দেশে করোনা সংক্রমণে অতি উচ্চঝুঁকিতে ২৯ জেলা
ঢাকা:
দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতির দিকে। মৃত্যু, সংক্রমণ ও শনাক্তের হার সব সূচকই নিম্নমুখী। তিন মাস পর টানা দুদিন শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। নয় দিন ধরে মৃত্যুও রয়েছে একশর কম। হাসপাতালেও নেই রোগীর চাপ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ১৩টি জেলায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে। ৫-১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ২২টি জেলা। ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ১৪টি জেলা এবং শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে রয়েছে ১৫ জেলায়। রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোতেই সংক্রমণের মাত্রা বেশি। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১২ সেপ্টেম্বর ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে বেশি সংক্রমিত এলাকায় করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, যেসব স্থানে শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বা তার বেশি সেসব স্থানকে সংক্রমণের অতি উচ্চঝুঁকি হিসাবে ধরা হয়। এছাড়া শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে হলে উচ্চঝুঁকি এবং পাঁচ শতাংশের কম হলে কম ঝুঁকির স্থান হিসাবে ধরা হয়। এ হিসাবে দেশের ২৯ জেলা এখনো অতি উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সরকার সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় সবশেষ খুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। কিন্তু এখনো অনেক জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় ঝুঁকি বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি সেগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। ওইসব এলাকায় যারা আক্রান্ত আছেন তাদের দ্রুত আইসোলেশনে নিতে হবে। অনেক এলাকায় বাসায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেই। তাদের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে। যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। মূল কথা সংক্রমণ যাতে আর বাড়তে না পারে সে উদ্যোগ নিতে হবে।
মোশতাক হোসেন বলেন, সরকার চাইলে এটা সম্ভব। কারণ বর্তমানে সারা দেশে করোনা চিকিৎসায় আগের মতো চাপ নেই। হাসপাতালগুলোতেও রোগী কম। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনে অন্য স্থান থেকে লোকবল এনে সেখানে দেওয়া যেতে পারে। সরকারের পাশাপাশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। দ্রুত তাদের টিকা নিতে হবে। ছেলেমেয়ে যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা যাতে এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ জমায়েত না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকার ও অভিভাবকরা সচেতন হলেই এ মহামারি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার গাজীপুরে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। মুন্সীগঞ্জে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বিভাগে ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে শনাক্তের হার রয়েছে পাঁচটি জেলায়। এর মধ্যে শরীয়তপুরে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গোপালগঞ্জে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, নরসিংদী ১৫ দশমিক শূন্য এক, রাজবাড়ী ১২.৭২, নারায়ণগঞ্জ ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ বিভাগে ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলা (মহানগরসহ), ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল। এ বিভাগে সবচেয়ে কম শনাক্তের হার কিশোরগঞ্জে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া মাদারীপুরে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার জামালপুরে ১০ শতাংশ। এছাড়া ময়মনসিংহ ৯, নেত্রকোনা ৯.১৫ ও শেরপুরে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার সর্বোচ্চ লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ বান্দরবান জেলায়। এছাড়া চাঁদপুরে ১৮.৩০, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৩.৫৫, খাগড়াছড়ি ১৬.৬৬, চট্টগ্রাম ১১.৮২, কক্সবাজার ৬.৩৭, রাঙামাটি ৯.৭৫, কুমিল্লা ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ বিভাগে সবচেয়ে কম শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ফেনী জেলায়। নোয়াখালীতে এ হার ৩.৬০ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার সিরাজগঞ্জে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর নাটোরে ১৩.৪৮, রাজশাহী ৯.৪৫, বগুড়া ৬.৬৮ শতাংশ। এ বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। এছাড়া তিনটি জেলায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে।
রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার পঞ্চগড়ে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ। নীলফামারীতে সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া রংপুরে ৮.৭৯, লালমনিরহাট ১১.৭৬, কুড়িগ্রাম ৪.৮৫, ঠাকুরগাঁও ১৭.৭০, দিনাজপুর ১১.৮৯ ও গাইবান্ধায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক শূন্য আট শতাংশ শনাক্তের হার চুয়াডাঙ্গায়। এ বিভাগের সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ৩ দশমকি ৪৪ শতাংশ মাগুরা ও সাতক্ষীরা জেলায়। এছাড়া বাগেরহাটে ১০, যশোর ১২.৫, ঝিনাইদহ ৮.২২, খুলনা ১০.৪, কুষ্টিয়া ১৫.১৫, মেহেরপুর ৫.৮৮ এবং নড়াইলে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ১২ শতাংশ বরিশাল জেলায়। এ বিভাগের সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ৫ শতাংশ পিরোজপুরে। এছাড়া পটুয়াখালী ১১.৬৫, ভোলা ৭.৫১, বরগুনা ৬.৮৯, ঝালকাঠি ১২ শতাংশ। সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার হবিগঞ্জে ২৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। এছাড়া মৌলভীবাজার ১৭.৬৪, সিলেট ৮.৬৯ ও সুনামগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০ জনের মৃত্যু : এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৭০ জন মারা গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৬৩। একদিনে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২৪৩০ জন। সবমিলিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। একদিনে ৫ হাজার ৬ জনসহ এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৬৩ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৯৭টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৩৯টি, জিন এক্সপার্ট ৫৪টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৬০৪টি। এসব ল্যাবে ২৪ হাজার ৮১৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা হয়েছে ২৫ হাজার ১৬৩টি। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৮১ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ৪০ ও নারী ৩০ জন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩১, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ এবং বাকিরা অন্যান্য বিভাগের বাসিন্দা। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৪২ জনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে।