ঢাকা ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বানচাল ও গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে নাশকতার আশঙ্কা । সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে : আইনমন্ত্রী

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ সামনেই জাতীয় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে বিএনপি নির্বাচন বানচাল বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে সরকার আশঙ্কা করছে। আবার ১০ অক্টোবর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করেও নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই হঠাৎ গায়েবি মামলা দায়ের ও ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পুলিশের দায়িত্বশীল নানা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান আসামি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, লুত্ফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ প্রমুখ। এমনিতেই পুরনো মামলায় দৌড়ের ওপর আছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে নতুন মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে জ্ঞাত-অজ্ঞাত শতাধিক নেতা-কর্মীকে। প্রতিটি থানায় দুই ধরনের মামলা হচ্ছে। এক ধরনের মামলায় বাদী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ, আর অন্য মামলার বাদী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিএসবি। আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে পুলিশ আশঙ্কা করছে। তাই তাদের মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সারা দেশে যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে তা মুহূর্তেই বিনষ্ট হতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে পুলিশ এখনই নির্বাচনী কোনো কাজে মাঠে নামতে দেবে না বিএনপি নেতা-কর্মীদের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তারা।

পুলিশ সদর দফতরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোথাও যেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা সমবেত হতে না পারে। যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় মামলা রয়েছে, যারা ইতিপূর্বে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন, পুলিশের চোখে যারা অপরাধী এবং যারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, তাদের তালিকা ধরে নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের যুক্তি, এতে অপরাধীরা গা-ঢাকা দেবে। কোথাও জড়ো হয়ে সহিংসতার চেষ্টা করতে পারবে না। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে বিভিন্ন থানায় পুলিশ তালিকা করে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। রাজধানীসহ আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদীর বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলার শেষ নেই। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সহিংসতার আশঙ্কা বেশি যেমন— রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা,  কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ আরও বেশ কিছু জেলায় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের তালিকা করে নতুন মামলা দিচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায়ও বিভিন্ন থানায় নতুন মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে। এসব মামলায় মূলত স্থানীয় পর্যায়ে যারা দলের সংগঠক বা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের আসামি করা হচ্ছে। এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হচ্ছে বিভিন্ন মামলায়। একইভাবে দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায়ও দলীয় নেতাদের আসামি করে মামলা করা হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, যাতে কেউ রাস্তায় নেমে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। ঢাকা মহানগরীর একাধিক থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে বিএনপি। এ অবস্থায় পুলিশও সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। কারণ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হলে বিএনপি মাঠে নামার চেষ্টা করতে পারে—এমন চিন্তা আছে পুলিশের। গতকাল রাজধানীর একটি কর্মসূচিতে বিএনপির গায়েবি মামলার অভিযোগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমাদের আইনের বইয়ে যেসব অপরাধের কথা বলা আছে, সেসব অপরাধ যদি কেউ করে তাহলে মামলা হবে। অপরাধ না করলে মামলার কোনো আশঙ্কা নেই। মামলাগুলো নিয়ে এখন তদন্ত হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তদন্তের পরে যদি কোনো অভিযোগ না পাওয়া যায় তাহলে চূড়ান্ত রিপোর্টের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। আর যাদের অপরাধ পাওয়া যাবে তাদের বিচারের জন্য আদালতে দাঁড়াতে হবে। যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ করা খাসলতে পরিণত হয়েছে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হয়েছে। আসলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে বিএনপি নেতারা নাশকতার ছক তৈরি করছেন, গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা দিতে পারে। পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া বা গ্রেফতার করার কথা নয়।

About Author Information
আপডেট সময় : ০২:১৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অক্টোবর ২০১৮
১০৩১ Time View

নির্বাচন বানচাল ও গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে নাশকতার আশঙ্কা । সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে : আইনমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:১৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ সামনেই জাতীয় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে বিএনপি নির্বাচন বানচাল বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে সরকার আশঙ্কা করছে। আবার ১০ অক্টোবর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করেও নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই হঠাৎ গায়েবি মামলা দায়ের ও ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পুলিশের দায়িত্বশীল নানা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান আসামি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, লুত্ফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ প্রমুখ। এমনিতেই পুরনো মামলায় দৌড়ের ওপর আছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে নতুন মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে জ্ঞাত-অজ্ঞাত শতাধিক নেতা-কর্মীকে। প্রতিটি থানায় দুই ধরনের মামলা হচ্ছে। এক ধরনের মামলায় বাদী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ, আর অন্য মামলার বাদী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিএসবি। আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে পুলিশ আশঙ্কা করছে। তাই তাদের মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সারা দেশে যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে তা মুহূর্তেই বিনষ্ট হতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে পুলিশ এখনই নির্বাচনী কোনো কাজে মাঠে নামতে দেবে না বিএনপি নেতা-কর্মীদের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তারা।

পুলিশ সদর দফতরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোথাও যেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা সমবেত হতে না পারে। যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় মামলা রয়েছে, যারা ইতিপূর্বে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন, পুলিশের চোখে যারা অপরাধী এবং যারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, তাদের তালিকা ধরে নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের যুক্তি, এতে অপরাধীরা গা-ঢাকা দেবে। কোথাও জড়ো হয়ে সহিংসতার চেষ্টা করতে পারবে না। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে বিভিন্ন থানায় পুলিশ তালিকা করে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। রাজধানীসহ আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদীর বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলার শেষ নেই। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সহিংসতার আশঙ্কা বেশি যেমন— রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা,  কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ আরও বেশ কিছু জেলায় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের তালিকা করে নতুন মামলা দিচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায়ও বিভিন্ন থানায় নতুন মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে। এসব মামলায় মূলত স্থানীয় পর্যায়ে যারা দলের সংগঠক বা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের আসামি করা হচ্ছে। এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হচ্ছে বিভিন্ন মামলায়। একইভাবে দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায়ও দলীয় নেতাদের আসামি করে মামলা করা হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, যাতে কেউ রাস্তায় নেমে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। ঢাকা মহানগরীর একাধিক থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে বিএনপি। এ অবস্থায় পুলিশও সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। কারণ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হলে বিএনপি মাঠে নামার চেষ্টা করতে পারে—এমন চিন্তা আছে পুলিশের। গতকাল রাজধানীর একটি কর্মসূচিতে বিএনপির গায়েবি মামলার অভিযোগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমাদের আইনের বইয়ে যেসব অপরাধের কথা বলা আছে, সেসব অপরাধ যদি কেউ করে তাহলে মামলা হবে। অপরাধ না করলে মামলার কোনো আশঙ্কা নেই। মামলাগুলো নিয়ে এখন তদন্ত হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তদন্তের পরে যদি কোনো অভিযোগ না পাওয়া যায় তাহলে চূড়ান্ত রিপোর্টের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। আর যাদের অপরাধ পাওয়া যাবে তাদের বিচারের জন্য আদালতে দাঁড়াতে হবে। যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ করা খাসলতে পরিণত হয়েছে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হয়েছে। আসলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে বিএনপি নেতারা নাশকতার ছক তৈরি করছেন, গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা দিতে পারে। পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া বা গ্রেফতার করার কথা নয়।