ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউজিল্যান্ডকে ৬ ইউকেটে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ইতিহাসের হাতছানি, প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। পারবে কি বাংলাদেশ? মাথার ওপর এমন অদৃশ্য চাপ নিয়েই খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশের যুবারা। মাঠে সেটা একদমই মনে হলো না। মনে হলো, যেন যুগ যুগ ধরে ফাইনাল খেলে অভ্যস্ত এই দলটি। মাথা ঠান্ডা রেখে সেমিফাইনালের মঞ্চে কি দারুণ ক্রিকেট খেললেন আকবর আলী, তৌহিদ হৃদয়, মাহমুদুল হাসান, শরিফুল ইসলামরা!

তাদের পরিণত ক্রিকেটের সামনে অসহায় দেখালো নিউজিল্যান্ডের যুবাদের। পচেফস্ট্রমে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে কিউইদের হেসেখেলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

এই দলকে হারানো কঠিন। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। তবে নকআউটের লড়াইয়ে তো যে কোনো কিছুই হতে পারে। অন্ততপক্ষে সমান সমান লড়াই তো হতে পারতো! বাংলাদেশের যুবারা সেই সুযোগটাই দিলেন না।

মাহমুদুল হাসানের চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটের বড় জয় নিয়েই ফাইনালে নাম লিখিয়েছে যুবারা। রোববার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত।

বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে তারা আটকে দেন ২১১ রানেই। তবে রান তাড়ায় নেমে ৩২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ফিরে যান মাত্র ৩ রান করে। তার সঙ্গী পারভেজ হোসেন ইমন আউট হন ১৪ রানে।

তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন মাহমুদুল হাসান জয় আর তৌহিদ হৃদয়। দারুণ খেলছিলেন তারা। তবে দলের স্কোর ১০০ ছুঁতেই ভুল করে বসেন হৃদয়। একটু এগিয়ে শট খেলতে গেলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি, ৪৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে হৃদয় তখন ৪০ রানে।

পরের সময়টায় শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একদম ঠান্ডা মাথায় এগিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। চতুর্থ উইকেটে ১০১ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি গড়ে তবেই সাজঘরে ফেরেন জয়, তাসখতকে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ হন তিনি।

তবে তার ঠিক আগেই দারুণ এক বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরিও পূরণ করে নিয়েছেন জয়। ১২৭ বলে তার ১০০ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১৩ বাউন্ডারির মার। ৪০ রানে অপরাজিত থেকে যান শাহাদাত হোসেন।

এর আগে টাইগার যুবাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮ উইকেটে ২১১ রানের বেশি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টস ভাগ্যটা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। টস জিতে নিউজিল্যান্ড যুব দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করতে শুরু থেকেই কিউইদের চাপে রাখেন বাংলাদেশের বোলাররা।

নিউজিল্যান্ডের দুর্বলতার দিকটি মাথায় রেখে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণ নিয়ে আসেন আকবর আলী। অফস্পিনার শামীম হোসেন বল হাতে নিয়েই পান সাফল্য। তার ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে প্রথম স্লিপে তানজিদ হাসানের ক্যাচ হন ওপেনার রিস মারিও (১)।

এরপর কিছুটা সময় স্বস্তিতে ছিল নিউজিল্যান্ড। যদিও রান তুলতে পারেনি সেভাবে। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে কিউই যুবারা তুলে মাত্র ২৬ রান। তারা দ্বিতীয় উইকেটটিও হারায় বাংলাদেশের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে। এবার ওলি হোয়াইটকে (১৮) উইকেটরক্ষক আকবরের ক্যাচ বানান টুর্নামেন্ট জুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করা বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান।

বিপদে পড়া কিউইরা ধীরগতিতে ওভার পার করতে থাকে। বাংলাদেশের বোলাররাও চেপে ধরে রাখেন রানের গতি। ২১তম ওভারে এসে আরও একটি উইকেট তুলে নেন শামীম হোসেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা ফারগুস লেলম্যানকে (২৪) বোকা বানিয়ে শর্ট মিডউইকেটে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়।

অধিনায়ক জেসে টাসকফ উইকেটে আসার পর থেকেই স্পিনের বিপক্ষে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। ১০ রান করা কিউই দলপতিকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। তাতে ৭৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড।

তবে পঞ্চম উইকেটে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন নিকোল লিডস্টোন আর বেকহ্যাম হুইলার গ্রিনল। ১৫ ওভার ব্যাট করে ৬৭ রান যোগ করেন তারা। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। উইকেট কামড়ে পড়ে ছিলেন এই যুগল।

শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তার ফুলটস গতিময় এক ডেলিভারি পায়ে লেগে যায় লিডস্টোনের, আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি। ৪৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান ফেরার পরের ওভারে আরও একটি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কুইন সানডেকে (১) বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। এরপর শরিফুলের কাটারে বোল্ড ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ক (৭)।

তবে একটা প্রান্ত ধরে ঠিকই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বেকহ্যাম হুইলার। দারুণ খেলে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। কিউইদের এই ব্যাটিং ভরসা ইনিংসের শেষ পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। ৮৩ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট শিকার দুই স্পিনার-হাসান মুরাদ আর শামীম হোসেনের।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:২২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
৩৭৯ Time View

নিউজিল্যান্ডকে ৬ ইউকেটে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৯:২২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ইতিহাসের হাতছানি, প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। পারবে কি বাংলাদেশ? মাথার ওপর এমন অদৃশ্য চাপ নিয়েই খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশের যুবারা। মাঠে সেটা একদমই মনে হলো না। মনে হলো, যেন যুগ যুগ ধরে ফাইনাল খেলে অভ্যস্ত এই দলটি। মাথা ঠান্ডা রেখে সেমিফাইনালের মঞ্চে কি দারুণ ক্রিকেট খেললেন আকবর আলী, তৌহিদ হৃদয়, মাহমুদুল হাসান, শরিফুল ইসলামরা!

তাদের পরিণত ক্রিকেটের সামনে অসহায় দেখালো নিউজিল্যান্ডের যুবাদের। পচেফস্ট্রমে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে কিউইদের হেসেখেলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

এই দলকে হারানো কঠিন। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। তবে নকআউটের লড়াইয়ে তো যে কোনো কিছুই হতে পারে। অন্ততপক্ষে সমান সমান লড়াই তো হতে পারতো! বাংলাদেশের যুবারা সেই সুযোগটাই দিলেন না।

মাহমুদুল হাসানের চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটের বড় জয় নিয়েই ফাইনালে নাম লিখিয়েছে যুবারা। রোববার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত।

বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে তারা আটকে দেন ২১১ রানেই। তবে রান তাড়ায় নেমে ৩২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ফিরে যান মাত্র ৩ রান করে। তার সঙ্গী পারভেজ হোসেন ইমন আউট হন ১৪ রানে।

তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন মাহমুদুল হাসান জয় আর তৌহিদ হৃদয়। দারুণ খেলছিলেন তারা। তবে দলের স্কোর ১০০ ছুঁতেই ভুল করে বসেন হৃদয়। একটু এগিয়ে শট খেলতে গেলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি, ৪৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে হৃদয় তখন ৪০ রানে।

পরের সময়টায় শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একদম ঠান্ডা মাথায় এগিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। চতুর্থ উইকেটে ১০১ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি গড়ে তবেই সাজঘরে ফেরেন জয়, তাসখতকে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ হন তিনি।

তবে তার ঠিক আগেই দারুণ এক বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরিও পূরণ করে নিয়েছেন জয়। ১২৭ বলে তার ১০০ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১৩ বাউন্ডারির মার। ৪০ রানে অপরাজিত থেকে যান শাহাদাত হোসেন।

এর আগে টাইগার যুবাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮ উইকেটে ২১১ রানের বেশি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টস ভাগ্যটা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। টস জিতে নিউজিল্যান্ড যুব দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করতে শুরু থেকেই কিউইদের চাপে রাখেন বাংলাদেশের বোলাররা।

নিউজিল্যান্ডের দুর্বলতার দিকটি মাথায় রেখে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণ নিয়ে আসেন আকবর আলী। অফস্পিনার শামীম হোসেন বল হাতে নিয়েই পান সাফল্য। তার ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে প্রথম স্লিপে তানজিদ হাসানের ক্যাচ হন ওপেনার রিস মারিও (১)।

এরপর কিছুটা সময় স্বস্তিতে ছিল নিউজিল্যান্ড। যদিও রান তুলতে পারেনি সেভাবে। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে কিউই যুবারা তুলে মাত্র ২৬ রান। তারা দ্বিতীয় উইকেটটিও হারায় বাংলাদেশের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে। এবার ওলি হোয়াইটকে (১৮) উইকেটরক্ষক আকবরের ক্যাচ বানান টুর্নামেন্ট জুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করা বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান।

বিপদে পড়া কিউইরা ধীরগতিতে ওভার পার করতে থাকে। বাংলাদেশের বোলাররাও চেপে ধরে রাখেন রানের গতি। ২১তম ওভারে এসে আরও একটি উইকেট তুলে নেন শামীম হোসেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা ফারগুস লেলম্যানকে (২৪) বোকা বানিয়ে শর্ট মিডউইকেটে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়।

অধিনায়ক জেসে টাসকফ উইকেটে আসার পর থেকেই স্পিনের বিপক্ষে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। ১০ রান করা কিউই দলপতিকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। তাতে ৭৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড।

তবে পঞ্চম উইকেটে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন নিকোল লিডস্টোন আর বেকহ্যাম হুইলার গ্রিনল। ১৫ ওভার ব্যাট করে ৬৭ রান যোগ করেন তারা। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। উইকেট কামড়ে পড়ে ছিলেন এই যুগল।

শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তার ফুলটস গতিময় এক ডেলিভারি পায়ে লেগে যায় লিডস্টোনের, আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি। ৪৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান ফেরার পরের ওভারে আরও একটি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কুইন সানডেকে (১) বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। এরপর শরিফুলের কাটারে বোল্ড ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ক (৭)।

তবে একটা প্রান্ত ধরে ঠিকই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বেকহ্যাম হুইলার। দারুণ খেলে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। কিউইদের এই ব্যাটিং ভরসা ইনিংসের শেষ পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। ৮৩ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট শিকার দুই স্পিনার-হাসান মুরাদ আর শামীম হোসেনের।