পাবনায় অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করার ঘটনায় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। তারা কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি জানায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে ফটকের তালা ভেঙ্গে ফেলে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলেজে এসে প্রধান ফটক ও শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করেই কলেজ থেকে ফিরে যান। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হাজার হাজার শিক্ষার্থী।এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রধান গেটের তালা ভেঙে কলেজে প্রবেশ করেন।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, কলেজের স্টাফ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও গণিতের বিভাগীয় প্রধান ম্যুরারি মোহন দাস, ইংরেজি বিভাগের প্রধান রবিউল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম ও দর্শন বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা অভিযোগ করে জানান, কলেজের সামনের ১ দশমিক ২৭ একর জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে বিচারাধীন মামলায় কলেজের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কলেজের প্রধান ফটক তালা মেরে বন্ধ করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ ও ৪ শিক্ষক। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
জানা গেছে, কলেজের সামনের ১.৩৩ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নিয়ে কলেজের সাথে দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা চলছে। এই মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। মামলার বাদী মহিউদ্দিন জানান, ‘আমরা সকল ক্ষেত্রেই আদালতের রায় পেয়েছি। এরআগে হাইকোর্ট ওই জমি মন্ত্রণালয় হতে অধিগ্রহনের জন্য কলেজের অধ্যক্ষকে কার্যক্রম করার আদেশ দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ অধিগ্রহনের কার্যক্রম না করে আপীল করেন। এজন্য উচ্চ আদালত সোমবার অধ্যক্ষকে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য তলব করেছে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি বলেন, ৬০ বছরের পুরোনো এই কলেজে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলের প্রধান ফটক তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরাও দাবি জানিয়েছি। অধ্যক্ষসহ ৪ শিক্ষককে দ্রুত অপসারণ করা হোক। এই দাবিতে গণস্বাক্ষর যুক্ত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রদান করা হবে।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।
কলেজের স্টাফ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও গণিতের বিভাগীয় প্রধান ম্যুরারি মোহন দাস বলেন, অধ্যক্ষের নির্দেশে কলেজের প্রধান ফটকে আমি তালা মেরেছি, এখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে জেনে তিনি আমাকে ‘পরিবেশ শান্ত রাখতে যা যা করা প্রয়োজন’ তা করতে বলেছেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(সি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, কর্তৃপক্ষ কি উদ্দেশ্যে তালা মেরেছে তা আমরা জানিনা। তবে কলেজের মূল রাস্তা প্রয়োজন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি কলেজের প্রধান ফটকে তালা মারার কথা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুর রহিম বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী রাতে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য রাতে প্রধান ফটকে তালা দেয়ার নির্দেশনা ছিল। হাইকোর্টে তলবের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিচারাধীন মামলা প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে চাই না। মন্ত্রণালিের নির্দেশনা মোতাবেকই কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, জমি-জমা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার বিষয়ে আমরা শিক্ষক মানুষ কিছুই বুঝি না। তাই আমি ও উপাধ্যক্ষ বদলির জন্য ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।