দুই–তৃতীয়াংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না
ঢাকার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ পুরোপুরি বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। এসব এলাকার মধ্যে পুরান ঢাকাসহ কিছু অংশের গ্রাহকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু দূষিত পানিই পেয়ে থাকে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষই কেবল বর্তমানে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়। সূত্রমতে, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার পানির পাইপ অনেক পুরোনো। মাটির নিচে জং ধরে গেছে। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ নেওয়ার কারণে পাইপলাইন ফুটো করায় ময়লা ঢুকে পানি দূষিত হয়। বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় এ ধরনের সমস্যার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে।
মহানগরীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় পুরোনো পাইপ বদলে এলাকাভিত্তিক নতুন পাইপ বসানো হয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া (ডিএমএ) নামের এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতেই কেবল বিশুদ্ধ পানি যাচ্ছে। এসব এলাকা হচ্ছে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মিরপুরের অধিকাংশ, লালমাটিয়া, নাখালপাড়া, কলাবাগান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ। ওয়াসার হিসেবে এসব এলাকায় প্রায় ৫৪ লাখ লোকের বসবাস।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে (এডিবি) ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (ডিডব্লিউএসএসডিপি) আওতায় ওয়াসা এসব এলাকাভিত্তিক সংযোগ দিয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে ঢাকা ওয়াসার ছয়টি অঞ্চলে ২ হাজার ৪৩৬ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন বসানো হয়।
সূত্র জানায়, ডিএমএ একটি মিনি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এই পাইপলাইনের পানি এক এলাকার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকলে অন্য এলাকায় যেতে পারে। নতুন পাইপলাইন বলে দূষিত পানি বা ময়লা ঢুকতে পারে না। পানির চাপ ভালো থাকায় চোরা মোটর বা পানি টানার যন্ত্রও বসাতে হয় না।
ঢাকা ওয়াসার পরিচালক ও ডিডব্লিউএসএসডিপির পরামর্শক এ কে এম শহিদউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় পানি সরবরাহের মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ডিএমএর অধীনে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬টি গ্রাহকের বাড়িতে নতুন পাইপের সংযোগ হয়েছে। পুরোনো পাইপ পরিবর্তন করে এসব এলাকায় ডিজাইন অনুযায়ী ৩ থেকে ১২ ইঞ্চি ব্যাসের মজবুত এসডিপি পাইপ বসানো হয়েছে। সংযোগ কার্যকর করার পর এসব এলাকার পানিতে ময়লা বা গন্ধ থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকার বাকি দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায়, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় পানির লাইন ৬০-৭০ বছর আগে বসানো। এসব এলাকার অনেক স্থানেই পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়। এসব এলাকায় ডিএমএর অধীনে শিগগিরই সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নতুন পাইপ বসানোর কাজ শুরু হবে।
ওয়াসার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লাইনে যখন পানি কম আসে, তখন বেশি পানি পাওয়ার আশায় অনেকে পাইপের পেটে ফুটো করে সংযোগ নেয়। তারপরও পর্যাপ্ত পানি না গেলে পাইপের তলায় ফুটো করে। এই ফুটো ঠিকভাবে বন্ধ না করার কারণে ময়লা ঢোকে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওয়াসারই অসাধু লোকদের সহায়তায় এসব সংযোগ নেওয়া হয়।
বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না, এমন কিছু এলাকা ঘুরে নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার, তাঁতীবাজার, রাজার দেউড়িসহ আশপাশের এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে প্রায় সারা বছরই ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকে। তাঁতীবাজারের প্রবীণ বাসিন্দা মনতোষ ধর বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে বর্তমানে যে দুর্গন্ধ, বাসায় কল খুললে ওয়াসার সরবরাহ পানিতে সেই গন্ধই পাওয়া যায়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন, চাঁদনীঘাটে ওয়াসার যে পানি শোধনাগার রয়েছে, সেটি বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানি শোধন করতে সক্ষম নয়। সে দূষিত পানিই তাঁদের এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে। এর ওপর রয়েছে পুরো পাইপ ফুটো হওয়ার সমস্যা।
ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় বাসাবো, কদমতলা, মুগদাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পানেরও অনুপযোগী। অনেক গ্রাহক শোধন করা পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা বাসাবোর বাসিন্দা আবদুর রব বলেন, বাসায় পানির সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অতীতে অনেকেই ওয়াসার পাইপ ফুটো করে সংযোগ নিয়েছেন। সেই ফুটো দিয়ে ময়লা পানি ঢুকতেই পারে। তবে এর জন্য ওয়াসাই দায়ী। পর্যাপ্ত পানি না পেয়েই গ্রাহকেরা পাইপ ফুটো করতে বাধ্য হন।