পূজামণ্ডপের অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
নড়াইলঃ
নড়াইলের কালিয়ায় পূজামণ্ডপে অনুদান দেওয়া টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মণ্ডপের কর্মকর্তাসহ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-১ আসনের নির্বাচনী এলাকায় (কালিয়া এবং সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন) এবার ১৬৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামের বাসিন্দা শিল্পপতি বাসুদেব ব্যানার্জি প্রতি বছরের মতো এবারো জেলা এবং উপজেলার প্রতিটি মণ্ডপে দুই হাজার করে টাকা অনুদান দেন। কালিয়ায় ১৬৪টি মণ্ডপে মোট তিন লাখ ২৮ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
অনুদানের টাকা বাসুদেব ব্যানার্জির ভাগ্নে বরুণ ব্যানার্জি কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ, কালিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোককুমার ঘোষ এবং কালিয়া পৌরসভার মেয়র মুশফিকুর রহমানের হাতে তুলে দেন। কিন্তু অধিকাংশ মণ্ডপের কর্মকর্তারা সেই টাকা পাননি।
বরুণ ব্যানার্জি বলেন, ‘মামা বাসুদেব ব্যানার্জি নড়াইল জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য দুই হাজার করে টাকা অনুদান পাঠান। কালিয়া উপজেলার ১৬৪টি মণ্ডপের অনুদানের তিন লাখ ২৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু শুনেছি বেশিরভাগ মণ্ডপের কর্মকর্তারা অনুদানের টাকা পাননি।’
সরেজমিন কালিয়ার ৩০টি পূজামণ্ডপের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ মণ্ডপের কর্মকর্তা এ অনুদানের কথা জানেন না। তারা কোনো টাকাও পাননি। কালিয়া পৌর এলাকার টাকা মেয়র মুশফিকুর রহমান এবং উপজেলা পর্যায়ের মণ্ডপগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বিতরণ করেন।
কালিয়া পৌরসভার কুলশুর মধ্যপাড়া সর্বজনীন পূজামণ্ডপের সভাপতি বিপদভঞ্জন তপস্বী বলেন, ‘পূজা শেষ হয়ে যাওয়ার পর লোকমুখে শুনেছি আমার মণ্ডপের জন্য এক ভদ্রলোক দুই হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা আমি পাইনি। আমার এই গ্রামে সাতটি মন্দিরে পূজা উদযাপন হয়ে থাকে। কোন মন্দিরেই অনুদানের টাকা পৌঁছায়নি।
একই গ্রামের গীতা তপস্বী, ধীরেন্দ্রনাথ অভিযোগ করে বলেন, কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
পুরুলিয়া ইউনিয়নে পাঁচটি মণ্ডপে, চাচুড়ি ইউনিয়নের ১১টি, খাশিয়াল ইউনিয়নের ১৪টি, জয়নগর ইউনিয়নের দুটি, কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের আটটি, বাঐসোনা ইউনিয়নে ১৪টি মণ্ডপে কোনো টাকা পৌঁছায়নি ।
জানতে চাইলে কালিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোককুমার ঘোষ বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে দেখি সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ, পৌর মেয়র মুশফিকুর রহমানসহ অপরিচিত দুই ব্যক্তি বসে আছেন। আমার কাছে উপজেলায় কতগুলো পূজা হচ্ছে জানতে চাইলে বলি, নড়াইল-১ আসনের নির্বাচনী এলাকায় ১৬৪টি মণ্ডপে শারদীয় পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে কালিয়া পৌর এলাকায় সাতটি।’
তিনি বলেন, ‘শুনেছি পৌর এলাকার টাকা পৌর মেয়র এবং উপজেলার টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান বিতরণ করেছেন। আমার বাড়িতে বাসুদেব ব্যানার্জির ছবিসম্বলিত একটি খামে দুই হাজার টাকা পৌর মেয়র নিজ হাতে পৌঁছে দেন।’
‘বাসুদেব ব্যানার্জির অনুদান দেওয়া কোনো টাকা আমি কিংবা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস বিশ্বাসের হাতে দেওয়া হয়নি।’
কালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেন, ‘৮৭টি পূজামণ্ডপের জন্য বাসুদেব ব্যানার্জির অনুদানকৃত টাকা পেয়েছি।’
‘সালামাবাদ, খাশিয়াল, জয়নগর, পহরডাঙ্গা, হামিদপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মন্ডপে গিয়ে বিতরণ করেছি। আর আমার ছেলেকে দিয়ে মাউলি এবং বাবরাহাচলা ইউনিয়নে বিতরণ করিয়েছি। বৃষ্টি-কাদার জন্য যে সব মন্দিরে যেতে পারিনি, তাদের ফোন করে আমার অফিসে বসে দিয়েছি। টাকা পাওয়া যায়নি বলে কেউ অভিযোগ করলে সে মিথ্যা বলছে।’
কালিয়া পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় এসেছি। পরে কথা বলছি।’ পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোককুমার কুণ্ড বলেন, ‘কালিয়ায় অধিকাংশ মণ্ডপে টাকা পৌঁছায়নি। যারা টাকা পাননি তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।’