ঢাকা ০৪:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা-২০১৯: বছর জুড়ে যে ঘটনাগুলো কুষ্টিয়ায় আলোচিত

Reporter Name

কুষ্টিয়াঃ

নানা ঘটনায় একটি বছর পার হয়েছে। দিন যায়, মাস আসে, মাস ঘুরে আসে নতুন বছর। বছরের শেষপ্রান্তে ফিরে দেখতে গিয়ে সামনে এসেছে কয়েকটি আলোচিত ঘটনা। এরমধ্যে কুষ্টিয়ার চালের বাজার সিন্ডিকেট ছিল সারাদেশের আলোচনার তুঙ্গে। মূলত এখানকার সিন্ডিকেটের কারণে সারাদেশের চালের বাজারে আগুন লাগে বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়। এজন্য সবার নজর ছিল কুষ্টিয়ায়।

এছাড়াও ২০১৯ সালের শুরুতেই আলোচনায় ছিল মিরপুরে বখাটেদের কাছে হার মানলেন স্কুলছাত্রী মুন্নী, চৌড়হাঁস মোড়ে গঞ্জেরাজ পরিবহনের ধাক্কায় শিশু আকিফা হত্যা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা, খোকসায় ত্রি-বার্ষিক সম্মলেন শুরু হওয়ার আগে চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলাগুলি, মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে কলেজছাত্র ইমন হত্যা ছিল কুষ্টিয়ার আলোচিত ঘটনা।

চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটে অস্থির ছিল সারাদেশ:

২০১৯সালের শুরু থেকেই বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল কুষ্টিয়ার চালকল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে সারাদেশের চাউলের বাজার। এই অস্থিরতার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। চালের বাজার অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেশ কিছু চালকল মালিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে বাজার অস্থির এখনও করছে। দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট করছে তারা। তবে গতবছরের মাঝামাঝি সময় চালের বাজার বৃদ্ধি হলেও ২০১৯সালের শেষ দিকে চালের বাজার কিছুটা কমে এসেছে।

মিরপুরে বখাটেদের কাছে হার মানলেন স্কুলছাত্রী মুন্নী:

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাতলমারি গ্রামের হেকমত আলী ওরফে ভাষার মেয়ে ও কেবিএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার মুন্নী। ২০১৯ সালের (২৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে মুন্নী তার চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য আমলা বাজারে ফুল কিনতে যায়। পথে মধ্যে এলাকার কয়েকজন বখাটে জোরপুর্বক পাশেই আমলা আলু বীজ খামারের মধ্যে নিয়ে যায়। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন মুন্নীকে উদ্ধার করে স্থানীয় মহিলা মেম্বার রেজেলা খাতুনের সাথে অটোরিকশা যোগে তার বাড়িতে পাঠায়। পথের মধ্যে মেম্বারকে হুমকি দিয়ে অটোরিকশা থামিয়ে মুন্নিকে ফের পাশর্^বর্তী ছাদিমনের বাড়ীতে নিয়ে যায়। এ সময় তার ওপর শারিরীকভাবে নির্যাতন করে ওই বখাটে যুবকরা। পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই বখাটেদের হাতে শারীরিক নির্যাতন ও আত্মসন্মানের ভয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মুন্নির চাচা হাশেম আলীর বাড়িতে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তার পড়ার টেবিলে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে বখাটেদের অত্যাচারের বিষয় তুলে ধরে সে। এ ঘটনায় মুন্নি’র পরিবার মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করলে সকল আসামিরা পুলিশের হতে গ্রেফতার হয়।

এঘটনার সবশেষ,পুলিশ এঘটনার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় গঞ্জেরাজ পরিবহনের ধাক্কায় শিশু আকিফা হত্যা:

