সবুজদেশ ডেক্সঃ গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গাড়িতে দেশলাই দিয়ে যে যুবককে আগুন দিতে দেখা যায়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম ওয়াসিম (২৮)। তিনি বিএনপির সমর্থক। তবে তিনি দলের কোনো পদে আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে মিন্টো রোডে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুল বাতেন এ কথা জানান। এ ঘটনায় মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, গত ১৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু হলে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দুপুরের দিকে একটি বড় আকারের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে উন্মত্ততা প্রকাশ করে এবং পুলিশকে মারধর করে। এ ঘটনায় পরে পল্টন থানায় তিনটি মামলা হয়। মামলার তদন্তে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকা হতে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। ভিডিও ফুটেজ যাচাই বাছাইসহ প্রকাশ্য ও গোপনে তদন্ত করে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীকে শনাক্ত করা হয়।

ওয়াসিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা মাথায় হেলমেট পরে এ নৈরাজ্য তৈরি করেছে। এর পরপর তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। ওয়াসিমকেসহ ১৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিম গাড়িতে অগ্নিসংযোগে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বিএনপির বড় কোনো নেতা জড়িত রয়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার সময় হাজারখানেক নেতা-কর্মীর মিছিল পুরো রাস্তা আটকে দেয়। মিছিলটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে একটি লেন চালু করার চেষ্টায় পুলিশ লাঠিপেটা করলে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও খুব দ্রুত মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাঁদের লক্ষ্য করে পুলিশ প্রচুর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। গুলি-কাঁদানে গ্যাসের শেলের দ্রুম দ্রুম শব্দ, গ্যাসের ধোঁয়া, নেতা-কর্মীদের হইচই, ধর ধর চিৎকার, মানুষের ছোটাছুটি, হুড়মুড় করে দোকানের ঝাঁপ নামানোর শব্দ—সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টার সংঘর্ষে ২৩ পুলিশ সদস্য এবং অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন বলে দাবি উভয় পক্ষের।

এ ঘটনার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সংঘর্ষের জন্য বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির আরেক নেতা আখতারুজ্জামান ও নবীউল্লাহ দায়ী। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আসামি করে পুলিশ তিনটি মামলা করেছে।

তবে মির্জা আব্বাসের ভাষ্য ছিল, ‘এটা সরকার বা আওয়ামী লীগের সাবোটাজ হতে পারে।’

ঘটনার পরদিন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশের গাড়িতে যে যুবক আগুন দিয়েছেন, তিনি পল্টন থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর নাম শাহজালাল খন্দকার।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here