ধর্মঘটের মধ্যে গাড়ি চালানোয় চালককে মারধর
সবুজদেশ ডেক্সঃ ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত আছে। আজ মঙ্গলবার টানা তিন দিনের মতো ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। ধর্মঘটের মধ্যে গাড়ি চালানোর কারণে শ্রমিকেরা কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ চালকদের হেনস্তা করছেন। আজ কয়েকজন চালককে মারধরও করেছেন আন্দোলনকারী পণ্য পরিবহন শ্রমিকেরা।
সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত রোববার থেকে মাঠে নেমেছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন তাঁরা। ১২ অক্টোবরের মধ্যে আইন সংশোধন করা নাহলে পরিবহন ধর্মঘটসহ বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ করে রাস্তায় নামেন পরিবহন শ্রমিকেরা। কোনো কোনো জায়গায় অবরোধ না মেনে কাভার্ড ভ্যান চালানোয় চালককে মারধর করেছেন তাঁরা। কাউকে কাউকে জোর করে আন্দোলনে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দুধসহ পচনশীল পণ্য বহনকারী পরিবহনগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় আন্দোলনরত পরিবহন চালকদের একজন বলেন, ‘ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে আমরা রাস্তায় নামতে পারব না। আমাদেরও তো ঘর সংসার চালাতে হয়। আমরা সহায় সম্বল বিক্রি করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। এখন যদি ফাঁসি ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয় তাহলে তো আমাদের এসব ফেলে কামলা খাটা ভালো।’
আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, ‘এই আইন শুধু আমাদের ওপর চাপানো হয়েছে। কিন্তু সড়কে তো রিকশা ভ্যানও চলে। পথচারীদেরও তো আইনের আওতায় আনা উচিত। ওরা আইনমতো না চললেও তো দুর্ঘটনা ঘটে।’
গত রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নামেন পরিবহন শ্রমিকেরা। যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় শ্রমিকেরা সড়কে পণ্যবাহী গাড়ি (পিকআপ-ট্রাক) থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। লাইসেন্স না থাকলে চালকদের মুখে পোড়া ইঞ্জিন ওয়েল মেখে দেওয়া হয়। এরপর দিন সোমবারও পণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করেন শ্রমিকেরা। যাঁদের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছিল, তাঁদের গাড়ি চালানো বন্ধ করে আন্দোলনে নামতে বলপ্রয়োগ করা হয়। গাড়ি চালানোর জন্য চালককে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনাও ঘটে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন বিল পাস করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতি এখনও এই বিলে সই করেননি।
নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় অপরাধ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে দোষী চালকের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান আছে। সে ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।