ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাথরকাণ্ডে সিলেটের ডিসি প্রত্যাহার, ইউএনওকে বদলি

  • সবুজদেশ ডেস্ক:
  • Update Time : ১০:২৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে।

 

কোটি কোটি টাকার পাথর লুটের পর সিলেটের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এখন কংকালসার। রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা সবাই বহাল তবিয়তে থাকলেও শুধু নেই পাথর। সেখানে এমন ঘটনা ঘটার পর অনেকটা জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় ও জাতীয় ইস্যু ছাড়িয়ে সাদাপাথর ইস্যু সবার মুখে মুখে। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশনা ও জনরোষ বিবেচনায় সেখানে লুট হওয়া পাথরের কিছু পরিমাণ কুড়িয়ে এনে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চলছে। তবে সর্বস্তরের সিলেটবাসী ও প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা- রাষ্ট্রীয় সম্পদ জঘন্যভাবে খেয়ানতের দায় কার?

আইনবিদরা একবাক্যে বলছেন, দায়ের করা এ সংক্রান্ত মামলাতেই আড়াল করা হয়েছে মূল অপরাধীদের। তবে সাদাপাথরের ঘটনাকে ঘিরে যখন হুলুস্থুল, আর এ ঘটনাকে ঘিরে সমালোচনার শীর্ষে থাকা দুই কর্মকর্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সোমবার।

তারা হলেন- সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। ফেঞ্চুগঞ্জে বদলি করা হয়েছে আজিজুন্নাহারকে।

আইনবিদরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ মানেই জনগণের সম্পদ। আর এই সম্পদের সুরক্ষার জন্য স্তরে স্তরে, ধাপে ধাপে দপ্তর অনুযায়ী দায়িত্বশীলরা আছেন। তারা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন, তাহলে পাথর থাকবে না কেন? শত শত বারকিযোগে হাজার হাজার শ্রমিক, শত শত নৌকা-ট্রাক দিয়ে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর নিয়ে গেল লুট করে, তাহলে সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা কি করছিলেন? আর সিভিল, পুলিশ ছাড়াও খোদ সেনাবাহিনী এখন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে রয়েছে।

এমন সব প্রশ্ন আইনজ্ঞ ছাড়াও সাধারণের মধ্যে। তাদের মতে, যেসব দপ্তর-প্রতিষ্ঠান সাদাপাথরের সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ সেসব দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন এবং লুটপাটে জড়িত থাকা-দায়িত্বহীনতায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পাথর লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলা তর্জমা করেও হতাশ আইনজ্ঞরা। তারা দাবি করছেন, পাথর লুটের মামলাতেও মূল অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। এমন দাবি আইনবিদ এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলামের। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এতবড় বিপর্যয়ের দায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারেনা। এই তিন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে করা মামলা তেমন গ্রহণযোগ্য ও নয়।

তিনি বলেন, উচ্চ আদালত তালিকা করে পাঠানোর কথা- সেই তালিকা কারা, কিভাবে করছে, প্রকৃত অভিযুক্তদের নাম তালিকায় যাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

অপর আইনজ্ঞ শহীদুজ্জামান বলেন, দুই হাজার আসামি আর মিডিয়াকে সাক্ষী করে মামলা হলে কী হবে, সেই মামলায় আইনের দৃষ্টিতে যারা মূল অভিযুক্ত তাদের কৌশলে রেহাই দেওয়া হয়েছে।

তার মতে, ঘটনাস্থলের গ্রামপুলিশ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ, ইউনিয়ন তহশিল অফিস থেকে এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টরা, ইউএনও থেকে জেলা প্রশাসন তারাও রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-লুটের দায় কেউ এড়াতে পারেন না। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্বে তারা নিয়োজিত এবং এজন্যই তারা বেতন নেন। অভিযুক্তের দ্বিতীয় ধাপে আসবে পাথর চোর ও লুটেরাদের নাম।

তিনি বলেন, মামলায় যেসব ধারার সুপারিশ করা হয়েছে তাতে কৌশলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের আড়াল করা হয়েছে। রেহাই দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে মূল অপরাধীদের।

গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আনোয়ারুল হাবীব সাদাপাথরে পাথর লুটের ঘটনায় গণমাধ্যমকে সাক্ষী দেখিয়ে অজ্ঞাত ১৫০০-২০০০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। এতে খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এর ধারা ৪(২) (ঞ) এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ৯৩(১) খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এর ৫ ধারা অপরাধে ও দণ্ড বিধি ১৮৬০ এর ৩৭৯নং ধারা ও ৪৩১নং ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন।

মামলার ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, অনেকদিন ধরে চলে আসা সাদা পাথরের লুটপাটের বিষয়ে দায়ের করা মামলায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম দেখানো হয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলাতে প্রকৃত অভিযুক্ত দপ্তর-প্রতিষ্ঠানকে আড়াল করে রেহাই দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসব বিষয় প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরার সিলেট জেলা সদস্য সচিব আব্দুল করিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মেঘালয়ের খাসি হিলের উজান ঢল নামে ধলাই নদী দিয়ে। সেই উত্তাল ঢল সামলাত নদীর দুই তীরে থাকা পাথরের প্রাকৃতিক গাইড ওয়াল। চোর আর লুটেরারা সব নিয়ে গেছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নেবেন না কেন?

পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, সাদাপাথর লুটের ঘটনায় শুধু পাথরের ক্ষতি কেন, ওখানের পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি আর সিলেটের পর্যটনের বিরাট ধস এটা কি ক্ষয়ক্ষতি নয়?

তিনি বলেন, সব কিছুর জরিপ হওয়া জরুরি।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও ইউএনও আজিজুন্নাহারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লুটপাট বন্ধে দায়িত্বশীল আচরণ না করে উল্টো লুটপাটে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। সাদাপাথর লুট নিয়ে কয়েক মাস ধরেই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছিল। এসবের পরও স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষে পদে থেকেও ইউএনও আজিজুন্নাহার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।

স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে, আজিজুন্নাহার কোম্পানীগঞ্জে ইউএনও থাকাকালে যুবদলের সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমদ রুহেলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এই বাহার আহমদ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির শীর্ষ লুটেরাদের একজন হওয়ার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লাইনম্যান হিসেবে মাসোহারা আদায় করতেন। সে টাকাই সাদাপাথর লুটে ইউএনও আজিজুন্নাহারকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বলে সম্প্রতি জনশ্রুতি প্রচার পেয়েছে।

এর আগে রোববার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানও সাদাপাথর লুটে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ করেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে বদলির পর এবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকেও বদলি করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ইউএনওকে বদলির বিষয়টি জানা গেছে। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি করা হয়। এদিন সিলেটে নতুন ডিসিও দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের নতুন ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ৩৬তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা বর্তমানে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনওর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

সিলেটের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. সারওয়ার আলম। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সংযুক্ত) সারওয়ার আলম এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন।

সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সিলেটে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান সারওয়ার আলম।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

পাথরকাণ্ডে সিলেটের ডিসি প্রত্যাহার, ইউএনওকে বদলি

Update Time : ১০:২৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

 

কোটি কোটি টাকার পাথর লুটের পর সিলেটের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এখন কংকালসার। রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা সবাই বহাল তবিয়তে থাকলেও শুধু নেই পাথর। সেখানে এমন ঘটনা ঘটার পর অনেকটা জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় ও জাতীয় ইস্যু ছাড়িয়ে সাদাপাথর ইস্যু সবার মুখে মুখে। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশনা ও জনরোষ বিবেচনায় সেখানে লুট হওয়া পাথরের কিছু পরিমাণ কুড়িয়ে এনে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চলছে। তবে সর্বস্তরের সিলেটবাসী ও প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা- রাষ্ট্রীয় সম্পদ জঘন্যভাবে খেয়ানতের দায় কার?

আইনবিদরা একবাক্যে বলছেন, দায়ের করা এ সংক্রান্ত মামলাতেই আড়াল করা হয়েছে মূল অপরাধীদের। তবে সাদাপাথরের ঘটনাকে ঘিরে যখন হুলুস্থুল, আর এ ঘটনাকে ঘিরে সমালোচনার শীর্ষে থাকা দুই কর্মকর্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সোমবার।

তারা হলেন- সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। ফেঞ্চুগঞ্জে বদলি করা হয়েছে আজিজুন্নাহারকে।

আইনবিদরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ মানেই জনগণের সম্পদ। আর এই সম্পদের সুরক্ষার জন্য স্তরে স্তরে, ধাপে ধাপে দপ্তর অনুযায়ী দায়িত্বশীলরা আছেন। তারা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন, তাহলে পাথর থাকবে না কেন? শত শত বারকিযোগে হাজার হাজার শ্রমিক, শত শত নৌকা-ট্রাক দিয়ে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর নিয়ে গেল লুট করে, তাহলে সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা কি করছিলেন? আর সিভিল, পুলিশ ছাড়াও খোদ সেনাবাহিনী এখন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে রয়েছে।

