ঢাকা ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাণহীন কাঠের বুকে শিল্পকর্ম তৈরি করছেন কোটচাঁদপুরের মনিরুল

আব্দুল্লাহ বাশার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ):

 

শীতের সকালে গ্রামের আঁকা বাঁকা মেঠো পথে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কাঁধে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে গাছি। দুলছে ফেনা ওঠা রসের হাড়ী। ডাঙ্গা থেকে নৌকা নিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে নামাচ্ছেন পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। কাঁধে অস্ত্র নিয়ে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে যাচ্ছেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রজনতা। খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ছে যেন জীবন্ত দুটি বলাকা। বাইস্কোপ দেখাচ্ছেন শিশুদের। পাশেই বাচ্চাদের বুকে নিয়ে বসে আছে ঘুঘু পাখি। গভীর মনোযোগে প্রাণহীন কাঠের বুকে এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি করছেন শিল্পী কাজী মনিরুল ইসলাম ঝিনু। পাশেই ছড়ানো ছিটানো রয়েছে নানা ধরনের কাঠ কাটার যন্ত্রাংশ। কোনটা দেশ থেকে ক্রয় করেছেন, আবার কোনটা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে এসেছেন। এগুলো দিয়ে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেছেন গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, পাখিসহ নানা শিল্পকর্ম।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী মনিরুল ইসলাম ঝিনু গত ৫ বছর ধরে তৈরি করছেন নানা শিল্পকর্ম। পেশায় খামারী ছোটকাল থেকেই নানা শিল্পকর্ম তৈরি করতেন। করোনকালীন সময়ে ঘরবন্দি হওয়ার পর থেকে পুরোদমে শুরু করেন এ শিল্পচর্চা।

জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও করোনাকালে তিনি পুরোপুরি শিল্পী হয়ে উঠেছেন। অবসর কাটাতে বাড়ির সঙ্গে থাকা একটা টিনশেডের চারপাশ ঘিরে তৈরি করেছেন কারখানা। আড়ত আর নিজের বাগানের গাছের কাঠ দিয়ে শুরু করেন শিল্পকর্ম। নিষ্প্রাণ কাঠ হয়ে উঠতে থাকে জীবন্ত এক একটি গল্প। একে একে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেছেন খেজুরের রস সংগ্রহ করা গাছি, হাঁস, উড়ন্ত বলাকা, ঈগল, বজরা নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, বাংলার ঐতিহ্য বায়োস্কোপ, বংশীবাদকসহ নানা শিল্পকর্ম। নিভৃত গ্রাম বাংলার কোণে অন্যরকম সাধনার ফল দেখতে প্রতিনিয়ত আসেন নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। তার এ শিল্পকর্ম দেখে অভিভূত হন তারা।

শিল্পকর্ম দেখতে আসা জুয়েল ইসলাম সবুজদেশ নিউজকে বলেন, প্রাণহীন কাঠ এভাবে একটি জীবন্ত শিল্পকর্মে রূপ নিতে পারে তা অজানা ছিল। নিভৃত পল্লীতে বসে এত সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করছেন এটা অনেকেরই অজানা। আমরা চাই, এ কৃতি সন্তানকে সারাদেশব্যাপী সমাদৃত করার জন্য যা যা করার দরকার তা করা হোক। তার পরিশ্রম ও শৈল্পিকতা মূল্যায়ন পাক।’

শিল্পী মনিরুল ইসলাম ঝিনু সবুজদেশ নিউজকে বলেন, গ্রামবাংলার ঐহিত্য স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতেই তিনি এসব তৈরি করেন। আগামী দিনে দেশে ও বিদেশে তার এ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে তার।

সবুজদেশ/এসএএস

About Author Information
আপডেট সময় : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
৬৭ Time View

প্রাণহীন কাঠের বুকে শিল্পকর্ম তৈরি করছেন কোটচাঁদপুরের মনিরুল

আপডেট সময় : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

 

শীতের সকালে গ্রামের আঁকা বাঁকা মেঠো পথে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কাঁধে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে গাছি। দুলছে ফেনা ওঠা রসের হাড়ী। ডাঙ্গা থেকে নৌকা নিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে নামাচ্ছেন পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। কাঁধে অস্ত্র নিয়ে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে যাচ্ছেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রজনতা। খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ছে যেন জীবন্ত দুটি বলাকা। বাইস্কোপ দেখাচ্ছেন শিশুদের। পাশেই বাচ্চাদের বুকে নিয়ে বসে আছে ঘুঘু পাখি। গভীর মনোযোগে প্রাণহীন কাঠের বুকে এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি করছেন শিল্পী কাজী মনিরুল ইসলাম ঝিনু। পাশেই ছড়ানো ছিটানো রয়েছে নানা ধরনের কাঠ কাটার যন্ত্রাংশ। কোনটা দেশ থেকে ক্রয় করেছেন, আবার কোনটা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে এসেছেন। এগুলো দিয়ে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেছেন গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, পাখিসহ নানা শিল্পকর্ম।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী মনিরুল ইসলাম ঝিনু গত ৫ বছর ধরে তৈরি করছেন নানা শিল্পকর্ম। পেশায় খামারী ছোটকাল থেকেই নানা শিল্পকর্ম তৈরি করতেন। করোনকালীন সময়ে ঘরবন্দি হওয়ার পর থেকে পুরোদমে শুরু করেন এ শিল্পচর্চা।

জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও করোনাকালে তিনি পুরোপুরি শিল্পী হয়ে উঠেছেন। অবসর কাটাতে বাড়ির সঙ্গে থাকা একটা টিনশেডের চারপাশ ঘিরে তৈরি করেছেন কারখানা। আড়ত আর নিজের বাগানের গাছের কাঠ দিয়ে শুরু করেন শিল্পকর্ম। নিষ্প্রাণ কাঠ হয়ে উঠতে থাকে জীবন্ত এক একটি গল্প। একে একে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেছেন খেজুরের রস সংগ্রহ করা গাছি, হাঁস, উড়ন্ত বলাকা, ঈগল, বজরা নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, বাংলার ঐতিহ্য বায়োস্কোপ, বংশীবাদকসহ নানা শিল্পকর্ম। নিভৃত গ্রাম বাংলার কোণে অন্যরকম সাধনার ফল দেখতে প্রতিনিয়ত আসেন নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। তার এ শিল্পকর্ম দেখে অভিভূত হন তারা।

শিল্পকর্ম দেখতে আসা জুয়েল ইসলাম সবুজদেশ নিউজকে বলেন, প্রাণহীন কাঠ এভাবে একটি জীবন্ত শিল্পকর্মে রূপ নিতে পারে তা অজানা ছিল। নিভৃত পল্লীতে বসে এত সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করছেন এটা অনেকেরই অজানা। আমরা চাই, এ কৃতি সন্তানকে সারাদেশব্যাপী সমাদৃত করার জন্য যা যা করার দরকার তা করা হোক। তার পরিশ্রম ও শৈল্পিকতা মূল্যায়ন পাক।’

শিল্পী মনিরুল ইসলাম ঝিনু সবুজদেশ নিউজকে বলেন, গ্রামবাংলার ঐহিত্য স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতেই তিনি এসব তৈরি করেন। আগামী দিনে দেশে ও বিদেশে তার এ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে তার।

সবুজদেশ/এসএএস