সবুজদেশ ডেক্সঃ ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি বিষয়ে দারুণ মিল রয়েছে। সেটি হচ্ছে সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখানে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি নেই। দুই দলের প্রার্থী মোটামুটি ঠিক করাই আছে। আওয়ামী লীগ থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন বর্তমান সাংসদ নসরুল হামিদ বিপু। আর বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আকস্মিক কিছু না ঘটলে প্রার্থী পরিবর্তন হবে না বলেই মনে করেন দুই দলের নেতা-কর্মীরা।

কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন ১২টি। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন (জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা, তেঘরিয়া ও কোন্ডা) নিয়ে গঠিত ঢাকা-৩ আসন। আগে থেকেই প্রার্থী ঠিক থাকায় আগাম নির্বাচনী প্রচারও চলছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে চলছে উন্নয়নের প্রচার। অন্যদিকে বিএনপি এখনো প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে না। তবে সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। এতে সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্রহীনতা ও খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়টি তুলে ধরছেন নেতারা।

প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থী স্থানীয় বাসিন্দা। দুই দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো। যে কারণে তেমন কোনো সংঘাত নেই এখানে।

সাংসদ নসরুল হামিদ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। আগামী নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি ইতিমধ্যে প্রস্তুতি কমিটি করেছেন। কেরানীগঞ্জকে নিয়ে তাঁর নতুন পরিকল্পনার কথা মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগে পারিবারিক ঐতিহ্য আছে বিপুর পরিবারের। তাঁর বাবা হামিদুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এবং পরে কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন বিপু। ২০০১ সালে প্রথম নির্বাচন করে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির আমান উল্লাহ আমানের কাছে। ২০০৮ সালে ৪২ হাজার ভোটের ব্যবধানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পরাজিত করে সাংসদ হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও সাংসদ হন তিনি।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে ছিল একটি আসন। ওই সময়ে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনেই বিজয়ী হন বিএনপির আমান উল্লাহ আমান। আমানের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিতি পায় কেরানীগঞ্জ। ২০০৮-এর আসন পুনর্বিন্যাসে কেরানীগঞ্জ উপজেলাকে ভেঙে দুটি সংসদীয় আসন করা হয়।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয় কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমেদ, কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান চৌধুরী, আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর শাহের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিরোধ নেই। নসরুল হামিদের প্রচেষ্টায় কেরানীগঞ্জে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে চালু হয়েছে। শেষ হয়েছে অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের কাজ। শুরু হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম। এডুকেশন ভিলেজের কাজ এগিয়ে চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উন্নয়ন হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে হতাশা আছে কর্মীদের মধ্যে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল উদ্ধার করা যায়নি দীর্ঘ সময়ে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ আছে। যদিও সম্প্রতি নিজে উদ্যোগী হয়ে খাল দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন সাংসদ বিপু।

বিপু প্রথম আলোকে বলেন, কেরানীগঞ্জকে আদর্শ শহরে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে বিকল্প শহর হিসেবে গড়ে তুলবেন তাঁর সংসদীয় এলাকাকে। নির্বাচন ঘিরে তাঁর প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন বলেও জানান তিনি।

২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপি পরাজিত হলেও আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, দলের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে এবার জয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। গয়েশ্বর রায়ের পুত্রবধূ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরী মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, পুলিশের কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড ঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে রেখে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে বিবেকে লাগে। তাঁর মুক্তি ছাড়া নির্বাচন নিয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। তা ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করে নির্বাচনে যাওয়া হবে প্রতারণা। তবে তিনি বলেন, বড় দল হিসেবে সব সময় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে বিএনপির। নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা না করে সারা বছরই এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

সংসদীয় এই এলাকার ৫টি ইউনিয়নের ১০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর খুব কাছের এই এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। গ্যাসের সমস্যাও প্রকট। যে কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলে এখানে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়নি। আগামী নির্বাচনে এসব বিষয় জয়-পরাজয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here