ফারুক নোমানীঃ

নববর্ষ: খৃস্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে আমরা নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছি। সর্বমহলে চলছে নববর্ষকে স্বাগত জানানোর নানা প্রস্তুতি। বর্ষবরণের এই সংস্কৃতি এখন আর শহুরে সভ্যতায় আবদ্ধ বলে দাবি করার কোন সুযোগ নেই। আকাশ ও সোস্যাল মিডিয়ার ‘অবদানে’ তা আজ পৌঁছে গেছে অজপাড়া গাঁয়েও। তাতে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া অতিসাধারণ নিরক্ষর মানুষ পর্যন্ত। রাজধানীর পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে গ্রামের খোলা মাঠের প্রতিটি অনুষ্ঠানেরই মূল ভাষ্য ‘নতুন বছরকে নেচে-গেয়ে, আনন্দ-বিনোদনে স্বাগত জানালে বছরটি এভাবে হাসি খুশির মধ্য দিয়েই পার হবে।’ এটি কোন যুক্তিসংগত কথা হতে পারে না। আবার ধর্ম ও বিজ্ঞান কোনটাই এ কথাকে সমার্থন করে না। মূলত এর পেছনে রয়েছে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের উস্কানি। যুবক-যুবতীদের আবেগকে পুঁজি করে তারা তাদেরকে অশ্লীলতার পঙ্কিল নর্দমায় ডুবিয়ে দিয়ে বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। মনে রাখতে হবে মানুষের প্রতিটি দিনই নবতর। প্রতিটি দিনেই রয়েছে নিজেকে নতুন করে সাজানোর প্রেরণা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন: ‘তিনিই রাত্রিকালে মৃত্যু ঘটান এবং দিনে তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দিনে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হয়।’ (সূরা আনআম: ৬০)। আর নবীজী সা. আমাদেরকে শিখিয়েছেন প্রতিদিন ভোরে মহান প্রভু আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও তাঁর কাছে হৃদয়ের সবটৃুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে জীবনের মঙ্গল, সফলতা ও বরকতের জন্য প্রার্থনা করতে। সুতরাং জীবনকে বদলাতে হলে, আলোয়-ভালোয় নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে হলে, নববর্ষ পালনের মাধ্যমে অশ্লীলতা, অপচয় ও অন্যকে কষ্ট দেয়ার মহাপাপে ভেসে নয়-আসুন ধর্মীয় অনুশাসনের স্নিগ্ধ পরশে নতুন করে উজ্জীবিত হই। জীবনকে পত্রপল্লবে ও ফুলে-ফলে বিকশিত করি।

খৃস্টীয় নববর্ষ: একটি ভুল আমরা প্রায় সকলেই করে থাকি। প্রচলিত সন লিখতে আমরা যে ‘ইংরেজি সাল’ ব্যবহার করি তা কিছুতেই ইংরেজি সাল নয়। তা খৃস্টধর্মীয় সন। যীশুখৃস্টের জন্মের প্রায় ১৬০০ বছর পরে ১৫৮২ খৃস্টাব্দে পোপ অষ্টম গ্রেগরী তৎকালে প্রচলিত প্রাচীন রোমান জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে যীশুখৃস্টের জন্মকে সাল গণনার শুরু ধরে এ পঞ্জিকা প্রচলন করেন। যা গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার ও খৃস্টীয় ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

তাই ইতিহাস এটাই বলে যে, প্রচলিত সাল খৃস্টীয়। খৃস্টান ধর্মের সাথে এর অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। সে সুবাদেই খৃস্টান ধর্মের অনুসারীরা তা উদযাপন করেন তাদের ধর্মীয় আবেগে। ধর্মের টান ও প্রেরণায়। আর মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় কালচার অনুসরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই একজন মুসলিম কখনোই খৃস্টীয় নববর্ষ পালন করতে পারে না।

(একটি কথা এখানে বলে রাখা ভালো। এদেশে কিছু বুদ্ধির ব্যাপারী নানাভাবে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময় তারা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘোষণা করেন- ‘আমরা এটা প্রমাণ করতে চাই যে আমরা সকলেই সমান। ধর্ম যার যার, আনন্দ সবার।’ মনে রাখা উচিত; অমুসলিমদের প্রার্থনালয়ে উপস্থিত হয়ে এ ঘোষণার কোন প্রয়োজন নেই। ইসলাম সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর আগে অমুসলিমদের ধর্ম ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছে। তাই রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেয়া একজন অমুসলিমকে যেমন নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের উপর অর্পিত দায়িত্ব, ঠিক তেমনিভাবে তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা প্রদান রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য। তবে এসব অতি দয়ালু বুদ্ধি ও রাজনীতি ব্যবসায়ীদের মুখে ভুলেও কখনো শোনা যায় না যে, তারা মুসলিমদের বৃহত দুইটি ঈদে আনন্দ উদযাপনের জন্য কোন অমুসলিমকে এমন উদার হতে আহŸান করেছেন। অমুসলিমদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। নবীজী সা. জোরালোভাবে তা আদেম করেছেন। তাদেরকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া হারাম। তবে এর অর্থ এই নয় যে, তাদের ধর্মীয় কালচার মুসলিমদের অনুসরণ করতে হবে। তাদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা তারা পাবে, কিন্তু কোন মুসলিম তাদের কালচার অনুসরণ করতে পারবে না।)

নবীজী সা. বলেছেন: ‘যে অন্য জাতির সাথে আচার-আচরণে, কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১, মু‘জামুল আওসাত : ৮৩২৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৩০১৬)

তাই খৃস্টীয় নববর্ষ পালন করা খৃস্টান ধর্মের একান্ত কালচার হওয়ায় কোন মুসলিম কখনো তা পালন করতে পারেন না। খৃস্টীয় নববর্ষ পালন মুসলিমদের জন্য বৈধ হতে পারে না কিছুতেই। এছাড়াও নববর্ষকে কেন্দ্র করে সমাজে জেগে ওঠে অনেক মহাপাপ। যা ব্যক্তি ও সুস্থ সমাজের জন্য বড়ই আতঙ্কের।

অশ্লীলতা: ইসলামে নববর্ষ পালন নিষিদ্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ সীমাহীন অশ্লীলতা। এ রাতের মূল আকর্ষণই যেন অশ্লীলতার নির্লজ্জ প্রদর্শনী। অশ্লীলতা মানুষের সুস্থ রুচির অপমৃত্যু ঘটায়। তাকে নির্লজ্জ কামুক বানাতে সহায়তা করে। আর ভয়ংকর বিষয় হলো তা মানুষকে ব্যভিচার ও ধর্ষণের মত মহাপাপের দিকে ধাবিত করে। তাই ব্যভিচার ও ধর্ষণ যেমন হারাম, তেমনি যা ব্যভিচার ও ধর্ষণের নিকটে নিয়ে যায় বা এর পথ খুলে দিতে পারে এমন সকল কাজ কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামে। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেন- ‘বল, আমার প্রতিপালক হারাম (নিষিদ্ধ) করেছেন সকল প্রকার অশ্লীলতা, তা প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক।’ (সূরা আ’রাফ : ৩৩)।

তিনি আরো বলেছেন – ‘ তোমরা নিকটবর্তী হয়ো না ব্যভিচারের, নিশ্চয় তা অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ ( সূরা বনী ইসরাঈল : ৩২)।

অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেছেন- ‘ তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোন প্রকারের অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না।’ (সূরা আনআম : ১৫১) । নববর্ষকে কেন্দ্র করে শুধু অশ্লীলতারই সয়লাব হয় না বরং পত্রপত্রিকা ও টিভিতে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও প্রকাশিত হয়। বর্ষবরণের মুহূর্তে বন্ধুর হাতে সম্ভ্রম হারিয়ে তরুণীর আত্মহুতির সংবাদও আমরা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই এ সময় আসলে একারণেই সরকার অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন।

