গজারিয়া থানায় ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান, ওই বাসের সুপারভাইজার মো. জনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
ওসি বলেন, বাসটির চালক জামাল হোসেন, হেলপার মো. ফয়সাল এবং সুপারভাইজার মো. জনি খালে ফেলে দিয়েছিল পিয়ালকে।
বুধবার মুন্সীগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জসিম উদ্দিন খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জনির জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
চালক জামাল হোসেন এবং হেলপার মো. ফয়সালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে গজারিয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে থানার ওসি ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান।
পায়েল শনিবার রাতে হানিফ পরিবহনের (নং ৯৬৮৭) বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন। ভোররাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচে খালে তার লাশ পাওয়া যায়।
কোর্ট ইন্সপেক্টর হেদায়েতুল ইসলাম ভূইয়া ও গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান, সুপারভাইজারের মো. জনি পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। পরে তাকে আদালতে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন।
জনির বরাত দিয়ে ওসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়ার ভাটেরচরের কাছে যানজট সৃষ্টি হলে পায়েল প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে যান। কিন্তু আসার আগেই জ্যাম ছুটে যাওয়ায় গাড়ি ছেড়ে দেয়। এরপর পায়েল গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে এবং পরে গাড়ি থামানো হয়।
ওসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, গেটের সামনে থাকা পায়েল গেট খুলতেই ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এতে পায়েলের মুখে ও নাকে আঘাত লেগে রক্ত ঝড়তে থাকে। সুপারভাইজার চালককে ঘটনাটি জানালে চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল ও সুপারভাইজার মো. জনি পরামর্শ করেন।
“পরে গাড়িতে না তুলে রক্তাক্ত পায়েলকে জীবিত অবস্থায়ই চেংদোলা করে নিয়ে সামান্য দূরের ভাটেরচর ব্রিজের ওপর থেকে খালে ফেলে দেন তারা।”
ওসি বলেন, তখন ভোর প্রায় সাড়ে ৪টা; নির্জন সময়। যাত্রীরা ঘুমে ছিলেন। আর কেউ জেগে থাকলেও বিষয়টি বুঝতে পারেনি। ভেবেছে জ্যামে বাস থেমে আছে।
ওসি বলেন, “পায়েল জীবিত ছিলেন। এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে পায়েল মৃত্যুর আগে ১০ থেকে ১৫ কেজি পানি খেতে খেতে ডুবে যায়। তার পেটে পানি ছিল। ময়নাতদন্ত এবং সুরহতাল রিপোর্টে তা উল্লেখ রয়েছে।”
ওসি জানান, জনিকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ গজারিয়া থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি করেন জনি।
বুধবার ঢাকার আরামবাগ থেকে হানিফ পরিবহনের চালক জামাল হোসেন এবং হেলপার মো. ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গজারিয়া থানায় জিঞ্জাসাবাদ করা হচ্ছে বলে ওসি জানান।
ওসি জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তিনজনকে আসামি করে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেছেন পায়েলের মামা গোলাম সোরয়ার্দী বিপ্লব।
মামলা দায়েরের পরই পায়েলের লাশ নিয়ে সোরয়ার্দী চট্টগ্রাম রওনা হন। ভোরে লাশ চট্টগ্রামের হালিশহরের বাড়িতে নিয়ে গেলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকাল ৮টায় নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় হালিশহরে বি-ব্লকের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মামলার বাদী পায়েলের মামা ব্যবসায়ী সোরয়ার্দী বিপ্লব বলেন, “আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। পায়েলের মতো আর কারও যেন এমন নির্মম ঘটনার স্বীকার হতে না হয়।”
সাইদুর রহমান পায়েল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র। তিনি চট্টগ্রামের হালিশহরের গোলাম মাওলার ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে পায়েল সবার ছোট। বাবা ও বড় ভাই কাতারে চাকরি করেন। মা কোহিনুর বেগম গৃহিনী।