খুলনা প্রতিনিধিঃ

করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা কর্মহীন মানুষদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আড়াই হাজার টাকা প্রাপকের তালিকা প্রনয়নে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণ বিতরনের মতই এই তালিকাও নাকি করা হয়েছে মুখ চিনে, এমন অভিযোগ বঞ্চিতদের।

যে তালিকায় স্থান পেয়েছে অর্থবিত্ত, বাড়ি গাড়ির মালিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি। এমনকি ফেয়ার প্রাইস প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা। রয়েছে একজন ব্যক্তির মোবাইল নম্বর একাধিক নিন্ম আয়ের মানুষের নামের পাশে। তালিকায় নাম থাকলেও এখন টাকা পাননি অনেকেই।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, গত ২৫ মার্চ থেকে সারা দেশের ন্যায় খুলনায়ও লকডাউন করা হয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে নিন্মআয়ের মানুষ। পরিস্থিতি এমন হয় যে, অনেকে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমসীম খেয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালীদের। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও দেয়া হয় কয়েকদফা ত্রাণ।

সূত্র জানায়, এই ত্রাণ বিতরণের সময় যে তালিকা করা হয়, সেই তালিকায় দলীয় নেতার অনুসারীদের নামই বেশী স্থান পায় বলে বঞ্চিতরা অভিযোগ করেন। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও তালিকা প্রনয়নে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাধাণ্য দেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ঈদ উল ফিতরের আগে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের অসহায় কর্মহীন মানুষদের (৫০ লাখ) ঈদ উপহার হিসেবে আড়াই হাজার টাকা দেন। যে তালিকা মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে করা হয়। অতি স্বল্প সময়ে এই তালিকা করতে দেয়া হয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। প্রতি ওয়ার্ডে দুই হাজার মানুষের তালিকা করতে দেয়া হয় তাদের।

কিন্তু কাউন্সিলররা জানান, তারা দুই হাজার মানুষের তালিকা করতে পারেননি। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিগত নির্বাচনের যারা সেন্টারের দায়িত্বে ছিলেন তারা এবং দলীয় ত্রাণ কমিটির সদস্যরাও এই তালিকা প্রস্তুত করেন।

নগরীর চানমারী ফাতেমা খাতুন, রিজিয়া, বাইতুল আমান মহল্লাহর আসমা, ফরিদা পারভিন, টুটপাড়া মেইন রোডের জাহানারা পারভিন, বিলকিস বেগম, আসমা পারভিন, রেজাউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তালিকা করার জন্য আমাদের কাছ থেকে নেতারা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় আমাদের নাম ওঠেনি। তালিকায় এমন মানুষের নাম উঠেছে যাদের এই আড়াই হাজার টাকা না হলেও চলবে। অনেকেই দশ টাকা কেজির চাল পেয়েছেন। তারাও রয়েছে তালিকায়। এমনকি যাদের মাসের লাখ টাকার উপরে আয় রয়েছে তাদের নাম দেয়া হয়েছে। একাধিক মানুষের নামের পাশে একজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিহাব উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকা প্রনয়নে আমাদের মাত্র তিন দিন সময় দেয়া হয়। যারা তালিকা করার দায়িত্ব পান এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের হাতে কয়েক হাজার জাতীয় পরিচয় পত্র জমা পড়ে। যাচাই বাছাই করার সময়ও ঠিক মত পাওয়া যায়নি। তবুও তালিকা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে অতি অসহায়রা এই টাকা পায়। তারপরও হাজার হাজার আইডি কার্ডের মধ্যে একটু ভুল হতেই পারে।

এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর এসএম মোজাফ্ফর রশিদী রেজা বলেন, আমার কাছে দুই শত জনের তালিকা করার দায়িত্ব ছিলো। আমি চেষ্টা করেছি ওয়ার্ডের অসহায়াদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য। আমি দুই হাজার মানুষের তালিকা দেখতে পাইনি। অন্য যারা তালিকা করেছেন তারাই আমার কাছ থেকে দুই শত জনের নাম নিয়ে গেছেন। এর বেশী আমি কিছু জানি না।

নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন বলেন, আমরা সঠিকভাবে তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। দুই হাজার মানুষের তালিকা করতে আমাদের কয়েক হাজার কার্ড যাচাই বাছাই করতে হয়েছে। সময় এতো কম ছিলো যে ২/১ টা ভুল হয়ে যেতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here