ঢাকা ০৫:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন দফা শেষে আরেক দফা জরিপে বিএনপি

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও এগিয়ে রাখছে বিএনপি। সংসদ সদস্য পদে ৩০০ আসন ধরে ‘যোগ্য’ প্রার্থী বাছাইয়ে এরই মধ্যে তিন দফা জরিপও চালিয়েছে বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই নিজেকে জানান দিতে নানাভাবে শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ লন্ডন বা ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাসায় বাসায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। সেটা গুরুত্ব পাচ্ছে না বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের কাছে। এলাকায় কার কী অবস্থান, সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা কার বেশি, ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন কি না, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, দলের জন্য ত্যাগী কি না— এমন নানামুখী তথ্যের ভিত্তিতেই সংসদীয় এলাকায় দলীয়ভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে যাওয়ার আগে এক দফা জরিপ চালিয়েছেন নিজের মতো করে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গোপনীয়ভাবে আরেক দফা জরিপ চালিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী নেতাদের সমন্বয়ে আরও একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সবগুলোর সমন্বয়ও করা হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি বেগম খালেদা জিয়ার জরিপের তালিকা ধরেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে ভোটের নানা মেরুকরণে অন্তত ৫ ভাগ মনোনয়ন পরিবর্তনও হতে পারে। তাছাড়া ২০ দল ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে গেলে সেখানেও বেশ কিছ আসন ছেড়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিপে এসব বিষয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে কিছু ভাবছে না। আমরা এখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে আছি। মুক্ত খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাব। তা ছাড়া বিএনপির মতো দলে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে বেশি সময়েরও প্রয়োজন নেই। প্রতিটি আসনে অন্তত ৩ জন করে প্রার্থী যোগ্য। সুতরাং প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

জানা যায়, এরই মধ্যে ৩০০ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় দুই সহস াধিক নেতা এলাকায় অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই দোয়া চেয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গণসংযোগও করছেন। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনসহ প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। এসব বিষয়ের চেয়ে বিএনপি মূল্যায়ন করছে, দলের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল, জনপ্রিয়তা, দক্ষতাসহ ব্যক্তি যোগ্যতাকে। জানা যায়, দলীয় মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশত নেতা লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ কেউ দেখা না করেই দেশে ফিরে এসে বলছেন, তারেক রহমানের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন তিনি। আবার অনেক নেতাকে নিজ এলাকায় কাজও করতে বলেছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে হাত মেলানোর ছবি বা তারেক রহমানের কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের ছবি নেতা-কর্মীদের দেখিয়ে বলছেন, তার মনোনয়ন কনফার্ম। লন্ডন বিএনপির এক নেতা জানান, তারেক রহমান এই মুহূর্তে কাউকে নেতিবাচক কিছু  বলছেন না। তার মা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। তাই অনেক নেতাকে দেখব বলে আশ্বাস দিয়ে বেগম জিয়ার কারামুক্তির জন্য আন্দোলনের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। আশ্বাস পেয়ে নিজ নিজ এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন কোনো কোনো নেতা।  এদিকে ঢাকায়ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের বাসা বা অফিসেও দৌড়ঝাঁপ করছেন তৃণমূলের নেতারা। কেউ কেউ আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টিতে তাদের হাত নেই। তার পরও নাছোড়বান্দা বিএনপির তৃণমূল নেতারা। টাকার অফারও দেওয়া হচ্ছে প্রভাবশালী নেতাদের। কেউ কেউ লুফেও নিচ্ছেন। এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুখরোচক আলোচনাও চলছে নিয়মিত।

বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা অবশ্য জানান, সাংগঠনিকভাবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিএনপির একটি পার্লামেন্টারি বোর্ড রয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই এই বোর্ডের সদস্য। এ ছাড়া যে জেলার প্রার্থী বাছাই করা হবে ওই জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। তবে তারা প্রার্থী হলে মনোনয়ন বোর্ডে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। এরপর দলের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এই তালিকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। চূড়ান্ত করবে পার্লামেন্টারি বোর্ড। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিএনপি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেবে। তবে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চালায়। বিএনপিও চালাতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। তবে আমরা এখন নির্বাচনকালীন সরকারের আন্দোলনে আছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাই কোনো সমস্যা নয়।’

