চুয়াডাঙ্গাঃ
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ অবশেষে তার পরকীয়া প্রেমিকা আকলিমা খাতুনকেই (২৪) বিয়ে করলেন। আলোচিত এ গ্রাম পুলিশের দ্বিতীয় বিয়ে ঠেকাতে প্রথম স্ত্রী ও তার একমাত্র মেয়ে বিষের বোতল নিয়ে সামনে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায়নি তাদের বিয়ে।
রোববার বিকেলে সালিস বৈঠকে দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ের সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত ওই দিন রাতে এক লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ পরকীয়া প্রেমিকার সাথে জনতার হাতে আটকের পর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচর ঝড় তুলেছে। এদিকে সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বিচার দাবি করা হয়েছে।
উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন (৩০) বাঁকা পূর্বপাড়ার আবুল কাশেমের মেয়ে (এক সন্তানের জননি) আকলিমা খাতুনের (২৪) সাথে দীর্ঘ দিন ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। তারা বিয়ের আগেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাত কাটিয়ে আসছিলেন। একই ভাবে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কামাল উদ্দিন পরকীয়া প্রেমিকা আকলিমাদের বাড়িতে গেলে সেখানে তারা ঘরের ভেতরে অবস্থান করা জনতার হাতে আটক হয়। সুযোগ বুঝে গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন তার মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।
পরকীয়া প্রেমিকা আকলিমার পরিবার এমন পরিস্থিতিতে কোনো উপায় না পেয়ে গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিনের বিচারের দাবিতে থানা পুলিশের সহায়তা চান। এ অবস্থায় বেকায়দায় পড়ে গ্রাম পুলিম কামাল। একপর্যায়ে ঘটনাটি নিয়ে গত রোববার বিকালে বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে এক সালিস সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সালিস সভায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান ও জীবননগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমির হোসেনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড মেম্বার ও উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজনের উপস্থি ছিলেন।
সালিস সভায় গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন তার পরকীয়া প্রেমিকা আকলিমাকে বিয়ের আগেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানোর কথা স্বীকার করে বিয়ে করতে সম্মতি প্রকাশ করেন। কিন্তু পরে বিয়ে ঠেকাতে গ্রাম পুলিশের স্ত্রী ও মেয়ে বিষের বোতল নিয়ে হাজির হয়। তাদের দাবি ছিল এ বিয়ে হলে তারা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রাম পুলিশ কামাল তার স্ত্রী-সন্তানকে শান্ত করে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, সালিস সভায় দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও পরে আকলিমার সম্মতিতেই এক লাখ টাকায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। শুনেছি বিয়ের সময় গ্রাম পুলিশের স্ত্রী-সন্তানেরা আপত্তি তুলেছিল। তবে বিষের বোতল নিয়ে গিয়েছিল কি-না আমি জানি না।
আকলিমা খাতুন বলেন, সালিস সভায় দেড় লাখ টাকায় বিয়ের কথাবার্তা হলেও পরে আপত্তি তোলায় আমি এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই। ভাগ্যে যা আছে তাই-ই হবে। রোববার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ফরজ আলীর বাড়িতে বিয়ের সময় কামাল উদ্দিনের স্ত্রী-সন্তান সেখানে গিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিল।
জীবননগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমির হোসেন বলেন, আমি বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট অফিসার হিসেবে সালিস সভায় ছিলাম। সেখানে দেড় লাখ টাকায় বিয়ের কথাবার্তা হয়েছিল। পরে কি হয়েছে জানি না।
উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিনের সাথে আকলিমা খাতুনের এক লাখ টাকায় বিয়ে হয়েছে। কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি। যে কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছি না।