পুলিশের সামনেই আ’লীগ নেতাকে কোপাল বিএনপি নেতা
রাজশাহীঃ
পুলিশের সামনেই বিএনপির এক নেতার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মচারী মহিদুল ইসলাম মোস্তফাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।
শুধু পুলিশই নয়, ওই সময় আহত মোস্তফার সঙ্গে তার মা, স্ত্রী এবং সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরিচালিত শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার কার্যালয়ে গত ১৫ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে।
মহিদুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর পবাপাড়া মহল্লায়। তিনি রুয়েট কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি। মহিদুল রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এখন শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক।
নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী মহিদুল ইসলামকে হত্যার চেষ্টা চালান। এ ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেছেন মহিদুল। পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তবে অন্য আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, তারা পলাতক।
গত ১০ আগস্ট স্ত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় বখাটেদের হাতে প্রকাশ্যে মারধরের শিকার হন রুয়েটের এক শিক্ষক। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচ দিনের মাথায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং পরিবারের সামনেই রুয়েটের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় যান মহিদুল ইসলাম। বিকালে পরিবারের নারী সদস্যরা চিড়িয়াখানার ভেতরের লেকে নৌকায় চড়েন। মহিদুল ইসলাম লেকের পাশে চেয়ারে বসে ছিলেন। চেয়ারটি নৌকার ইজারাদার ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আতাউর রহমানের। তার চেয়ারে বসায় আতাউর মহিদুল ইসলামকে অপমান করেন।
এ সময় দুইজনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আতাউরের লোকজন এসে মহিদুলকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এ সময় চিড়িয়াখানায় দায়িত্বরত রাজপাড়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আইয়ুব আলীসহ পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করে চিড়িয়াখানার কার্যালয়ে নিয়ে যান। এরপর চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন এবং সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম ও সঞ্জয় কুমার চাকির উপস্থিতিতে বিষয়টির মীমাংসার জন্য বসা হয়। তখনই আতাউরের লোকজন হামলা চালান।
মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মীমাংসায় বসার কিছুক্ষণের মধ্যে আতাউরের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এদের মধ্যে রাজশাহীর সুইট হত্যা মামলার আসামি মহিষবাথান এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইবরাহিম হোসেনও ছিলেন। তারা প্রথমেই লাঠির আঘাতে একটা টেবিলের কাঁচ ভেঙে ফেলেন। এরপর সেই কাঁচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা করা হয়।
এ সময় তার হাত কেটে যায়। এ ছাড়া তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তার সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই আসাদুল ইসলাম আসাদ (১৮), ভাগ্নে রিংকু (২২) এবং প্রতিবেশি কিরণ (২২) এবং সেলিম রেজা (২৮) আহত হন। সবাইকে কাঁচ দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তারা পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে মহিদুল থানায় মামলা করেন।
চিড়িয়াখানা কার্যালয়ের ভেতরেই এমন ঘটনা ঘটার বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশের সামনেই হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার এএসআই আইয়ুব আলী বলেন, আমরা প্রথমে মহিদুলকে উদ্ধার করে চিড়িয়াখানার কার্যালয়ে নিয়ে যাই। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মিমাংসা হচ্ছিল দেখে বাইরে আসি। আর তখনই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আবার গিয়ে আমরা আহতদের উদ্ধার করি।
এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ঘটনার পর মামলা হলে আমরা দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছি। মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা পালিয়ে থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুতই তারা ধরা পড়বে।