে। তাই বলে ভয় করে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। মৃত্যু লেখা থাকলে, হবে। হয়তো গুলি, বোমা খেয়ে মরতে হবে। বিমানের বল্টু খুলে গেল, মরি নাই তো। যত দিন বেঁচে থাকব, কাজ করে যাব।’

ইভিএম মেশিনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক। ইভিএম নিয়ে বিএনপি অনেক বেশি সোচ্চার। কারণ বিএনপি কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হতে পছন্দ করে। ব্যালট পেপারে নির্বাচন হলে একেকজন একাধিক ভোট দিতে পারে, তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা কারচুপির মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ভরাতে পারে। মাগুরা, ঢাকা-১০ আসনের মতো নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। ইভিএমে এই সুযোগ নেই, এ কারণে বিএনপি এটি চায় না।’ তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইভিএম শুরু করা যেতে পারে। এটি নতুন প্রযুক্তি। কিছু কিছু জায়গায় শুরু হলে তো সমস্যা নেই। শহর এলাকায় এটি শুরু করা যেতে পারে। ত্রুটি পেলে বাদ দেওয়া যাবে, এটি নিয়ে বিএনপির এত আপত্তি কেন?’

জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া দেখিয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হলো খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও এই জঘন্য অপরাধ সে করেছে। কিন্তু এই মোশতাকের কতটুকু বিশ্বস্ত ছিল জিয়াউর রহমান? সায়েম সাহেবকে অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়াউর রহমান।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোন প্রক্রিয়ায় জন্ম হয়েছে, সেটি তারা খুঁজে দেখুক। বিএনপি বৈধ সূত্রে বা কোন লগ্নে জন্ম নিয়েছে—শুভ না অশুভ লগ্ন থেকে বিএনপি জন্ম নিয়েছে, সেটি আগে বিএনপি দেখুক।’

ড. কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোটের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে একটি জোট করেছে। দেশে তো দুটি দল। একটি আওয়ামী লীগ, অপরটি অ্যান্টি আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘একটি ভালো জোট হোক, আবার একটি ভালো নির্বাচন করি। একটি বিকল্প তো থাকতে হবে। যাঁরা জোট করেছে, তাঁদের সাধুবাদ জানাই। আমাদের দেশে কিছু হলেই উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমিও তো মৃত্যুর মুখে আছি। সফলভাবে দেশ চালিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি, এতটুকু করতে পেরেছি, তাতেই খুশি। আমরা পারি, তা প্রমাণ করেছি।’

ড. কামাল হোসেন ‘নির্বাচন হবে কি না’ এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (কামাল হোসেন) আদৌ নির্বাচন চান কি না? কামাল হোসেন ও গংয়েরা নির্বাচন চান কি না? অসাংবিধানিক গোষ্ঠী ক্ষমতা নিলে তো তাঁরা একটি পতাকা পাবেন, ক্ষমতা পাবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও চক্রান্ত করা হয়েছিল। ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের কথা বলা হয়। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে সংবিধানেই বলা আছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনকের আসন থেকে ড. কামাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই তিনিই আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, নিজেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেন।’

গণমাধ্যমে বিএনপিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির সৌভাগ্য মিডিয়া তাদের সাহায্য করে। আমি তো তিন-চার নম্বরে। মিডিয়ায় তারা প্রাধান্য পায়। সংসদে বিরোধী দল থাকার পরও বিএনপিকে বিরোধী দল হিসেবে ধরে প্রাধান্য দেওয়া হয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আজও দেখলাম আমি তিন-চার সিরিয়ালে।’

খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর তো ওদের সঙ্গে কথা বলব না। তারা (খালেদা জিয়া) আমার বাড়িতে এসে বসে থাকত, তারা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার তো একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। আমি বারবার অপমানিত হতে কেন যাব?’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেপ্তার করিনি। সে গ্রেপ্তার হয়েছে এতিমের টাকা চুরি করে। তাদের আমলে দুর্নীতি, ঘুষ নেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি মুক্তি চান, কোর্টের মাধ্যমে আসতে হবে। দ্রুত চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মামলা আমাদের সরকারের দেওয়া নয়। ওনারই পছন্দের ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন সাহেবের আমলে দেওয়া।’

কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির তো অনেক হোমরাচোমরা আইনজীবী আছেন। তবু তাঁদের নেত্রী বন্দী হয়ে আছেন। তাঁরা আন্দোলন করুক। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে, করবে না। নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই।’

মিথ্যা ছবি দিয়ে মিয়ানমারের বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তারা ছবিটা নিয়ে যেটা করল, এটা আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এখানেও কিন্তু এ রকম হয়েছে। প্রশ্নটা হলো এরা শিখল কার কাছ থেকে? স্মরণ করাতে চাই, জামায়াত-বিএনপি মিলে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল।’

রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার যা করেছে, তা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। নিজেরাই নিজেদের সম্মানটা খারাপ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান খারাপ করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো চায়নি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতপূর্ণ অবস্থা তৈরি হোক। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সব সময় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমার কখনো আপত্তি করে না। বলে নিয়ে যাবে। এটা ঠিক, বাস্তবতা হলো, তারা বলে, কিন্তু করে না।’

বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশে সব রকমের সরকার ব্যবস্থার অনুশীলন দেখেছি। কোনোটিই কাজে লাগে না। আর একবার কেউ ক্ষমতায় বসলে ক্ষমতা কেউ ছাড়তে চায় না। কেয়ারটেকার, মার্শাল ল—সবই তো দেখা হয়েছে। কোনোটিই কাজ করে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ভারতে নির্বাচনের সময় পার্লামেন্ট বহাল থাকে। আগামী মে মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার দুই মাস আগে তাদের নির্বাচন করতে হবে। সেখানে তো পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হয় না।

গত শুক্রবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাত দেশের জোট বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি আজ সংবাদ সম্মেলনে এলেন। বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ওই দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিমসটেক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।