বার্তাকক্ষঃ

ছাত্রলীগের অমানুষিক নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ফেসবুকে আবেকঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

বুধবার সকালে বুয়েট ক্যাম্পাসের শেরেবাংলা হলে আবরারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিতে যাওয়ার আগে ফাইয়াজ ফেসবুকে তার নিজের আইডি থেকে স্ট্যাটাসটি দেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, আজকে আবার শেষবারের মত যাব ভাইয়ার রুমে। আগে অনেকবার গেলেও পার্থক্য এইবার ভাইয়া আর এই পৃথিবীতে নেই। মাত্র ১৯ মাসের ব্যবধানে আবার আনতে যাচ্ছি যা একদিন রেখে আসছিলাম, কিন্তু এখন সবই ভাইয়ের স্মৃতি হিসেবে।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফাইয়াজের এই স্ট্যাটাসে চার হাজারের ওপরে লাইক পড়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় আবরারের ব্যবহৃত মালামাল পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ আবরার ফাহাদ বুয়েট ক্যাম্পাসের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে উঠেছিল।

আবরার ফাইয়াজ আবেকঘন স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:

প্রথম ক্লাস ছিল সেইদিন আবার সেইদিন ই হলে উঠতে হবে। রুম বরাদ্দ ছিল ২০৭ কিন্তু রুমে রাজনৈতিক দলের লোক থাকায় প্রভোস্ট বলেন ভুল করেও ওই দিকে যাবা না।

ভাইয়া ক্লাসে ছিল বলে আমাদের বলে ৫ তলায় জিনিসপত্র রাখতে। এখনও মনে আছে যেই মামা পায়ের ব্যথায় হাটতে পর্যন্ত পারে না সে কিনা হাসিমুখে অত ভারি বাক্স নিয়ে ওপরে উঠলো কিন্তু নিচে এসে দেখলাম ভাইয়ার থাকার জায়গা হয়েছে মসজিদে।

আবার দুইজন মিলে নামিয়ে আনলাম, দৌড়ে গিয়ে আগে তোষক বিছিয়ে রাখলাম ফ্যানের নিচে, জানালার পাশে যাতে ভাইয়ার সুবিধা হয়। সেইবার যখন চলে আসি তখন ভাইয়া কে দেখে মনে হয়েছিল অনেক খারাপ লাগছে বাট আমরাও খুশি মনে চলে আসি।

মনে আছে বন্ধুরা বলছিল সব ছবি তুলে নিয়ে আসিস কিন্তু লজ্জায় কিছুই তা হয় নি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করত তোমার ভাই কি করে, অনেক গর্ব করে বলতাম বুয়েটে ইইই পড়ে। (এখন অবশ্য লজ্জা আর ঘৃণা লাগে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে)

কালের পরিক্রমায় আজ ৩০ অক্টোবর ২০১৯। আজকে আবার শেষবারের মত যাবো ভাইয়ার রুমে। আগে অনেকবার গেলেও পার্থক্য এইবার ভাইয়া আর এই পৃথিবীতে নেই। মাত্র ১৯ মাসের ব্যবধানে আবার আনতে যাচ্ছি যা একদিন রেখে আসছিলাম কিন্তু এখন সবই ভাইয়ের স্মৃতি হিসেবে। এই হলে একসময় ভাইয়ের সঙ্গে কত ঘুরছি ভাইয়া বলত আমাদের হলের মতো হল বাংলাদেশ এ আর নেই। সারারাত না ঘুমালেও আমি যেতে চাইলে কখনও আসতে নিষেধ করত না, নিজে না থাকলেও বলত চাবি ওইখানে রেখে আসছি।

মাঝে মাঝে ভাইয়া ঘুমিয়ে থাকলে আমি পাশে চেয়ারে বসে থাকতাম, হঠাৎ খেয়াল করলে বলত ‘কিরে তুই কখন আসলি।’ তখন তো আর জানতাম না মাথার ওপরেই আছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কিছু মানুষরূপী জীব, যারা একদিন…..।

আজ আর কেউ নেই যে ‘ওইভাবে’ বলবে কিছু লাগলে আমাকে বলবি আব্বু আম্মুকে বলার দরকার নেই, আর কেউ ঘাড়ে হাত দিয়ে রাস্তা পার হবে না।

কষ্ট শুধুই এইগুলো ভেবে যে, না জানি কতটা কষ্ট পাইছে যখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে আর আমাদের সঙ্গে দেখা হবে না, হয়ত ওদের আঘাত থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছে বাবা-মার কথা ভেবে, কিন্তু যদি একবার বলতে পারতাম তুই শান্তিতে থাকলে আমাদের কাছে না থাকলেও আমরা খুশি, আমাদের চিন্তা তোকে করতে হবে না।

হয়ত একসময় বলেছে, আল্লাহ তুমি ওদের দেখে রেখো তাই হয়তো এত কিছুর পরও এতটা স্বাভাবিক থাকতে পেরেছি।

আল্লাহর কাছেও খালি একটাই চাওয়া এখন, ও যেন শান্তিতে থাকে, দুনিয়ায় কিছু না পেলেও আখিরাতে যেন সব পায়, সত্যি বলতে নিজের কাছের কেউ যখন যায় তখনই বুঝা যায় এই দুনিয়া কতটা ক্ষণিকের।

একটা সময় আস্তে আস্তে হয়তো সব ভুলে যাব তাই এগুলো লিখে রাখা, ভাইয়ার সঙ্গে বড় হওয়াটা তো আর হইলো না। আল্লাহ ভরসা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here