দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করলেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী
গাজীপুরঃ
গাজীপুরের টঙ্গীর ব্যাপক আলোচিত যুব মহিলা লীগ নেত্রী নাসিমা আক্তার ওরফে নাসরিন একই সঙ্গে দুই স্বামীর সংসার করতেন। বুধবার রাতে দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দিলেও এখনও কারো সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়নি বলে জানা গেছে।
তবে মামলার আরজিতে তিনি দ্বিতীয় স্বামীকে তার প্রেমিক বলে দাবি করেন। তিনি জানান, একটানা দশ বছর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তাকে বিবাহ করার আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করা হতো।
কিন্তু স্থানীয় এক সাংবাদিক শুক্রবার আসল ঘটনা ফাঁস করেন। ওই সাংবাদিক নিজের ফেসবুক পেজে ওই নেত্রীর দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিবাহের হলফনামা প্রকাশ করলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এতে মুখরোচক আলোচনা সমালোচনায় সরগরম হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বুধবার দ্বিতীয় স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা দিয়ে আলোচনায় আসেন ওই নেত্রী। টঙ্গী পূর্ব থানায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার (নং-১১) প্রধান আসামি স্থানীয় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদের প্রার্থী আলী আজগর।
মামলার বাদী নাসিমা আক্তার ওরফে নাসরিন স্থানীয় একজন যুবলীগ নেতার স্ত্রীর সঙ্গে ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি পদে লড়ছেন। নাসরিনের কথিত ‘ধর্ষণ’ মামলার সংবাদ শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপর নাসিমার অপরাধ জগতের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসে।
অনেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যাসেঞ্জার ইনবক্সে নাসিমার গোপন অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাঠাতে থাকেন। একটি চিত্রে দেখা গেছে, নাসিমা একটি রাজকীয় খাটে বসে ফেনসিডিল খাচ্ছেন। আরেকটি ছবিতে নাসিমাকে একজন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
প্রাপ্ত হলফনামায় দেখা গেছে, নাসিমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলী আসগর ২০১৬ সালের ২৪ জুন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের বিবাহের হলফনামা সম্পাদন করেন।
স্থানীয়রা জানায়, নাসিমার প্রথম স্বামী জসিম উদ্দিন সুমন এসব মেনে নিয়েই নাসিমার সঙ্গে দ্বৈতভাবে সংসার করতেন। তাদের সংসারে (নাসিমা-সুমন দম্পতি) প্রায় চৌদ্দ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
নাসিমা ও তার প্রথম স্বামী সুমনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তাদের ভাঙ্গারি দোকানে একজন ভবঘুরে টোকাইকে পিটিয়ে হত্যার পর দোকানের ভেতর লাশ ঝুলিয়ে রাখার অপরাধে ২০১৬ সালে তাদের বিরুদ্ধে সাবেক টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়।
সম্প্রতি নাসিমার দ্বিতীয় স্বামী আজগরের নেতৃত্বে একজন যুবককে মোবাইল ফোনে তাদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। যুবকটির কান্নার শব্দ যাতে বাহিরে না যায় সেজন্য টর্চার সেলে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সের গান বাজানো হয়।
এ ঘটনায় যুবকটির মুক্তিযোদ্ধা দাদা টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। স্থানীয় একজন সাংবাদিক ঘটনা জেনে ফেলায় আলোচিত নেত্রী নাসিমা সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য ওই সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিল বলেও জানা গেছে।
এদিকে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য নাসিমা ও তার দুই স্বামীর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। বারবার ফোন দিলেও নাসিমা ও তার প্রথম স্বামী জসিম উদ্দিন সুমন ফোন রিসিভ করেননি। দ্বিতীয় স্বামী আজগরের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি (তদন্ত) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় স্বামী আলী আজগরসহ ৫ জনের নামে নাসিমা থানায় ধর্ষণ মামলা দিয়েছেন। ওই মামলায় আজগরের সহযোগী দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজগর পলাতক রয়েছেন।