ব্যভিচার ও ধর্ষণ বন্ধ করার একটি বড় উপায় হলো দৃষ্টির হেফাযত। অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দিকে বা মনের মধ্যে জৈবিক কামনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কিছু থেকে চক্ষু সংযত করা তাই ইসলামে নামাযের মতো ফরয হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করে।’ পরের আয়াতে নারীদেরকে লক্ষ্য করেও তিনি বলেছেন- ‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের সম্ভ্রম হিফাযত করে।’ (সূরা নূর : ৩০ -৩১) ।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেছেন- ‘চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার দৃষ্টিপাত, কর্ণদ্বয়ের ব্যভিচার শ্রবণ, জিহ্বার ব্যভিচার কথা বলা, হাতের ব্যভিচার স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার পদক্ষেপ, অন্তরের ব্যভিচার কামনা।’ (সহীহ মুসলিম : ২৬৫৭, বাইহাকী আসসুনানুল কুবরা: ১৩৫১০)

পাঠক, একটু চিন্তা করুন! আমরা বর্ষবরণের নামে শুধু অশ্লীলতার স্রোতেই ভেসে যাই না বরং সেখান থেকে ধর্ষণের মত ভয়ঙ্কর সামাজিক অপরাধও সৃষ্টি হয়। এ সব পাপের কারণে যেমন আখিরাতে রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। তেমনি দুনিয়াতেও রয়েছে ভয়াবহ গযব।

প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন- ‘যখন কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন সব রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে প্রসারিত ছিল না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০১৯, মুসতাদরাকে হাকীম : ৮৬২৩, শুয়াবুল ঈমান: ১০০৬৬)

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও এ দেশের মানুষ জানত না এইডস নামক কোন রোগের কথা, অথচ অশ্লীলতা ব্যভিচার প্রসারের কারণেই ভয়াবহ এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এদেশে। এটা মূলত অশ্লীলতায় পাশ্চাত্যের অনুসরণেরই ফল। তাই সুস্থ সবল সুখি ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে ইসলাম সর্বপ্রকার অশ্লীলতার পথ বন্ধ করেছে।

মাদকের ছড়াছড়ি: নববর্ষ পালনে অশ্লীলতার সাথে নতুন মাত্রায় শুরু হয়েছে উচ্চ আওয়াজে গানবাজনা ও মাদক সেবন। বর্ষবরণের নামে সম্প্রতি এ দেশের মোড়ে মোড়ে শুরু হয়েছে সাউন্ড বক্সে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রবণতা। রীতিমত শব্দদূষণের এ মহড়া চলে সন্ধ্যা থেকেই। উচ্ছৃঙ্খল বা শিক্ষিত সব ধরনের যুবককেই দেখা যায় তাতে অংশ নিতে। ওরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে নামাযের সময়ও তা বন্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করে না। আবার পাশের বাড়ির অনেক অসুস্থ মানুষও নীরবে এ অত্যাচার মেনে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চক্ষু বন্ধ করে থাকা ছাড়া কোন উপায় পান না। একজন মানুষকে কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা সামান্য একটি পিঁপড়াকেও কষ্ট দেয়া যখন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তখন নামাযী ও অসুস্থদের প্রতি এমন অত্যাচারে হয়ত আল্লাহর আরশও কেঁপে ওঠে।

নতুন বছরকে মদ-নারী, গান বাজনার মাধ্যমে বরণ করার প্রবণতা এখন আর পশ্চিমা রাষ্ট্রের ভেতরই সীমাবদ্ধ নেই, এ দেশের যুবকদেরকেও গ্রাস করে নিয়েছে তা। শুকনো, তরল সব ধরনের মাদকে মজে ওঠে এদেশের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলো। অথচ মাদককে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামে। তা নিষিদ্ধ হয়েছে মানব ও সমাজকে সুস্থ রাখতে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- ‘তারা তোমাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বল, এদু’য়ের মধ্যে বড় পাপ রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু কল্যাণ রয়েছে। তাদের উপকারের চে’ তাদের পাপ অধিকতর।’ ( সূরা বাকার: ২১৯)। সভ্যতার ইতিহাস ও বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে মদ জুয়ার মধ্যে যে উপকার আছে তা খুবই সামান্য আর আর অকল্যাণ ভয়ানক ও ভয়ঙ্কর। এ জন্যই ইসলাম তা নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ আরো বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কর্ম, কাজেই তোমরা তা বর্জন কর। (সূরা মায়িদা: ৯০)।

