বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ পুলিশের অনাপত্তিপত্র জাল হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে এসব সনদ জাল করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। বারবার অভিযোগ উঠলেও জালিয়াতি বন্ধ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ১১ জুলাই দুবাইতে অবস্থিত আরব আমিরাত কনস্যুলেট থেকে দলিল সত্যায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। কনস্যুলেট বলেছে, মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার শাখা বিভিন্ন সময় সত্যায়ন করা বিভিন্ন দলিল, যেমন শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ, বিবাহ-সংক্রান্ত সনদ, পুলিশ অনাপত্তিপত্র মিশন থেকে মন্ত্রণালয়ে যাচাই করার জন্য পাঠানো হলে অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল বলে প্রমাণিত হয়।

দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে জানানো হয়, তারা জানতে পেরেছে ঢাকার পল্টন, প্রেসক্লাব, কাকরাইল, বিজয়নগর, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাভেল এজেন্ট অথবা দালালের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব সত্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি পুলিশের অনাপত্তিপত্রও অনলাইনে যাচাই করা হলে তা জাল প্রমাণিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে সত্যায়ন করা নিকাহনামা ও বিবাহসনদের বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ পাসপোর্টে উল্লিখিত স্বামী-স্ত্রীর নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে না। তারা জাল স্বাক্ষর ও সনদের কিছু নমুনা পররাষ্ট্র, আইন, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ যে অনাপত্তিপত্র দেয়, তা রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সনদ। এই অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে একজন নাগরিক সম্পর্কে যাচাই করা হয়। তার খোঁজখবর নেওয়া হয়। বিদেশ যাওয়ার পর ওই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই সনদের মাধ্যমে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে পারে; কিন্তু ইদানীং অনেক ট্রাভেল এজেন্সি বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে চুক্তির মাধ্যমে জাল অনাপত্তিপত্র দিচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নকল করে প্রতারণার অভিযোগে সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ের নকল কাগজপত্র, ৫৮ জেলার এসপি ও ৫৯ থানার ওসির নকল সিলসহ মোট ৫৭৭টি জাল সিল এবং ১ হাজার ৪৫০টি ভুয়া পুলিশ অনাপত্তিপত্র, দুটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়। মূলত এসব সিল ব্যবহার করেই পুলিশ অনাপত্তিপত্র
দেওয়া হয়।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতারক চক্র উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জাল সনদ’ তৈরি করে।

আরব আমিরাত থেকে যেসব জাল সনদের কপি পাঠানো হয়েছে, তার মধ্য রয়েছে কুমিল্লার চান্দিনার মো. ফারুকের বিষয়ে একটি অনাপত্তি সনদ। যেখানে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অনাপত্তি সনদ দিয়েছে। এতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) স্বাক্ষর রয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা এ প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। একই জেলার চৌদ্দগ্রামের আরশাদ মিয়া, সদরের শামীম মিয়া, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, পটিয়ার মো. মোক্তার হোসেন ও কক্সবাজারের কোলারবিলের সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুলের জাল পুলিশ অনাপত্তিপত্র পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জাল জন্মসনদ, বিবাহ-সংক্রান্ত সনদ, পাসপোর্টের কপি—এ রকম একাধিক কপি পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, একেকটা ঘটনার ক্ষেত্রে একেক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি দেশের জনগণকে ৩৪ ধরনের নাগরিক সেবা দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ধরনের সনদ দেওয়া থেকে শুরু করে বিদেশে অবস্থানকালেও বাংলাদেশিদের সহায়তা ও তথ্য দিয়ে থাকে তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here