About Author Information
আপডেট সময় : ০৩:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৮
৯৩৬ Time View

তিন দফা শেষে আরেক দফা জরিপে বিএনপি

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও এগিয়ে রাখছে বিএনপি। সংসদ সদস্য পদে ৩০০ আসন ধরে ‘যোগ্য’ প্রার্থী বাছাইয়ে এরই মধ্যে তিন দফা জরিপও চালিয়েছে বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই নিজেকে জানান দিতে নানাভাবে শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ লন্ডন বা ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাসায় বাসায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। সেটা গুরুত্ব পাচ্ছে না বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের কাছে। এলাকায় কার কী অবস্থান, সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা কার বেশি, ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন কি না, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, দলের জন্য ত্যাগী কি না— এমন নানামুখী তথ্যের ভিত্তিতেই সংসদীয় এলাকায় দলীয়ভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে যাওয়ার আগে এক দফা জরিপ চালিয়েছেন নিজের মতো করে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গোপনীয়ভাবে আরেক দফা জরিপ চালিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী নেতাদের সমন্বয়ে আরও একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সবগুলোর সমন্বয়ও করা হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি বেগম খালেদা জিয়ার জরিপের তালিকা ধরেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে ভোটের নানা মেরুকরণে অন্তত ৫ ভাগ মনোনয়ন পরিবর্তনও হতে পারে। তাছাড়া ২০ দল ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে গেলে সেখানেও বেশ কিছ আসন ছেড়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিপে এসব বিষয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে কিছু ভাবছে না। আমরা এখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে আছি। মুক্ত খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাব। তা ছাড়া বিএনপির মতো দলে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে বেশি সময়েরও প্রয়োজন নেই। প্রতিটি আসনে অন্তত ৩ জন করে প্রার্থী যোগ্য। সুতরাং প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

জানা যায়, এরই মধ্যে ৩০০ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় দুই সহস াধিক নেতা এলাকায় অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই দোয়া চেয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গণসংযোগও করছেন। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনসহ প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। এসব বিষয়ের চেয়ে বিএনপি মূল্যায়ন করছে, দলের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল, জনপ্রিয়তা, দক্ষতাসহ ব্যক্তি যোগ্যতাকে। জানা যায়, দলীয় মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশত নেতা লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ কেউ দেখা না করেই দেশে ফিরে এসে বলছেন, তারেক রহমানের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন তিনি। আবার অনেক নেতাকে নিজ এলাকায় কাজও করতে বলেছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে হাত মেলানোর ছবি বা তারেক রহমানের কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের ছবি নেতা-কর্মীদের দেখিয়ে বলছেন, তার মনোনয়ন কনফার্ম। লন্ডন বিএনপির এক নেতা জানান, তারেক রহমান এই মুহূর্তে কাউকে নেতিবাচক কিছু  বলছেন না। তার মা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। তাই অনেক নেতাকে দেখব বলে আশ্বাস দিয়ে বেগম জিয়ার কারামুক্তির জন্য আন্দোলনের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। আশ্বাস পেয়ে নিজ নিজ এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন কোনো কোনো নেতা।  এদিকে ঢাকায়ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের বাসা বা অফিসেও দৌড়ঝাঁপ করছেন তৃণমূলের নেতারা। কেউ কেউ আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টিতে তাদের হাত নেই। তার পরও নাছোড়বান্দা বিএনপির তৃণমূল নেতারা। টাকার অফারও দেওয়া হচ্ছে প্রভাবশালী নেতাদের। কেউ কেউ লুফেও নিচ্ছেন। এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুখরোচক আলোচনাও চলছে নিয়মিত।

বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা অবশ্য জানান, সাংগঠনিকভাবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিএনপির একটি পার্লামেন্টারি বোর্ড রয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই এই বোর্ডের সদস্য। এ ছাড়া যে জেলার প্রার্থী বাছাই করা হবে ওই জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। তবে তারা প্রার্থী হলে মনোনয়ন বোর্ডে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। এরপর দলের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এই তালিকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। চূড়ান্ত করবে পার্লামেন্টারি বোর্ড। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিএনপি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেবে। তবে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চালায়। বিএনপিও চালাতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। তবে আমরা এখন নির্বাচনকালীন সরকারের আন্দোলনে আছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাই কোনো সমস্যা নয়।’