ঢাকা ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই দলেই দ্বন্দ্ব নতুন–পুরোনোর

Reporter Name

বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকা। চারবার করে এখান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু ও বিএনপির মো. ইউনুস। খসরু চারবারই আওয়ামী লীগ থেকে আর ইউনুস বিএনপিসহ একাধিক দলের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেন। এবার তাঁরা নিজ দলেই বিরোধিতার সম্মুখীন। ভোটাররা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন মুখ দেখতে চান বলে এলাকায় প্রচার করছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

এই দুই নেতার যেমন জনপ্রিয়তা আছে, তেমনি তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ ভোটাররা অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন। এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থা, মাদক প্রবেশ, গ্যাস-সংযোগ না পাওয়া এবং উপজেলা সদরের কলেজ জাতীয়করণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক ভোটারও বলেছেন, তাঁরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন মুখ দেখতে চান।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের উত্তর তেঁতাভূমি গ্রামের ভোটার আলাউদ্দিন কাজল বলেন, ‘এলাকাতেই রয়েছে সালদা গ্যাসক্ষেত্র। ব্রাহ্মণপাড়া-বুড়িচংয়ের ওপর দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন গেলেও আমরা এর সুফল পাচ্ছি না।’ বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আজ্ঞাপুর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, সীমান্তে মাদক ঠেকাতে না পারার কারণে তরুণ প্রজন্ম বিপথে যাচ্ছে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

কোন্দলে আওয়ামী লীগ

১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মতিন খসরু। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

এবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সোহরাব হোসেন চৌধুরীও গণসংযোগে নেমেছেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আবদুছ ছালাম বেগ।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ থেকে আবুল হাশেম খান (সভাপতি) এবং সাজ্জাদ হোসেনের (সাধারণ সম্পাদক) কমিটি চলছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রেখে কমিটি পুনর্গঠন করে জেলা কমিটি। কিন্তু এরপরই আখলাক হায়দারকে সভাপতি ও রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দেন মতিন খসরু। এতে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সোহরাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আওয়ামী লীগে নতুন প্রজন্মের প্রার্থী লাগবে। অ্যানালগ লোক দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। তাই দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নকাজ কেউ তুলে ধরছে না। তাই আমি দলের জন্য বিলবোর্ড লাগিয়েছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

বর্তমান সাংসদ আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘দলে কোনো কোন্দল নেই। বুড়িচং উপজেলা কমিটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেগুলো মিটমাট হয়ে যাবে। আর দলের যেকোনো নেতা-কর্মী মনোনয়ন চাইতেই পারেন। এটা দোষের নয়। সবাই আমরা নৌকা প্রতীকের পক্ষেই থাকব।’ ভোটারদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার আগে শিল্পকারখানায় গ্যাস দিতে চায়, এরপর গৃহস্থালি।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ নতুন নেতৃত্ব চায়। এ জন্য তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপিতেও দ্বন্দ্ব

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শওকত মাহমুদ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সমন্বয়কারী। এবার তিনি এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হতে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তাঁকে ঠেকাতে মরিয়া সাবেক সাংসদ মো. ইউনুস। দুজনই জড়িয়ে পড়েছেন দ্বন্দ্বে। ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঞা হেরে যান মতিন খসরুর কাছে।

ইউনুস ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ, ’৮৬ সালে স্বতন্ত্র, ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে সাংসদ হন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার সঙ্গে গণসংযোগে বের হন, তাঁদের বহিষ্কারের হুমকি দেন শওকত মাহমুদ। আমি সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও বাধা দেন। এরপরও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ, আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাকেই মনোনয়ন দিতে হবে। এলাকায় শওকত মাহমুদের কোনো অস্তিত্ব নেই।’

ইউনুসের অভিযোগের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘উনি (ইউনুস) তো বিএনপিতে নেই। এরপরও দলীয় সদস্য ফরম এলাকায় বিলি করছেন। ওনার সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। মতিন খসরু ও মো. ইউনুস দুজন মিলে আটবার এলাকার সাংসদ ছিলেন। তাঁরা টেকসই কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। গ্যাস আনতে পারেননি।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিন খসরুকে ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার দরকার বলে মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। দলে কোনো কোন্দল নেই বলে তিনি দাবি করেন।

এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঞা বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। ২০০৮ সালে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও দেবে।’

