ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজেদের করা তদন্তে বিপাকে ইসি

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তদন্ত করে ১৭টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার কমিশনার।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল তার মধ্যে ৭টি কেন্দ্রে তদন্ত কমিটি অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি। অর্থাৎ ইসির তদন্তে এমন ৮টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে যেগুলোর ভোট গ্রহণ ভোটের দিন স্থগিত করা হয়নি বা পরে পুনঃ ভোট নেওয়া হয়নি।

এর ফলে নির্বাচন কমিশন এখন ওই কেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে কী করবে তা নির্ধারণে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার মতামত নিচ্ছে ও আইন ঘেঁটে দেখছে।

কমিশন সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশনের তদন্তে নতুন করে ৮টি কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। তাই এই অনিয়মের কারণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জয়-পরাজয়ে কোনো প্রভাব পড়ল কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। এতদিন পর এটা কঠিন হবে বলেই ইসির ওই সূত্রের দাবি।

বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি ১৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিতের সুপারিশ করেছিলেন। এখন তদন্ত কমিটি অনিয়মের প্রমাণ না পেলে কী আর করার আছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, তদন্ত দল সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তদন্তে ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম সম্পর্কিত অভিযোগকারী ও সাক্ষীরা ভয়ে কিছু বলার সাহস পাননি। যে কারণে তদন্ত কমিটিও অনিয়মের হদিস পায়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তাঁরা হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত অচিরেই জানানো হবে।

গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বিএনপির মজিবর রহমান সারোয়ারসহ মোট ছয়জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের দিন এক অর্থে দুপুরের আগেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যায়। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, বুথের ভেতর অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যালট কেড়ে নিয়ে নিজেরাই নৌকায় সিল মেরেছেন। সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়া অন্য পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।

ভোটে সীমাহীন অনিয়ম ও প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বরিশাল সিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই প্রস্তাবে সিইসি ও অন্য তিন কমিশনার সায় দেননি। দিন শেষে ইসি ১৬টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দায় সারে।

এরপর ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি গত সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে জমা দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি প্রথম দফায় ৩০টি এবং দ্বিতীয়বারে ২৬টি মিলিয়ে ৫৬টি কেন্দ্রে তদন্ত করেছেন। এর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে তিনি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:২২:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮
৭৯২ Time View

নিজেদের করা তদন্তে বিপাকে ইসি

আপডেট সময় : ০৯:২২:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তদন্ত করে ১৭টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার কমিশনার।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল তার মধ্যে ৭টি কেন্দ্রে তদন্ত কমিটি অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি। অর্থাৎ ইসির তদন্তে এমন ৮টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে যেগুলোর ভোট গ্রহণ ভোটের দিন স্থগিত করা হয়নি বা পরে পুনঃ ভোট নেওয়া হয়নি।

এর ফলে নির্বাচন কমিশন এখন ওই কেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে কী করবে তা নির্ধারণে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার মতামত নিচ্ছে ও আইন ঘেঁটে দেখছে।

কমিশন সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশনের তদন্তে নতুন করে ৮টি কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। তাই এই অনিয়মের কারণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জয়-পরাজয়ে কোনো প্রভাব পড়ল কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। এতদিন পর এটা কঠিন হবে বলেই ইসির ওই সূত্রের দাবি।

বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি ১৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিতের সুপারিশ করেছিলেন। এখন তদন্ত কমিটি অনিয়মের প্রমাণ না পেলে কী আর করার আছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, তদন্ত দল সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তদন্তে ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম সম্পর্কিত অভিযোগকারী ও সাক্ষীরা ভয়ে কিছু বলার সাহস পাননি। যে কারণে তদন্ত কমিটিও অনিয়মের হদিস পায়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তাঁরা হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত অচিরেই জানানো হবে।

গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বিএনপির মজিবর রহমান সারোয়ারসহ মোট ছয়জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের দিন এক অর্থে দুপুরের আগেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যায়। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, বুথের ভেতর অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যালট কেড়ে নিয়ে নিজেরাই নৌকায় সিল মেরেছেন। সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়া অন্য পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।

ভোটে সীমাহীন অনিয়ম ও প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বরিশাল সিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই প্রস্তাবে সিইসি ও অন্য তিন কমিশনার সায় দেননি। দিন শেষে ইসি ১৬টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দায় সারে।

এরপর ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি গত সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন ইসিতে জমা দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি প্রথম দফায় ৩০টি এবং দ্বিতীয়বারে ২৬টি মিলিয়ে ৫৬টি কেন্দ্রে তদন্ত করেছেন। এর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে তিনি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন।