পাখি ও মানুষের অবিশ্বাস্য ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার বহু উদাহরণই পৃথিবীতে আছে। তবে তা হয়ে থাকে সাধরাণত স্ব-জাতিতে। কিন্তু পাখি ও মানুষের এমন ভালোবাসা সত্যিই বিরল ঘটনা। সন্তানের মতো বড় হচ্ছে সান ও এলেক্স। এই সান ও এলেক্স উত্তর আমেরিকার সান-কুনুড় জাতের পাখি। ডাকলেই ছুটে আসে কাছে। এমন দৃশ্য দেখলে সত্যিই যে কেউ অভিভুত না হয়ে পারবে না।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জাড়গ্রামের আক্তারুজ্জামান-ফারিয়া দম্পতির বাড়ি। বাড়িতে ঢুকেই আকস্মিক ঘটনা দেখে থমকে যেতে হয়। পরম মমতায় বেড়ে উঠছে এই পাখি জোড়া। ভালোবেসে নাম দেওয়া হয়েছে সান ও এলেক্স। এ গাছ-ও গাছে যাচ্ছে আবার ডাকা মাত্র ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে আসছে। কখনও তার ঘাড়ে, কখনও তার মাথায় আবার কখনও বা হাতে সময় কাটাচ্ছে তারা। ২ বছর বয়সী সান-এলেক্সকে নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ান পুরো গ্রাম। এমন আশ্চর্যজনক ভালোবাসা দেখে সবাই থমকে যায়। মাত্র ২৪ হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া সান-কুনুড় জাতের টিয়া কিনেছিলেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান। তখন তাদের চোখ ফোটা-ফোটা ভাব। সেই থেকেই তাদের সাথে খায়, ঘুরে বেড়ায়, গোসল করে এ জোড়া টিয়া।
ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক যুবক জানান, এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। বিদেশী জাতের পাখি তারা পোষ মানিয়েছে। এই পাখি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে। তারা যেখানে যায় সেখানেই এই পাখি নিয়ে যায়। ডাকলেই পাখি দুইটা কাছে চলে আসে।
গোলাম মোস্তফা নামে এক প্রতিবেশী জানান, প্রায় ৪ বছর যাবৎ তারা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি লালন-পালন করে। এমনভাবে পোষ মানিয়েছে যে পাখি ছেড়ে দিলেও ডাকলে কাছে চলে আসে। পাখি দুইটা দেখতে খুবই সুন্দর। একদম সন্তানের মতো করে তারা পাখি লালন-পালন করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে এই পাখি দেখতে।
পাখি প্রেমী ফারিয়া আক্তার রিয়া বলেন, সান আর এলেক্সের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ। ওরা আঙুর, আপেল এমনকি ভাতও খায়। আবার ঘুমায়ও আমাদের সাথে। ওরা আমার ভাষা বোঝে। কথার আকার ইঙ্গিতও বোঝে। ওদের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। সান ও এলেক্স ছাড়া যেমন আমি থাকতে পারি না তেমনি ওরাও আমাদের ছাড়া থাকতে পারে না। বেশিরভাড় সময় ওরা আমার হাতে, মাথায়, ঘাড়েই সময় কাটায়। ছেড়ে দিলেও ডাকলে কাছে চলে আসে। আমি ওদেরকে মায়ের আদর-ভালোবাসা-স্নেহ দিয়ে বড় করছি। ওদেরকে আমরা আদর করে বাবাই বলে ডাকি।
ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান বলেন, পাখি লালন-পালন করার প্রধান কারণ হচ্ছে অবসর সময় কাটানো। তাছাড়া বর্তমানে মোবাইলের প্রতি আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে মূলত পাখি লালন-পালন করা ভালো। পাখি লালন-পালন করতে বেশ সময় দিতে হয়। শখ থেকেই মূলত পাখি লালন-পালন করি। সাড়ে ৩ বছর ধরে তিনি পাখি পুষছেন। সান-কুনুড় জাতের এই পাখি তিনি ২ বছর ধরে পুষছেন। ভবিষ্যতে একটি বড় পাখির খামার করার ইচ্ছা তার।