ঢাকা ০৩:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধুলার কুয়াশায় আচ্ছন্ন সড়ক, জনজীবন অতিষ্ঠ

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দুটি প্যাকেজে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে প্রায় ৪ বছর ধরে। এতে জনগণ তথা যানবাহনের জন্য লাভজনক হলেও নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে নির্মাণ সামগ্রী ও খুঁড়ে রাখা ধুলাবালিতে ‘বালিঝড়ে’ বিপস্তর্য পথচারী ও সড়কের ৩৮ কিলোমিটান সংলগ্ন বসাবসরত মানুষের জনজীবন। ধুলায় বিপন্ন সড়কে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়মিত পানি না ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও যেখানে-সেখানে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ধুলা ও বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতি দিনই বাড়ছে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে যশোর- বেনাপোল মহাসড়কের পূর্ননির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩৮ কিলোমিটারের এ মহাসড়কটি পূর্ননির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে এই সড়কটি টিকাদারী হিসাবে কাজ করছে মেসার্স ইজাহার এন্টারপ্রাইজ। যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা সড়ক বিভাগের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে যশোর পুলেরহাট থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার পিজ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে পাথরের টুকরো ও বালুকণা থাকায় বিশেষ করে মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন গুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন পথচারীরা। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও বালুবাহী ড্রামট্রাক ও ভারী যানবাহন গুলো চলাচলের কারণে পুরো সড়ক জুড়ে কুয়াশার মতো ধূলা উড়তে দেখা গেছে। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় রৌদ্যউজ্জ্বল দুপুরেও যেন কুয়াশার শীতের সকাল। অতিরিক্ত ধূলার কারণে ওই রাস্তায় আটো, রিক্সা, মোটরসাইকেল যাত্রীসহ পথচারীরা দূর্ভোগ স্বীকারের পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তদারকির অভাবে কাজের এমন ধীরগতি। তাদের স্বেচ্ছাচারী ভুমিকার কারণে জনদূর্ভোগ চরমে উঠেছে।

পুলেরহাট এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তার কাজ চলছে কিছুটা ধূলা বালি উড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে সংশিষ্ট কর্মকর্তারা যদি রাস্তায় নিয়মিত পানি দিয়ে রাখেন তাহলে অতিরিক্ত ধূলা বালি থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেত। গত দুই দিনে রাস্তার ধূলা বালি জনজীবন আরো অতিষ্ট করে তোলেছে।

ঝিকরগাছা বাজারে সড়ক সংলগ্ন ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন জানান, ‘শুধু রাস্তার কারণে মারাত্বক বায়ু দূষণের শিকার আমরা। এমন ধুলা আগে ছিল না। ধুলা থেকে রাতেও নিস্তার নেই। রাস্তার পাশে বিভিন্ন মালামাল পসরা সাজিয়ে বসা যায় না। রাস্তার গাড়ি চললেই ধুলা ছিটে এসে দোকানের খাবারের গায়ে পড়ে। এ সময় সংশিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইমদাদুল হক জানান, দুটি প্যাকেজে ২০১৬ সাল থেকে রাস্তার পুননির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্যাকেজে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং অন্য প্যাকেজে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ধূলা বালি নিয়ন্ত্রণ রাখতে রাস্তায় প্রয়োজন মতো পানি দেয়া হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তবে রাস্তায় সার্বক্ষনিক পানি দেয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ৩৮ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়কটি দুটি প্যাকেজের অন্তভুক্ত। প্রথম প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় প্যাকেজে ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নিমাণ কাজ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শুকনো মৌসুমে যশোর-বেনাপোল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ধুলা-বালু নিরসনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিনে দুইবার করে ৫টি বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পানি ছিটানো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ তারপরেও যদি পানি না ছিটায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.দিলীপ কুমার রায় বলেন, ধুলার মাধ্যমে বাতাসে শ্বাসকষ্ট, যক্ষা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার মাধ্যমে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে যশোরবাসী। এজন্য রাস্তায় চলাচল করার সময় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
৬৭৩ Time View

