ঢাকাঃ

করের আওতা সম্প্রসারণ ও নতুন করদাতা শনাক্তে আবার মাঠে নামছে জরিপ টিম। অভ্যন্তরীণ ও বহিরাঙ্গন দুই ধরনের জরিপ করা হবে। সেজন্য জরিপ টিম পুনর্গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বহিরাঙ্গন জরিপ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে জরিপ টিমকে সহায়তায় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ, আনসার, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিপ টিমের সদস্যরা বাড়ি কিংবা অফিসে গিয়ে করযোগ্য ব্যক্তিদের শনাক্ত ও টিআইএন নম্বর দেবেন। সারা দেশে কর অঞ্চলে গঠিত হবে ১০ সদস্যের চারটি জরিপ দল। এ মাস থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ জরিপের অংশ হিসাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। তারপর তাদের নামে টিআইএন ইস্যু করে কর আদায়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে এনবিআর।

এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মাঠের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা বজায় রেখে সমীক্ষা চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এনবিআর অবশ্য তাদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় জোর দিতে চায়। দেশে করোনভাইরাস শনাক্তের পর গত মার্চ থেকে সমীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাধারণত এনবিআরের জরিপের মাধ্যমে নতুন করদাতাদের সন্ধানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে এ বছর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ-জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে করদাতাদের আয়ের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আগামী দিনে প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য প্রবণতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আয়কর অঞ্চলগুলো এনবিআরের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুসারে নতুন করদাতাদের সন্ধানের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করবে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন নতুন করদাতাকে আয়কর জালের আওতায় আনতে করযোগ্য ব্যক্তিদের শনাক্ত ও টিআইএন নম্বর দিতে হবে। কর কর্মকর্তারা সারা দেশে করদাতাদের বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। জরিপ কাজের আওতায় সাধারণত ডোর-টু-ডোর করদাতার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কর কর্মকর্তারা করযোগ্য আয় করেন; কর দেন না, কিংবা টিআইএন নম্বর নেই, তাদের শনাক্ত করতে হবে। জুলাইয়ে করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর ডোর-টু-ডোর জরিপের কাজ স্থগিত করা হয়েছিল।

ওই সিদ্ধান্তে ডোর-টু-ডোর জরিপ কাজ স্থগিত করার পাশাপাশি আগের বছরের জরিপের ফল বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনবিআর প্রযুক্তিনির্ভর অভ্যন্তরীণ জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন করদাতাদের শনাক্ত করার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করবেন।

এনবিআরের নির্দেশনায় বলা হয়, করের আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্তকরণের বিষয়টি এনবিআর সর্বদাই গুরুত্বসহ বিবেচনা করে। জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ জরিপ কার্যক্রমের ওপর জোর প্রদান করা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে ‘সেক্রেটারি সোর্স’ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাইয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য নতুন করদাতা শনাক্ত করে কর নির্ধারণ-সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম যাচাই, যেমনÑটিআইএন প্রদান, নথি চালু, মামলা নিষ্পত্তি ও আদায় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বহিরঙ্গণ জরিপ কার্যক্রমও পরিচালনা করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে জরিপ টিম পুনর্গঠন করা হলো।

প্রতিটি জরিপ টিমে ‘আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪’-এর ধারা-১১৫ অনুসারে প্রতিটি টিমে ১০ সদস্য থাকবেন, যাতে একজন অতিরিক্ত, সহকারী বা উপকর কমিশনার (টিম সভাপতি), একজন কর পরিদর্শক (সদস্য), দুজন উচ্চমান সহকারী বা অফিস সহকারী (সদস্য) ও একজন কর পরির্দশক (সদস্য সচিব) থাকবেন। অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিপ টিমকে সহায়তায় থাকবে পাঁচ সদস্যের টিম। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, একজন পুলিশ সদস্য, একজন আনসার সদস্য ও একজন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (কমপক্ষে একজন নারী শিক্ষার্থী) থাকবে। ‘জরিপ কার্যক্রম ২০২০-২০২১’ নামে নতুনভাবে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে এনবিআরকে মাসিক প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here