প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ইমরান খান
পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার একটু পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে প্রথমে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।
প্রেসিডেন্ট হাউস আইওয়ান-ই-সদরে প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন ইমরানকে শপথবাক্য পাঠ করান। ওই সময় ইমরানের চোখে জল দেখা গেলেও মুখে হাসি ছিল বলে জানায় বিবিসি।
অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাসিরুল মুলক, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সার, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনওয়ার খান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নভজিৎ সিং সিধু, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা ও ওয়াসিম আকরাম, সংগীতশিল্পী সালমান আহমেদ ও আবরারুল হক, অভিনেতা জাবিদ শেইখ, সাবেক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্পিকার ফাহমিদা মির্জা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাবার এই বিশেষ দিনে উপস্থিত ছিল না তাঁর দুই ছেলে। ইমরানের সাবেক প্রথম স্ত্রী জেমিমা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ছেলেরা যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের বাবাই না করেছে।’ তবে এসেছিলেন ইমরানের বর্তমান স্ত্রী বুশরা ইমরান। বিয়ের পর এই প্রথম তিনি বড় কোনো অনুষ্ঠানে মানুষের সামনে এলেন। শপথ গ্রহণ শেষে ইমরান ও ফার্স্ট লেডি বুশরা অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এরপর ইমরান তাঁর সরকারি বাসভবন প্রাইম মিনিস্টার হাউসে যান। সেখানে তাঁকে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্ট জাতীয় পরিষদের ১৭৬ জন সদস্য তাঁর পক্ষে ভোট দেন। একসময় ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপানো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান এখন দেশ শাসনের ক্ষমতা পেলেন।
প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ। ভোটাভুটিতে জাতীয় পরিষদের ৯৬ জন সদস্য শাহবাজকে ভোট দেন।
এরপর ইমরান খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সবার আগে আমরা যে কাজটি কবর তা হলো কঠোর জবাবদিহি করা হবে। আল্লাহর নামে বলছি, যারা এই দেশটিকে লুটে খেয়েছে, তাদের প্রত্যেকতে জবাবদিহি করতে হবে।’
গত ২৫ জুলাই পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ১১৬টি আসনে জয় পায় ইমরানের দল পিটিআই। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৭টি আসন না পাওয়ায় ছোট ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে হবে পিটিআইকে।
নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর থেকেই তাতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করে আসছে পিএমএল-এন। নির্বাচনে দলটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে। আর নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে জিতেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। নির্বাচনে কারচুপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করার জন্য একটি যৌথ কর্মকৌশলও ঘোষণা করে পিএমএল-এন ও পিপিপি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে একমত হতে পারেনি দল দুটি।
পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এর আগে ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের ভোটাভুটিতে তাঁর দল অংশ নেবে না। তাই পিএমএল-এনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শাহবাজ শরিফকে তাঁর দল সমর্থনও দেবে না। তবে গতকালের ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই মত পরিবর্তনের জন্য বিলাওয়াল ভুট্টোকে বোঝানোর চেষ্টা করেন পিএমএল-এনের নেতা ও জাতীয় পরিষদের সদ্য বিদায়ী স্পিকার আয়াজ সাদিক। কিন্তু তাতে খুব একটা ফল হয়নি। তবে পিপিপি ভোট বর্জন করলেও গতকাল পরিষদের অধিবেশনে বিলাওয়াল ভুট্টো উপস্থিত ছিলেন।