এমন সব প্রশ্ন আইনজ্ঞ ছাড়াও সাধারণের মধ্যে। তাদের মতে, যেসব দপ্তর-প্রতিষ্ঠান সাদাপাথরের সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ সেসব দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন এবং লুটপাটে জড়িত থাকা-দায়িত্বহীনতায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পাথর লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলা তর্জমা করেও হতাশ আইনজ্ঞরা। তারা দাবি করছেন, পাথর লুটের মামলাতেও মূল অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। এমন দাবি আইনবিদ এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলামের। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এতবড় বিপর্যয়ের দায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারেনা। এই তিন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে করা মামলা তেমন গ্রহণযোগ্য ও নয়।

তিনি বলেন, উচ্চ আদালত তালিকা করে পাঠানোর কথা- সেই তালিকা কারা, কিভাবে করছে, প্রকৃত অভিযুক্তদের নাম তালিকায় যাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

অপর আইনজ্ঞ শহীদুজ্জামান বলেন, দুই হাজার আসামি আর মিডিয়াকে সাক্ষী করে মামলা হলে কী হবে, সেই মামলায় আইনের দৃষ্টিতে যারা মূল অভিযুক্ত তাদের কৌশলে রেহাই দেওয়া হয়েছে।

তার মতে, ঘটনাস্থলের গ্রামপুলিশ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ, ইউনিয়ন তহশিল অফিস থেকে এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টরা, ইউএনও থেকে জেলা প্রশাসন তারাও রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-লুটের দায় কেউ এড়াতে পারেন না। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্বে তারা নিয়োজিত এবং এজন্যই তারা বেতন নেন। অভিযুক্তের দ্বিতীয় ধাপে আসবে পাথর চোর ও লুটেরাদের নাম।

তিনি বলেন, মামলায় যেসব ধারার সুপারিশ করা হয়েছে তাতে কৌশলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের আড়াল করা হয়েছে। রেহাই দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে মূল অপরাধীদের।

গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আনোয়ারুল হাবীব সাদাপাথরে পাথর লুটের ঘটনায় গণমাধ্যমকে সাক্ষী দেখিয়ে অজ্ঞাত ১৫০০-২০০০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। এতে খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এর ধারা ৪(২) (ঞ) এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ৯৩(১) খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এর ৫ ধারা অপরাধে ও দণ্ড বিধি ১৮৬০ এর ৩৭৯নং ধারা ও ৪৩১নং ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন।

মামলার ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, অনেকদিন ধরে চলে আসা সাদা পাথরের লুটপাটের বিষয়ে দায়ের করা মামলায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম দেখানো হয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলাতে প্রকৃত অভিযুক্ত দপ্তর-প্রতিষ্ঠানকে আড়াল করে রেহাই দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসব বিষয় প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরার সিলেট জেলা সদস্য সচিব আব্দুল করিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মেঘালয়ের খাসি হিলের উজান ঢল নামে ধলাই নদী দিয়ে। সেই উত্তাল ঢল সামলাত নদীর দুই তীরে থাকা পাথরের প্রাকৃতিক গাইড ওয়াল। চোর আর লুটেরারা সব নিয়ে গেছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নেবেন না কেন?

পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, সাদাপাথর লুটের ঘটনায় শুধু পাথরের ক্ষতি কেন, ওখানের পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি আর সিলেটের পর্যটনের বিরাট ধস এটা কি ক্ষয়ক্ষতি নয়?

তিনি বলেন, সব কিছুর জরিপ হওয়া জরুরি।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও ইউএনও আজিজুন্নাহারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লুটপাট বন্ধে দায়িত্বশীল আচরণ না করে উল্টো লুটপাটে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। সাদাপাথর লুট নিয়ে কয়েক মাস ধরেই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছিল। এসবের পরও স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষে পদে থেকেও ইউএনও আজিজুন্নাহার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।

স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে, আজিজুন্নাহার কোম্পানীগঞ্জে ইউএনও থাকাকালে যুবদলের সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমদ রুহেলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এই বাহার আহমদ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির শীর্ষ লুটেরাদের একজন হওয়ার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লাইনম্যান হিসেবে মাসোহারা আদায় করতেন। সে টাকাই সাদাপাথর লুটে ইউএনও আজিজুন্নাহারকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বলে সম্প্রতি জনশ্রুতি প্রচার পেয়েছে।

এর আগে রোববার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানও সাদাপাথর লুটে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ করেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে বদলির পর এবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকেও বদলি করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ইউএনওকে বদলির বিষয়টি জানা গেছে। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি করা হয়। এদিন সিলেটে নতুন ডিসিও দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের নতুন ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। ৩৬তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা বর্তমানে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনওর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

সিলেটের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. সারওয়ার আলম। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সংযুক্ত) সারওয়ার আলম এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন।

সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সিলেটে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান সারওয়ার আলম।

সবুজদেশ/এসএএস