ঢাকাঃ

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, নতুন বছরে বৃহত্তর ঐক্য সংসহত করে গণতন্ত্র পুনর্রুদ্ধারে আন্দোলন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তিনি বলেন, ‘এ বছরটা জঘন্যভাবে শেষ হচ্ছে। নতুন বছরে আমরা সবাই মিলে আমাদের বৃহত্তর ঐক্যকে সুসংহত করে জনগণের ঐক্যের ভিত্তিতে এই দেশকে বাঁচানোর জন্য যা করার সবকিছু করব, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব’।

সোমবার এই জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এই প্রত্যাশার কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ চায় সংবিধানে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, অধিকার দেয়া আছে সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করা। জনগণ ক্ষমতার মালিক- এটা সংবিধানে লেখা আছে। আজকে কি জনগণ সেই অবস্থায় আছে, তাদের ওপর নানা ধরনের আক্রমণ চালানো হচ্ছে’। বেলা সাড়ে ১১টায় ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এ জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করেন ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এটা এত লজ্জাস্কর একটা ঘটনা যে, বছরের শেষে ছাত্রদের ওপরে এই ধরনের পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হবে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই’।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পেশি শক্তিকে এভাবে অপব্যবহার করে ছাত্র সমাজের ওপর এরকম আক্রমণ করা যায় তাহলে নির্বাচিত নেতাদের ওপরে এরকম আক্রমণ করা যায়- এগুলো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে’। তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা নিয়ে সারা দেশের মানুষ গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছে।

একদলীয় এক ব্যক্তির শাসনকে কেন্দ্রে করে তারা পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে এগুলো করে যাচ্ছে। অর্থাৎ সংবিধানের ওপর আজকে আক্রমণ হচ্ছে যেখানে গণতন্ত্র সংবিধানের প্রতিশ্রুতি। আজকে কি দেশে গণতন্ত্র আছে এই প্রশ্নটা আমরা রাখছি, গণতন্ত্রের মধ্যে এগুলো করা যায় না। স্বাধীনতার নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা হত্যা করে যাচ্ছে’।

নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনার বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন, ওবায়দুল কাদের নিজের বিচার নিজে শুরু করবেন নাকি।

রোববার দুপুরে ভিপি নুরুল হককে তার কক্ষে ঢুকে আলো নিভিয়ে পেটান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এই মঞ্চের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ৩০ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

তাদের মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ বিষয়ে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করা হবে। ঐক্যফ্রন্ট বিচারের আশা করে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘উনি (কাদের) কি নিজের বিচার শুরু করবেন নাকি? নিজেকে আসামি ঘোষণা করে বিচার করলে একটা কথা হবে।’

এই হামলার ঘটনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছে। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এরা মারা যেত পারত। এখনও মারা যেতে পারে। গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বছর শেষে একদলীয়, এক ব্যক্তির শাসনকে কেন্দ্র করে পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে এগুলো করা অকল্পনীয়। কিন্তু করে যাচ্ছে। সংবিধানের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। যেখানে গণতন্ত্র সংবিধানের প্রতিশ্রুতি। আজকে কি গণতন্ত্র আছে? এই প্রশ্ন আমরা রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘পেশি শক্তির অপব্যবহার করে ছাত্র সমাজের ওপর, নির্বাচিত নেতাদের ওপর এগুলো করা যায়, নজিরবিহীন জিনিস ঘটতে শুরু করেছে। এ বছর জঘন্যভাবে শেষ। নতুন বছরে আমাদের বৃহত্তর ঐক্যকে সুসংহত করে মানুষকে বাঁচানোর জন্য যা করার করব।’ ঐক্যফ্রন্ট তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানান ড. কামাল হোসেন।

এ সময় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর বুয়েটের আবরার ফাহাদাকে হত্যা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর ডাকসুর ভিপির ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের চরিত্র। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর হওয়াকে কেন্দ্র করে ৩০ ডিসেম্বরে কর্মসূচির বিষয়ে রব জানান, পরবর্তীকালে বৈঠক করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহসীন রশিদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্যফ্রন্টের দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here