ঘটনাটি ২০১৮ সালের হলেও মায়ের কোলে শিশু আকিফার রাস্তা পারা পারের
ভিডিও ফুটেজ দেখে দেশবাসীর চোখের পানি পড়েছে। উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট (বুধবার) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ পরিবহনের একটি বাস কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ের কাউন্টারে এসে থামে। সে সময় থেমে থাকা বাসের সামনে দিয়ে আট মাস বয়সী শিশু কন্যা আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পারা হচ্ছিলেন মা রিনা বেগম। হঠাৎ কোন হর্ণ ছাড়াই চালক খোকন বাসটি চালিয়ে দেন। এতে মায়ের কোল থেকে রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে গুরুত্বর আহত হয় শিশু কন্যা আকিফা। বাসের ধাক্কায় রিনা বেগমও আহত হন। মুমূর্ষু আবস্থায় ওই দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০আগষ্ট না ফেরার দেশে পাঁড়ি জমায় শিশু আকিফা। রাস্তার পাশে থাকা একটি দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সারা দেশেজুড়ে ব্যাপক চ্যাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

সারাদেশের মানুষ ওই সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত মায়ের কোলে শিশু আকিফার রাস্তা পারা পারের ভিডিও ফুটেজ দেখে চোখের পানি ফেলেছেন অনেকেই। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে নিহত আকিফার পিতা হারুন উর রশীদ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ঘাতক বাসের চালক খোকন, সুপারভাইজার ইউনুস মাষ্টার এবং ওই বাসের মালিক জয়নুলকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এঘটনার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা: গ্রামবাসীর তোপের মুখে পালিয়ে যান বুয়েট উপাচার্যঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী ও কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদকে হত্যা দেশী গণমাধ্যমসহ বিদেশী গণমাধ্যমে বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার ফাহাদের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) রোববার দিনগত রাত ৮টার দিকে শেরে বাংলা হলের ১০১১নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে শেরে বাংলা হলের একতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে (বুয়েট)সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। পরে দিন নিহত আবরার ফাহাদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।

দাফনের দুইদিন পর বুধবার বিকেল ৫টার দিকে আবরার ফাহাদের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান উপাচার্য। পরে তিনি আবরারের কবর জিয়ারত করেন। তারপর আবরার ফাহাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে হেঁটে রওনা হন তিনি। কিছু দুর গিয়েই গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন। আবরার ফাহাদের বাবার সাথে দেখা হলেও তার বাড়িতে ঢুকতে পারেননি উপাচার্য। এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিল ও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে ভিসি সাইফুল ইসলাম এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

খোকসায় সম্মলেন আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলাগুলি বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়:

২০১৯ সালের ২৫নভেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সকালে ত্রি-বার্ষিক সম্মলেন শুরু হওয়ার আগে চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের উত্তেজিত কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সভাস্থলে পুলিশ টহল পুলিশের পক্ষ থেকে জোরদার করা হয়েছিল। বৈঠা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁরা একে অপরকে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে খোকসা ইউনিয়নের ক্লাবমোড়, তেল পাম্প, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দুই দলের কর্মী সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তবে কুষ্টিয়া জেলায় বছরজুড়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেলেও বড় বিরুদ্ধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে বেশ কয়েক বছর যাবত এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কলেজছাত্র বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়:

২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কামরুজ্জামান ইমন (১৮) নামে এক কলেজছাত্র। ওই কলেজছাত্রের পরিবারের উদাসীনতা ও পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত ‘সমর্পণ’ নামে একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

দাফনের চারদিন পর অভিযুক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছিল নিহত ইমনকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে ইনজেকশন দেওয়ার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এঘটনা নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের।

ঘটনার আট দিন পর নিহত ইমনের চাচা মিরপুর থানায় বাদী হয়ে ঐ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় নিরাময় কেন্দ্রের মালিক আব্দুল মতিনসহ তিন সহযোগীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন ময়নাতদন্তের জন্য ওই কলেজছাত্রর মরদেহ কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়।

সবশেষ এ ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহর তদন্ত রিপোর্ট পেলেই আদালতে মাধ্যমে মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০১:৩৪:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২০
৫৮৪ Time View