ধুলার কুয়াশায় আচ্ছন্ন সড়ক, জনজীবন অতিষ্ঠ

আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দুটি প্যাকেজে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে প্রায় ৪ বছর ধরে। এতে জনগণ তথা যানবাহনের জন্য লাভজনক হলেও নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে নির্মাণ সামগ্রী ও খুঁড়ে রাখা ধুলাবালিতে ‘বালিঝড়ে’ বিপস্তর্য পথচারী ও সড়কের ৩৮ কিলোমিটান সংলগ্ন বসাবসরত মানুষের জনজীবন। ধুলায় বিপন্ন সড়কে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়মিত পানি না ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও যেখানে-সেখানে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ধুলা ও বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতি দিনই বাড়ছে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে যশোর- বেনাপোল মহাসড়কের পূর্ননির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩৮ কিলোমিটারের এ মহাসড়কটি পূর্ননির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে এই সড়কটি টিকাদারী হিসাবে কাজ করছে মেসার্স ইজাহার এন্টারপ্রাইজ। যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা সড়ক বিভাগের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে যশোর পুলেরহাট থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার পিজ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে পাথরের টুকরো ও বালুকণা থাকায় বিশেষ করে মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন গুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন পথচারীরা। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও বালুবাহী ড্রামট্রাক ও ভারী যানবাহন গুলো চলাচলের কারণে পুরো সড়ক জুড়ে কুয়াশার মতো ধূলা উড়তে দেখা গেছে। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় রৌদ্যউজ্জ্বল দুপুরেও যেন কুয়াশার শীতের সকাল। অতিরিক্ত ধূলার কারণে ওই রাস্তায় আটো, রিক্সা, মোটরসাইকেল যাত্রীসহ পথচারীরা দূর্ভোগ স্বীকারের পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তদারকির অভাবে কাজের এমন ধীরগতি। তাদের স্বেচ্ছাচারী ভুমিকার কারণে জনদূর্ভোগ চরমে উঠেছে।

পুলেরহাট এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তার কাজ চলছে কিছুটা ধূলা বালি উড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে সংশিষ্ট কর্মকর্তারা যদি রাস্তায় নিয়মিত পানি দিয়ে রাখেন তাহলে অতিরিক্ত ধূলা বালি থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেত। গত দুই দিনে রাস্তার ধূলা বালি জনজীবন আরো অতিষ্ট করে তোলেছে।

ঝিকরগাছা বাজারে সড়ক সংলগ্ন ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন জানান, ‘শুধু রাস্তার কারণে মারাত্বক বায়ু দূষণের শিকার আমরা। এমন ধুলা আগে ছিল না। ধুলা থেকে রাতেও নিস্তার নেই। রাস্তার পাশে বিভিন্ন মালামাল পসরা সাজিয়ে বসা যায় না। রাস্তার গাড়ি চললেই ধুলা ছিটে এসে দোকানের খাবারের গায়ে পড়ে। এ সময় সংশিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইমদাদুল হক জানান, দুটি প্যাকেজে ২০১৬ সাল থেকে রাস্তার পুননির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্যাকেজে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং অন্য প্যাকেজে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ধূলা বালি নিয়ন্ত্রণ রাখতে রাস্তায় প্রয়োজন মতো পানি দেয়া হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তবে রাস্তায় সার্বক্ষনিক পানি দেয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ৩৮ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়কটি দুটি প্যাকেজের অন্তভুক্ত। প্রথম প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় প্যাকেজে ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নিমাণ কাজ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শুকনো মৌসুমে যশোর-বেনাপোল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ধুলা-বালু নিরসনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিনে দুইবার করে ৫টি বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পানি ছিটানো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ তারপরেও যদি পানি না ছিটায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.দিলীপ কুমার রায় বলেন, ধুলার মাধ্যমে বাতাসে শ্বাসকষ্ট, যক্ষা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার মাধ্যমে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে যশোরবাসী। এজন্য রাস্তায় চলাচল করার সময় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।