নতুন বছরের শুরুতে ১০ হাজার জনবল নিয়োগ হচ্ছে পুলিশে
সবুজদেশ ডেস্কঃ
পুলিশ প্রশাসনের জন্য নতুন বছর ’২০ সালের শুরুতেই সুখবর বয়ে নিয়ে আসছে সরকার। পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ১০ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে জানুয়ারিতে। শুধু পুলিশের জনবল নিয়োগই নয়, যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র, গাড়ি, লজিস্টিক সাপোর্ট, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ব্যবস্থার প্রসার, ভবন নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নতমানের খাবার ও পোশাক সরবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শংকর কুমার দে।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিকায়নের জন্য এই বাহিনীতে নতুন করে জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পুলিশ সদর দফতরের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য সর্বমোট ১৩ হাজার ৬৪১ নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাকি পদ সৃষ্টির কার্যক্রম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা দফতরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি জনবল বৃদ্ধিসহ পুলিশ প্রশাসনের নানা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যানবাহন ও জলযান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুলিশ বাহিনীর গতিশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষায়িত, দীর্ঘস্থায়ী, মানসম্পন্ন যানবাহন এবং জলযানের বিকল্প নেই। যানবাহন ক্রয়ে বাজেট কোড প্রতিবন্ধকতা দূর করে ব্যবহার উপযোগী, টেকসই ও মানসম্পন্ন যানবাহন দ্রুততার সঙ্গে কিনতে হবে। খাদ্য ও পোশাক বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়েছে, প্রাধিকারপ্রাপ্ত পুলিশের জন্য কাপড়, বুট, জুতো, বেল্ট, রিফ্লেক্টিং ভেস্ট, রেইন কোটসহ সব ধরনের পোশাক সামগ্রীর গুণগতমান উন্নত করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে, যা পুলিশবাহিনীর সামর্থ্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রেশনিং প্রথার মাধ্যমে পুলিশকে চাল, গম বা আটা, ডাল, তেল, চিনি সরবরাহ করা হয়ে থাকে, যা পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী গুদামের যে চাল সরবরাহ করা হয়, তা অনেকাংশেই স্বাদহীন, দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। ফলে ওই চাল আটা খাওয়া যায় না। পুলিশে জন্য ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল না থাকায় ভাল মানের চাল খাদ্যগুদাম থেকে তোলার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্রালাপ করা হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।
এই সুবিধা পাওয়া গেলে এবং রেশনিং প্রথা আরও উন্নত করা হলে পুলিশের সামর্থ্য আরও বাড়বে। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি, জঙ্গী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ কৌশলগত অপরাধ মোকাবেলায় সক্ষম ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সরঞ্জামাদি সংযোজন করা পুলিশ বাহিনীতে অপরিহার্য। এতে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব বাজেটের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের ফোর্সের আবাসনের জন্য ব্যারাক, বিদ্যমান ব্যারাকের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ, থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র, অফিস এবং ফোর্স ও অস্ত্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ইউনিটগুলোর সীমানাপ্রাচীরসহ অত্যাবশ্যকীয় কাঠামো নির্মাণ করা আবশ্যক। নারী পুলিশে আবাসন সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন জেলায় ৫৫ মহিলা ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক তদন্ত ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতিসম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রা, ধরন ও কৌশলগত ভিন্নতায় প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন পুলিশের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশে বিদ্যমান সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করছে বর্তমান সরকার। তবে এখনও অনেক সমস্যা আছে। সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুলিশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নেয়ার অংশ হিসাবে নতুন বছরে সুখবর দিচ্ছে সরকার।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনায় পুলিশ বাহিনীকে সমস্যামুক্ত করে তোলার উদ্যোগ সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের বিষয়টি আলোচনা হয়। এ ছাড়া নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম গ্রহণে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। বর্তমান সরকারের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের বিষয়টি ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণা বাস্তবায়নের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। এজন্য সিটিএ্যান্ডটিসিইউ গঠন, নিডবেজড ট্রেনিং, দেশ ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ টিম, ফোর্স ও ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।