ফিরে দেখা-২০১৯: বছর জুড়ে যে ঘটনাগুলো কুষ্টিয়ায় আলোচিত

Update Time : ০১:৩৪:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২০

কুষ্টিয়াঃ

নানা ঘটনায় একটি বছর পার হয়েছে। দিন যায়, মাস আসে, মাস ঘুরে আসে নতুন বছর। বছরের শেষপ্রান্তে ফিরে দেখতে গিয়ে সামনে এসেছে কয়েকটি আলোচিত ঘটনা। এরমধ্যে কুষ্টিয়ার চালের বাজার সিন্ডিকেট ছিল সারাদেশের আলোচনার তুঙ্গে। মূলত এখানকার সিন্ডিকেটের কারণে সারাদেশের চালের বাজারে আগুন লাগে বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়। এজন্য সবার নজর ছিল কুষ্টিয়ায়।

এছাড়াও ২০১৯ সালের শুরুতেই আলোচনায় ছিল মিরপুরে বখাটেদের কাছে হার মানলেন স্কুলছাত্রী মুন্নী, চৌড়হাঁস মোড়ে গঞ্জেরাজ পরিবহনের ধাক্কায় শিশু আকিফা হত্যা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা, খোকসায় ত্রি-বার্ষিক সম্মলেন শুরু হওয়ার আগে চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলাগুলি, মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে কলেজছাত্র ইমন হত্যা ছিল কুষ্টিয়ার আলোচিত ঘটনা।

চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটে অস্থির ছিল সারাদেশ:

২০১৯সালের শুরু থেকেই বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল কুষ্টিয়ার চালকল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে সারাদেশের চাউলের বাজার। এই অস্থিরতার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। চালের বাজার অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেশ কিছু চালকল মালিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে বাজার অস্থির এখনও করছে। দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট করছে তারা। তবে গতবছরের মাঝামাঝি সময় চালের বাজার বৃদ্ধি হলেও ২০১৯সালের শেষ দিকে চালের বাজার কিছুটা কমে এসেছে।

মিরপুরে বখাটেদের কাছে হার মানলেন স্কুলছাত্রী মুন্নী:

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাতলমারি গ্রামের হেকমত আলী ওরফে ভাষার মেয়ে ও কেবিএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার মুন্নী। ২০১৯ সালের (২৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে মুন্নী তার চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য আমলা বাজারে ফুল কিনতে যায়। পথে মধ্যে এলাকার কয়েকজন বখাটে জোরপুর্বক পাশেই আমলা আলু বীজ খামারের মধ্যে নিয়ে যায়। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন মুন্নীকে উদ্ধার করে স্থানীয় মহিলা মেম্বার রেজেলা খাতুনের সাথে অটোরিকশা যোগে তার বাড়িতে পাঠায়। পথের মধ্যে মেম্বারকে হুমকি দিয়ে অটোরিকশা থামিয়ে মুন্নিকে ফের পাশর্^বর্তী ছাদিমনের বাড়ীতে নিয়ে যায়। এ সময় তার ওপর শারিরীকভাবে নির্যাতন করে ওই বখাটে যুবকরা। পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই বখাটেদের হাতে শারীরিক নির্যাতন ও আত্মসন্মানের ভয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মুন্নির চাচা হাশেম আলীর বাড়িতে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তার পড়ার টেবিলে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে বখাটেদের অত্যাচারের বিষয় তুলে ধরে সে। এ ঘটনায় মুন্নি’র পরিবার মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করলে সকল আসামিরা পুলিশের হতে গ্রেফতার হয়।

এঘটনার সবশেষ,পুলিশ এঘটনার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় গঞ্জেরাজ পরিবহনের ধাক্কায় শিশু আকিফা হত্যা:

ঘটনাটি ২০১৮ সালের হলেও মায়ের কোলে শিশু আকিফার রাস্তা পারা পারের
ভিডিও ফুটেজ দেখে দেশবাসীর চোখের পানি পড়েছে। উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট (বুধবার) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ পরিবহনের একটি বাস কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ের কাউন্টারে এসে থামে। সে সময় থেমে থাকা বাসের সামনে দিয়ে আট মাস বয়সী শিশু কন্যা আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পারা হচ্ছিলেন মা রিনা বেগম। হঠাৎ কোন হর্ণ ছাড়াই চালক খোকন বাসটি চালিয়ে দেন। এতে মায়ের কোল থেকে রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে গুরুত্বর আহত হয় শিশু কন্যা আকিফা। বাসের ধাক্কায় রিনা বেগমও আহত হন। মুমূর্ষু আবস্থায় ওই দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০আগষ্ট না ফেরার দেশে পাঁড়ি জমায় শিশু আকিফা। রাস্তার পাশে থাকা একটি দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সারা দেশেজুড়ে ব্যাপক চ্যাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

সারাদেশের মানুষ ওই সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত মায়ের কোলে শিশু আকিফার রাস্তা পারা পারের ভিডিও ফুটেজ দেখে চোখের পানি ফেলেছেন অনেকেই। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে নিহত আকিফার পিতা হারুন উর রশীদ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ঘাতক বাসের চালক খোকন, সুপারভাইজার ইউনুস মাষ্টার এবং ওই বাসের মালিক জয়নুলকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এঘটনার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা: গ্রামবাসীর তোপের মুখে পালিয়ে যান বুয়েট উপাচার্যঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী ও কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদকে হত্যা দেশী গণমাধ্যমসহ বিদেশী গণমাধ্যমে বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার ফাহাদের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) রোববার দিনগত রাত ৮টার দিকে শেরে বাংলা হলের ১০১১নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে শেরে বাংলা হলের একতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে (বুয়েট)সহ দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। পরে দিন নিহত আবরার ফাহাদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।

দাফনের দুইদিন পর বুধবার বিকেল ৫টার দিকে আবরার ফাহাদের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান উপাচার্য। পরে তিনি আবরারের কবর জিয়ারত করেন। তারপর আবরার ফাহাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে হেঁটে রওনা হন তিনি। কিছু দুর গিয়েই গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন। আবরার ফাহাদের বাবার সাথে দেখা হলেও তার বাড়িতে ঢুকতে পারেননি উপাচার্য। এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিল ও গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে ভিসি সাইফুল ইসলাম এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

খোকসায় সম্মলেন আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলাগুলি বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়:

২০১৯ সালের ২৫নভেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সকালে ত্রি-বার্ষিক সম্মলেন শুরু হওয়ার আগে চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের উত্তেজিত কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সভাস্থলে পুলিশ টহল পুলিশের পক্ষ থেকে জোরদার করা হয়েছিল। বৈঠা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁরা একে অপরকে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে খোকসা ইউনিয়নের ক্লাবমোড়, তেল পাম্প, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দুই দলের কর্মী সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তবে কুষ্টিয়া জেলায় বছরজুড়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেলেও বড় বিরুদ্ধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে বেশ কয়েক বছর যাবত এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কলেজছাত্র বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়:

২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে মারা গেলেন কামরুজ্জামান ইমন (১৮) নামে এক কলেজছাত্র। ওই কলেজছাত্রের পরিবারের উদাসীনতা ও পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত ‘সমর্পণ’ নামে একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

দাফনের চারদিন পর অভিযুক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছিল নিহত ইমনকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে ইনজেকশন দেওয়ার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এঘটনা নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের।

ঘটনার আট দিন পর নিহত ইমনের চাচা মিরপুর থানায় বাদী হয়ে ঐ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় নিরাময় কেন্দ্রের মালিক আব্দুল মতিনসহ তিন সহযোগীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন ময়নাতদন্তের জন্য ওই কলেজছাত্রর মরদেহ কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়।

সবশেষ এ ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহর তদন্ত রিপোর্ট পেলেই আদালতে মাধ্যমে মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।