ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাবি আদায়ে রাজপথে পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা

Reporter Name

খুলনাঃ

আমি শ্রমিকের সন্তান, আমার বাবা না খেয়ে মরতে বসেছে, আমার বাবাকে বাঁচাও, পাট শিল্প ধ্বংস হলে সোনার বাংলা ধ্বংস হবে। এই সব শ্লোগান নিয়ে এবার রাজপথে নেমেছে খুলনার পাটকল শ্রমিকদের সন্তানেরা। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বাবারা যখন দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের পঞ্চম দিন অতিবাহিত করছেন, তখন তাদের সন্তানরাও দাবি আদায়ে নেমে পড়েছে রাজপথে। শ্রমিকদের সন্তানরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেয়ায় সাময়িকভাবে যানচলাচল বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।

এদিকে পাটকল শ্রমিকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এবং দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে খুলনা বিএনপি। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সচিবলায়ে পাট মন্ত্রীর সাথে পাটকল শ্রমিক সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য খুলনা থেকে সংগ্রাম পরিষদের আহবায় হামিদুর রহমানের এর নেতৃত্বে ২২ সদস্য এর দল খুলনা থেকে রওনা দিয়েছেন।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আলতাফ হোসেনের ৫ম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলে তসলিম হোসেন বলেন, আমার বাবা দাবি আদায়ে অনশন করছে। ৫ দিন না খেয়ে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। আমাদের ঘরেও তেমন কিছু নেই। গতকাল সবাই বই উৎসব করেছে। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি।

তারমত একই কথা বললো ইষ্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিক রাশেদুল হাসানের ছেলে মিতুল, আলিম জুট মিলের নওশাদের ছেলে তিতাশ। তারাও দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাটকল খুলনায়। খুলনার সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি কলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।

বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব ৯ পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকী ৭টি পাটকলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে চালু থাকা ওই দু’টি পাটকলে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। পাটকলগুলোতে প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, ৭টি পাটকলের প্রায় ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এ অনশনে অংশনিয়েছেন। টানা অনশনে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শরীরে স্যালাইন নিয়েই স্ব স্ব মিলের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০১:৩৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২০
৪৯৮ Time View

দাবি আদায়ে রাজপথে পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা

Update Time : ০১:৩৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২০

খুলনাঃ

আমি শ্রমিকের সন্তান, আমার বাবা না খেয়ে মরতে বসেছে, আমার বাবাকে বাঁচাও, পাট শিল্প ধ্বংস হলে সোনার বাংলা ধ্বংস হবে। এই সব শ্লোগান নিয়ে এবার রাজপথে নেমেছে খুলনার পাটকল শ্রমিকদের সন্তানেরা। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বাবারা যখন দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের পঞ্চম দিন অতিবাহিত করছেন, তখন তাদের সন্তানরাও দাবি আদায়ে নেমে পড়েছে রাজপথে। শ্রমিকদের সন্তানরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেয়ায় সাময়িকভাবে যানচলাচল বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।

এদিকে পাটকল শ্রমিকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এবং দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে খুলনা বিএনপি। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সচিবলায়ে পাট মন্ত্রীর সাথে পাটকল শ্রমিক সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য খুলনা থেকে সংগ্রাম পরিষদের আহবায় হামিদুর রহমানের এর নেতৃত্বে ২২ সদস্য এর দল খুলনা থেকে রওনা দিয়েছেন।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আলতাফ হোসেনের ৫ম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলে তসলিম হোসেন বলেন, আমার বাবা দাবি আদায়ে অনশন করছে। ৫ দিন না খেয়ে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। আমাদের ঘরেও তেমন কিছু নেই। গতকাল সবাই বই উৎসব করেছে। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি।

তারমত একই কথা বললো ইষ্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিক রাশেদুল হাসানের ছেলে মিতুল, আলিম জুট মিলের নওশাদের ছেলে তিতাশ। তারাও দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাটকল খুলনায়। খুলনার সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি কলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।

বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব ৯ পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকী ৭টি পাটকলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে চালু থাকা ওই দু’টি পাটকলে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। পাটকলগুলোতে প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, ৭টি পাটকলের প্রায় ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এ অনশনে অংশনিয়েছেন। টানা অনশনে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শরীরে স্যালাইন নিয়েই স্ব স্ব মিলের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।