সবুজদেম ডেক্সঃএকাদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোলে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগেই জমে উঠেছে রাজধানীর নির্বাচন। এরই মধ্যে পাড়া-মহল্লায় দলীয় প্রতীকে ভোট চাইছেন নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত ছেয়ে গেছে বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে।

শুধুমাত্র রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালী নয়— ঢাকার দুই সিটি এলাকা ছেয়ে গেছে নির্বাচনী পোস্টারে। সরেজিমন রাজধানীর গুলশান, বনানী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-১৭ আসনে এমপি পদপ্রার্থী বিভিন্ন ব্যক্তির নামে টানানো হয়েছে পোস্টার। সৈনিক ক্লাব এলাকায় মো. হাচান আলী মোল্লার নামে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাচান আলী মোল্লার নামে ঢাকা-১৭ আসনের সর্বস্তরের জনগণের নাম দিয়ে বনানীর বিভিন্ন সড়কের দেয়ালে লাগানো হয়েছে এসব পোস্টার। অফিস, বাড়ি বা দোকানের দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, ল্যাম্পপোস্টসহ যে কোনো জায়গায় তাকালেই চোখে পড়ছে ভোট প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার।

এমনও দেখা গেছে, এক প্রার্থীর পোস্টারের ওপর দিয়েই লাগানো হয়েছে আরেক প্রার্থীর পোস্টার। বনানী চার নম্বর রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ডানে বায়ে বিভিন্ন অফিসের দেয়ালে এ কে এম জসিমউদ্দিনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আরও বেশ কিছু পদ পদবি উল্লেখ করে ঢাকা-১৭ আসনের সর্বস্তরের জনগণের নাম দিয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। তার ঠিক দুই হাত দূরত্বে ‘এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ শিরোনাম দিয়ে মো. ওয়াকিল উদ্দিনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের অর্থ সম্পাদক ওয়াকিল উদ্দিনের নামের পোস্টার দেখা গেছে বনানী ১১ এবং ১৩ নম্বর সড়কেও।

৫ নম্বর সড়কের বিভিন্ন দেয়াল এবং ল্যাম্পপোস্টে ঢাকা-১৭ আসনে নৌকা প্রতীকে এমপি পদপ্রার্থী মেজর (অব.) দেলোয়ার এইচ খানের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। পোস্টারে তার পদ উল্লেখ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে। এই প্রার্থীর নামেও পোস্টার টানানো হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনের জনগণের পক্ষে।

নৌকা প্রতীকের বাইরে বনানীর কিছু এলাকায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ব্যানারে ববি হাজ্জাজের নামে পোস্টার টানানো হয়েছে। তবে এসব পোস্টার কার পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে— সেসব কিছু লেখা নেই। এ ছাড়া ঢাকা-১৬ আসনের বিভিন্ন রাস্তার মাথায় গেট তৈরি করা হয়েছে। গেটে এখলাস উদ্দিন মোল্লার নামে ব্যানারও দেখা গেছে। মিরপুর-১ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলছে ঢাকা-১৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার। শুধু বনানী, গুলশান, মহাখালী নয় রাজধানীজুড়েই চোখে পড়ছে বিভিন্ন দলের এমপি পদপ্রার্থীদের পোস্টার। রাজধানীর রামপুরা, জনসন রোড ও বাড্ডা এলাকায় ঝুলছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নামে ব্যানার পোস্টার। রামপুরার ওয়াপদা রোডে দলীয় প্রতীকযুক্ত ব্যানারে ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। রামপুরা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার ইসলাম রাসেলের নামে এ সড়কে ফেস্টুন লাগিয়েছে ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। তার ফেস্টুনটি পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের নামে এখনো দেখা যাচ্ছে অলিগলিতে। শুভেচ্ছাই নয়, সেখানে তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোটও চেয়েছেন।

তার এই ফেস্টুন ওয়াপদা রোড ছাড়াও হাজীপাড়া, আবুল হোটেল ও রামপুরা ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত ছেয়ে গেছে। শাহরিয়ার ইসলাম রাসেলের সঙ্গেও সমান পাল্লায় মাঠে নেমেছেন ফিরোজ আলম সুমন। তিনি (এফবিসিসিআই) রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও আল-কাদেরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তবে তার ব্যানার ও ফেস্টুনগুলো ঝোলানো হয়েছে জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ার অভিনন্দন জানিয়ে। একই প্রচারণায় রাখা হয়েছে নৌকার প্রতীকও। তার এসব ফেস্টুন আর ব্যানার মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার মাঝ বরাবর ছেয়ে গেছে, বাদ পড়েনি অলিগলিও। এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে পুরান ঢাকায় জজ কোর্টের সামনে টানানো হয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ব্যানার। ব্যানারটি মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোটও চাওয়া হয়েছে। ঢাকা-৬ আসনের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে এই ব্যানারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন।

অন্যদিকে মিরপুর ১১, পূরবী সিনেমা হল ও ইসিবি চত্বর পর্যন্তও ছেয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের ফেস্টুনে। এসব ফেস্টুনে এখলাছ উদ্দিন মোল্লাকে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ে নৌকা মার্কা চাওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় তারই ছোট ভাই ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লারও ফেস্টুন দেখা গেছে। বাড্ডা এলাকায় থানা যুবলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাস্তায় সারি সারি দড়ি বেঁধে ঝোলানো হয়েছে পোস্টার। কোন বাড়ির দেয়াল বাদ যায়নি। উত্তর বাড্ডা এলাকার বাড়ির মালিক শফিক উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হলেই কাগজের এসব পোস্টার গলে যায়। দিনের বেলা পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়ায় রাতে এসব পোস্টার লাগিয়ে যায়। সারা বছর বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে লাগাত, কিন্তু এখন সব পোস্টারই বিভিন্ন দলের এমপি পদপ্রার্থীদের।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here