দেখুন, নবীজী সা. মাদকসেবীর জন্য কত ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা ঘোষণা করেছেন। ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন থাকে না, মদপানকারী যখন মদপান করে তখন সে মুমিন থাকে না।’ (সহীহ বুখারী :২৪৭৫, ৫৫৭৮, সহীহ মুসলিম : ৫৭, তিরমিযি :২৬২৫)।

তিনি আরো বলেছেন- ‘মহান আল্লাহ মদকে অভিশপ্ত করেছেন। আর অভিশপ্ত করেছেন মদ পানকারীকে, মদ সরবরাহকারীকে, মদ বিক্রেতাকে, মদ ক্রেতাকে, মদ প্রস্তুতকারককে, মদ প্রস্তুতের ব্যবহারকারীকে, মদ বহনকারীকে, যার নিকট মদ বহন করা হয় তাকে এবং মদের মূল্য যে ভক্ষণ করে তাকে।’( আবু দাউদ :৩৬৭৪)

নবীজী সা. আরো বলেন- ‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন- মাদকাসক্ত ব্যক্তি, পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি ও দাইউস ব্যক্তি যে, নিজের স্ত্রী-পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ :৬১১৩)। তাই মাদক সেবন অন্তত কোন মুসলিম কিছুতেই করতে পারে না।

প্রিয় পাঠক,
বর্ষবরণের নামে আমরা কতগুলো মহাপাপে জড়িয়ে পড়ছি। অথচ এতে আমাদের লাভটা কী হচ্ছে? আমাদের আমলনামায় তো আরো নতুন পাপের ফিরিস্তি জমা হচ্ছে। এ উৎসব পালন করতে কত টাকাই তো আমরা অপচয় করছি। অনার্থকভাবে দু’হাতে যে পয়সা উড়াচ্ছি তার হিসেব তো আল্লাহর কাছে দিতে হবে। আর অপব্যয়কারীকে সরাসরি কুরআনে শয়তানের ভাই আখ্যা দেয়া হয়েছে। একটু চোখ খুলে দেখুন, আমার আপনার বাড়ির পাশেই কত অসহায় লোক আছে। টাকার অভাবে চিকিৎসার জন্য ধুকে ধুকে মরছে কত আদমসন্তান। প্রচণ্ড শীতে কত মানুষ থরথর করে কাঁপছে, শীত থেকে বাঁচার পর্র্যাপ্ত বস্ত্র নেই। কত মানুষ টাকার অভাবে বাচ্চাকে পড়াতে পারছে না। আমারা কি পারি না আমাদের টাকাগুলো বর্ষবরণের মত অহেতুক কাজে ব্যয় না করে মানবতার জন্য ব্যয় করতে? নাচ, গান, মাদকদ্রব্য ও এজাতীয় হারাম কাজে টাকা খরচ না করে একজন অভাবী মানুষের একদিনের বাজার করে দিতে? মনে রাখতে হবে প্রকৃত আনন্দ তো ত্যাগেই রয়েছে। ত্যাগের স্বর্গীয় সুখ কি ভোগের নেশায় পাওয়া যায়! তাই আসুন, অন্তত অপচয়ের মত মহাপাপ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করি।

একটু ভাবুন, নববর্ষে আনন্দ করার কী আছে? নববর্ষ পালন মানে একটি বছর বিদায় নিয়ে আরেকটি বছর এলো আপনার জীবনে। আপনার যতটুকু হায়ত ছিল তার ভেতর থেকে একটি বছর কমে গেল। আপনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলেন। তাই নতুন বছরে আনন্দ না করে বিগত বছরের নিজের জীবনের ভুলত্রুটি ও অপরাধের জন্য দয়াময় আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে প্রার্থনা করা উচিত। আর সামনের দিনগুলো যেন অপরাধমুক্ত থাকতে পারি সে বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। অন্ততপক্ষে এতটুকু অঙ্গীকার আমরা করতে পারি যে, পেছনে যা হবার হয়েছে- এখন থেকে কারো উপকার করতে না পারলেও অন্তত কারো ক্ষতি ও কষ্টের কারণ হব না ইনশাআল্লাহ।

লেখক: মুহাদ্দিস-বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
ইমাম- বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মেইন বাসস্ট্যান্ড কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here