About Author Information
আপডেট সময় : ১০:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
৯৯০ Time View

দুই দলেই দ্বন্দ্ব নতুন–পুরোনোর

আপডেট সময় : ১০:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকা। চারবার করে এখান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু ও বিএনপির মো. ইউনুস। খসরু চারবারই আওয়ামী লীগ থেকে আর ইউনুস বিএনপিসহ একাধিক দলের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেন। এবার তাঁরা নিজ দলেই বিরোধিতার সম্মুখীন। ভোটাররা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন মুখ দেখতে চান বলে এলাকায় প্রচার করছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

এই দুই নেতার যেমন জনপ্রিয়তা আছে, তেমনি তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ ভোটাররা অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন। এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থা, মাদক প্রবেশ, গ্যাস-সংযোগ না পাওয়া এবং উপজেলা সদরের কলেজ জাতীয়করণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক ভোটারও বলেছেন, তাঁরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন মুখ দেখতে চান।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের উত্তর তেঁতাভূমি গ্রামের ভোটার আলাউদ্দিন কাজল বলেন, ‘এলাকাতেই রয়েছে সালদা গ্যাসক্ষেত্র। ব্রাহ্মণপাড়া-বুড়িচংয়ের ওপর দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন গেলেও আমরা এর সুফল পাচ্ছি না।’ বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আজ্ঞাপুর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, সীমান্তে মাদক ঠেকাতে না পারার কারণে তরুণ প্রজন্ম বিপথে যাচ্ছে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

কোন্দলে আওয়ামী লীগ

১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মতিন খসরু। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

এবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সোহরাব হোসেন চৌধুরীও গণসংযোগে নেমেছেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আবদুছ ছালাম বেগ।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ থেকে আবুল হাশেম খান (সভাপতি) এবং সাজ্জাদ হোসেনের (সাধারণ সম্পাদক) কমিটি চলছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রেখে কমিটি পুনর্গঠন করে জেলা কমিটি। কিন্তু এরপরই আখলাক হায়দারকে সভাপতি ও রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দেন মতিন খসরু। এতে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সোহরাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আওয়ামী লীগে নতুন প্রজন্মের প্রার্থী লাগবে। অ্যানালগ লোক দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। তাই দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নকাজ কেউ তুলে ধরছে না। তাই আমি দলের জন্য বিলবোর্ড লাগিয়েছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

বর্তমান সাংসদ আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘দলে কোনো কোন্দল নেই। বুড়িচং উপজেলা কমিটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেগুলো মিটমাট হয়ে যাবে। আর দলের যেকোনো নেতা-কর্মী মনোনয়ন চাইতেই পারেন। এটা দোষের নয়। সবাই আমরা নৌকা প্রতীকের পক্ষেই থাকব।’ ভোটারদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার আগে শিল্পকারখানায় গ্যাস দিতে চায়, এরপর গৃহস্থালি।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ নতুন নেতৃত্ব চায়। এ জন্য তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপিতেও দ্বন্দ্ব

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শওকত মাহমুদ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সমন্বয়কারী। এবার তিনি এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হতে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তাঁকে ঠেকাতে মরিয়া সাবেক সাংসদ মো. ইউনুস। দুজনই জড়িয়ে পড়েছেন দ্বন্দ্বে। ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঞা হেরে যান মতিন খসরুর কাছে।

ইউনুস ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ, ’৮৬ সালে স্বতন্ত্র, ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে সাংসদ হন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার সঙ্গে গণসংযোগে বের হন, তাঁদের বহিষ্কারের হুমকি দেন শওকত মাহমুদ। আমি সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও বাধা দেন। এরপরও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ, আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাকেই মনোনয়ন দিতে হবে। এলাকায় শওকত মাহমুদের কোনো অস্তিত্ব নেই।’

ইউনুসের অভিযোগের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘উনি (ইউনুস) তো বিএনপিতে নেই। এরপরও দলীয় সদস্য ফরম এলাকায় বিলি করছেন। ওনার সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। মতিন খসরু ও মো. ইউনুস দুজন মিলে আটবার এলাকার সাংসদ ছিলেন। তাঁরা টেকসই কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। গ্যাস আনতে পারেননি।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিন খসরুকে ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার দরকার বলে মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। দলে কোনো কোন্দল নেই বলে তিনি দাবি করেন।

এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঞা বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। ২০০৮ সালে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও দেবে।’