নড়াইল:
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও চিত্রাপারের মেয়ে সুমনা হক সুমির মন দেয়া-নেয়া সেই স্কুলজীবনে।
দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দু’জন। নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ উৎসব কমিউনিটি সেন্টারে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সুমনা হক সুমির শুভবিবাহ সম্পন্ন হয়।
৮ সেপ্টেম্বর চিত্রা নদীর কুলঘেঁষে গড়ে ওঠা চিত্রা রিসোর্টে জাঁকজমকপূর্ণ বৌভাত সম্পন্ন হয়। সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তৎকালীন কোচ, জাতীয় দলের খেলোয়াড়সহ নড়াইল জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি রূপ নিয়েছিল মিলন মেলায়।
দেখতে দেখতে একসঙ্গে পথচলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেছেন মাশরাফি-সুমনা। মঙ্গলবার ছিল এই দম্পতির ১৫তম বিবাহবার্ষিকী।
নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার গোলাম মুর্তজা স্বপন ও হামিদা মুর্তজা বলাকার জ্যেষ্ঠ ছেলে মাশরাফি বিন মুর্তজা। আর শহরের আলাদাতপুর এলাকার মরহুম সিরাজুল ইসলাম এবং স্কুলশিক্ষিকা হোসনে আরা সিরাজের কনিষ্ঠ কন্যা হলেন সুমনা হক সুমি।
প্রথমে বিয়ের প্রশ্নে রাজি ছিলেন না গোলাম মুর্তজা। তার এক কথা- মেয়ে ভালো, পরিবার ভালো; সবই বুঝলাম কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করবে কেন?। যদিও গোলাম মুর্তজা নিজেও প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন।
বিয়েতে আপত্তি ছিল সুমির পরিবারেরও। সুমির বাবা মারা গেছেন সেই ছোটবেলায়। মা হোসনে আরা বেগমের আদর-স্নেহেই বড় হয়েছেন সুমি। আত্মীয়স্বজন এসে মাকে বোঝান- ছেলে ক্রিকেট খেলে। কোথায় কী করে, তার কোনো ঠিক আছে! এমন ছেলের হাতে মেয়ে দেয়া ঠিক হবে না। সুমি বোঝানোর চেষ্টা করে। নিজের বিশ্বাসের কথা বলার চেষ্টা করে; কিন্তু কাজ হয় না।
পুরো ব্যাপারটা এক করতে জীবন বের হয়ে যায় নাহিদ মামার (মাশরাফির ছোট মামা)। বিয়ের ব্যাপারে মাশরাফি তো এক ফোন করেই খালাস। দুই পরিবারকে রাজি করাতে নাহিদ মামার প্রাণ যাওয়ার অবস্থা। একপর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন- আপনারা আপসে রাজি হলে ভালো কথা, তা না হলে আমি নিজেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেব। পারলে আপনারা দুই পরিবার ঠেকাতে আসবেন।
এ হুমকির পর আর কথার দরকার হলো না। সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো হাসিমুখে সবাই রাজি হয়ে গেলেন। চরম হট্টগোলের মধ্যে বেজে উঠল সানাই। এই দম্পতির ঘর আলো করে দুই সন্তান এসেছে। প্রথম সন্তান মেয়ে- নাম হোমায়রা মুর্তজা। ছেলের নাম সাহেল মুর্তজা। ক্রিকেট মাঠে মাশরাফির সাফল্যে কখনো টিভির সামনে আবার কখনো মাঠে বসে উল্লাসে মেতেছেন সুমি। আবার দল পরাজিত হলে কিংবা মাশরাফি ইনজুরিতে পড়লে কেঁদেছেন তিনি।
বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাশরাফির ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্নরকম বার্তা পাঠিয়েছেন।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু মাশরাফির বিবাহবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে যুগান্তররকে বলেন, আমাদের প্রিয় নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সুমনা হক সুমি দাম্পত্য জীবনে ১৫ বছরে পা রাখলেন। তাদের এই ভালোবাসা অবিরাম,অটুট থাকুক যুগ-যুগ ধরে।
কালিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেন, এমপি মাশরাফি ও সুমনা হক সুমির বিবাহবার্ষিকীতে তার পরিবারের জন্য শুভকামনা ও রাজনৈতিক সফলতা কামনা করি নিরন্তর।
জানা যায়, মাশরাফি ও তার পরিবার কখনই বিবাহবার্ষিকী এবং জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করেন না। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এবার সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।