ঢাকা ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ্যে বখাটের চড়-ঘুষি, লোকলজ্জায় মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা

Reporter Name

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় এক মাদ্রাসাছাত্রীকে প্রকাশ্যে চড়-ঘুষি মেরেছে এক বখাটে যুবক। এ ঘটনার পর লোকলজ্জায় ওই ছাত্রী (১৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়া থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মাদ্রাসাছাত্রী মাসুমা আক্তার ওই এলাকার চা দোকানি আমিনুল ইসলামের মেয়ে। মাসুমা চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসার আলিম (এইচএসসি) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাছাত্রী মাসুমা আক্তার পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অসুস্থ বাবার চা দোকানও দেখাশোনা করত। গত শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনসংলগ্ন তার বাবার চায়ের দোকান পরিষ্কার করতে যায় মাসুমা। সে সময় দোকানে জেলা শহরের আরামপাড়ার মোবারকের ছেলে কালামের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে একজনের তর্কাতর্কি হয়।

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। দোকানের মধ্যে মারামারি করতে দেখে মাসুমা আক্তার তাদের নিষেধ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে প্রকাশ্যে চড়-ঘুষি মারে কালাম। এর পর হাতুড়ি নিয়ে পেটাতে গেলে পালিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় মাসুমা।

পরে মাসুমা আক্তারের বাবা-মাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে অভিযুক্ত কালাম। এ ছাড়া কালাম দীর্ঘদিন ধরে পথেঘাটে মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশবৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। তবে দুদিন পেরিয়ে গেলেও তারা সালিশে বসেননি। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার বিচার না পেয়ে রোববার বেলা ৫টার দিকে নিজঘরে গলায় ফাঁস দেয় মাসুমা।

পরে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, চার বোনের মধ্যে মাসুমা আক্তার ছিল সবার ছোট। শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে আবুল কালাম প্রায়ই মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করত। এর আগে অ্যাসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল সে।
গত শুক্রবার দোকানের মধ্যে কালামসহ দুজন মারামারি করে। এতে প্রতিবাদ করে মাসুমা আক্তার। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে চড়-ঘুষি মারে কালাম। এতে ঘৃণায় রোববার বিকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মাসুমা।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উৎপলা বিশ্বাস জানান, মৃত অবস্থায় মাসুমাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, নিহত মাদ্রাসাছাত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান লালন বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ায় মাসুমা পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান দেখাশোনা করত। শুক্রবার দোকানের মধ্যে স্থানীয় এক যুবক তাকে চড়-ঘুষি মারে। এতে লোকলজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। অভিযুক্তকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৫:০৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
২৮৪ Time View

প্রকাশ্যে বখাটের চড়-ঘুষি, লোকলজ্জায় মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা

Update Time : ০৫:০৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় এক মাদ্রাসাছাত্রীকে প্রকাশ্যে চড়-ঘুষি মেরেছে এক বখাটে যুবক। এ ঘটনার পর লোকলজ্জায় ওই ছাত্রী (১৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়া থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মাদ্রাসাছাত্রী মাসুমা আক্তার ওই এলাকার চা দোকানি আমিনুল ইসলামের মেয়ে। মাসুমা চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসার আলিম (এইচএসসি) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাছাত্রী মাসুমা আক্তার পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অসুস্থ বাবার চা দোকানও দেখাশোনা করত। গত শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনসংলগ্ন তার বাবার চায়ের দোকান পরিষ্কার করতে যায় মাসুমা। সে সময় দোকানে জেলা শহরের আরামপাড়ার মোবারকের ছেলে কালামের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে একজনের তর্কাতর্কি হয়।

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। দোকানের মধ্যে মারামারি করতে দেখে মাসুমা আক্তার তাদের নিষেধ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে প্রকাশ্যে চড়-ঘুষি মারে কালাম। এর পর হাতুড়ি নিয়ে পেটাতে গেলে পালিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় মাসুমা।

পরে মাসুমা আক্তারের বাবা-মাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে অভিযুক্ত কালাম। এ ছাড়া কালাম দীর্ঘদিন ধরে পথেঘাটে মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশবৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। তবে দুদিন পেরিয়ে গেলেও তারা সালিশে বসেননি। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার বিচার না পেয়ে রোববার বেলা ৫টার দিকে নিজঘরে গলায় ফাঁস দেয় মাসুমা।

পরে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, চার বোনের মধ্যে মাসুমা আক্তার ছিল সবার ছোট। শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে আবুল কালাম প্রায়ই মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করত। এর আগে অ্যাসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল সে।
গত শুক্রবার দোকানের মধ্যে কালামসহ দুজন মারামারি করে। এতে প্রতিবাদ করে মাসুমা আক্তার। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে চড়-ঘুষি মারে কালাম। এতে ঘৃণায় রোববার বিকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মাসুমা।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উৎপলা বিশ্বাস জানান, মৃত অবস্থায় মাসুমাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, নিহত মাদ্রাসাছাত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান লালন বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ায় মাসুমা পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান দেখাশোনা করত। শুক্রবার দোকানের মধ্যে স্থানীয় এক যুবক তাকে চড়-ঘুষি মারে। এতে লোকলজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। অভিযুক্তকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।