দাম্পত্য জীবনের ১৪ বছরে মাশরাফি-সুমি
নড়াইলঃ
বহু তরুণীর হৃদয় হরণ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক সফল ওয়ানডে অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু মাশরাফির হৃদয় হরণ করেছিলেন একজন। তিনি চিত্রাপাড়ের মেয়ে সুমনা হক সুমি।
প্রেম থেকে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়ে গেছে। সুমনা হক সুমির সঙ্গে স্কুলজীবন থেকেই মন দেয়া-নেয়া মাশরাফির। এরপর মাশরাফির জেদের কাছেই হার মেনে দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে পরিণয়। এরপর নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুমনা হক সুমির সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। দেখতে দেখতে একসঙ্গে পথচলার ১৩ বছর পেরিয়েছেন এই দম্পতি। সোমবার ক্রিকেট অঙ্গনের এই দম্পতির (মাশরাফি-সুমি) ১৩তম বিবাহবার্ষিকী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রোববার থেকেই মাশরাফি দম্পতির জন্য শুভকামনা জানান তার ভক্তরা।
জানা গেছে, নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার গোলাম মুর্তজা স্বপন ও হামিদা মুর্তজা বলাকার জ্যেষ্ঠপুত্র মাশরাফি বিন মুর্তজা। শহরের আলাদাতপুর এলাকার মরহুম সিরাজুল ইসলাম এবং স্কুলশিক্ষিকা হোসনে আরা সিরাজের কনিষ্ঠ কন্যা সুমনা হক সুমির সঙ্গে মাশরাফির বিয়ে হয়।
এর আগে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। গোলাম মুর্তজা রাজি ছিলেন না বিয়েতে। তার এক কথা- ‘মেয়ে ভালো। পরিবার ভালো। সবই বুঝলাম; কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করবে কেন?’ এই হয়। এই মুর্তজা সাহেব নিজে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বাবা হিসেবে ছেলের ব্যাপারে সেটা মেনে নিতে একটু যেন আপত্তি। তার চেয়েও বেশি আপত্তি মেয়ের পরিবারের।
সুমির বাবা মারা গেছেন সেই ছোটবেলায়। মা হোসনে আরা বেগমের পরিশ্রম আর অভিভাবকত্বেই মানুষ হয়েছে সুমি। আত্মীয়স্বজন এসে মাকে বোঝায়- ‘ছেলে ক্রিকেট খেলে। কোথায় কী করে, তার কোনো ঠিক আছে! এমন ছেলের হাতে মেয়ে দেয়া ঠিক হবে না।’ সুমি বোঝানোর চেষ্টা করে। নিজের বিশ্বাসের কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু কাজ হয় না।
পুরো ব্যাপারটা এক করতে জীবন বের হয়ে যায় নাহিদ মামার (মাশরাফির ছোট মামা)। বিয়ের ব্যাপারে মাশরাফি তো এক ফোন করেই খালাস। এখন দুই বাড়িকে রাজি করাতে প্রাণ যায়। এদিকে কৌশিক শুরু করল জেদাজেদি। দুই পরিবার রাজি না হলে সে নাকি নিজেই বিয়ে করে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত নাহিদ মামা দুই পরিবারে চরম ঘোষণাটা দিয়ে দিলেন, ‘আপনারা আপসে রাজি হলে ভালো কথা। নইলে আমি ওদের বিয়ে দিয়ে দেব। পারলে আপনারা দুই পরিবার ঠেকাতে আসবেন।’
এই হুমকির পর আর কথার দরকার হল না। সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো হাসি-হাসি মুখে সবাই রাজি হয়ে গেলেন। চরম হট্টগোলের মধ্যে বেজে উঠল সানাই। ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাশরাফি-সুমির বিয়ে হয় শহরের রূপগঞ্জ উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে। ওই দিন দুপুরে বিশাল গাড়িবহরে বর বেশে প্রবেশ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরদিন চিত্রা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিনোদন পার্ক ‘নড়াইল চিত্রা রিসোর্টে’ বৌ-ভাতের আয়োজন করা হয়।
সেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তৎকালীন সভাপতি, কোচ, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়সহ ক্রীড়াঙ্গনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নড়াইলের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ দাওয়াত পেয়েছিলেন। এক কথায় এ অনুষ্ঠান ঘিরে সেদিন বিভিন্ন পেশার মানুষের মিলনমেলা হয়েছিল।
দাম্পত্য জীবনে মাশরাফি-সুমির দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান মেয়ে হোমায়রা মুর্তজা এবং ছেলে সাহেল মুর্তজা। মাশরাফির জন্মদিনেই সাহেল পৃথিবীর আলো দেখেছে।
ক্রিকেট মাঠে মাশরাফির সাফল্যে কখনও টিভির সামনে আবার কখনও মাঠে বসে উল্লাসে মেতেছেন স্ত্রী সুমি। আবার দল পরাজিত হলে কিংবা মাশরাফি ইনজুরিতে পড়লে কেঁদেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাশরাফির বন্ধু সৌমেন চন্দ্র বসু শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘মাশরাফি-সুমি দম্পতির যুগলবন্দী জীবন অনিন্দ্য-সুন্দর, অনুকরণীয়। দুজনেই আদর্শ চরিত্রের অধিকারী, পরোপকারী ও সুন্দর মনের অধিকারী। হুমায়রা-সাহেলের মতো ফুটফুটে দুটি সন্তানকে নিয়ে এখন তাদের সুখের সংসার। আজ মাশরাফি-সুমি দম্পতির বিবাহবার্ষিকী। বিবাহবার্ষিকীর এই শুভদিনে তাদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
কাজী শরিফুল ইসলাম নামে অপর একজন লিখেছেন, ‘শুভ বিবাহবার্ষিকী নাতনি ও তার বর, তোমাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি।’
এছাড়া ফেসবুক বন্ধুরা মাশরাফির বিয়ের দিনের ছবিসহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের ছবিও পোস্ট করেছেন। মাশরাফির জন্য দোয়াসহ ভালো ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশা করেন ভক্তরা।
এদিকে মাশরাফি ও তার পরিবার কখনই বিবাহবার্ষিকী এবং জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করে না। এক্ষেত্রে সবার কাছে দোয়া চেয়েছে তাদের পরিবার।