ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব নিয়ে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র
সবুজদেশ ডেস্কঃ
অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ গোটা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও অবৈধ বসতি স্থাপন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক নির্বাচনে ইসরায়েলের সাবেক কট্টরপন্থি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আবারও জয়লাভ করায় দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসার আগেই এ বিষয়ে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও ভূমি সংযুক্তির বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি। রোববার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বা ভূখণ্ড সংযুক্তির বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ পরিষ্কার হওয়ার পর এই কথা জানান তিনি।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলে গত ১ নভেম্বরের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দেশটির সাবেক কট্টরপন্থি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া ক্ষমতায় যেতে তিনি চরম কট্টরপন্থি এবং অবৈধ বসতি স্থাপনের পক্ষে থাকা দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। নেতানিয়াহুর জোটে থাকা উগ্রপন্থি এসব দলগুলোর মধ্যে রিলিজিয়াস জায়োনিজম নামে একটি দলও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, নেতানিয়াহুর অধীনে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে সম্ভবত আরও অবৈধ ইসরায়েলি বসতি গড়ে উঠবে। এর আগে ২০২১ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহু একটানা ১২ বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ওই সময়কালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবৈধ বসতির রেকর্ড সম্প্রসারণ হয়েছিল।
আল জাজিরা বলছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এই ধরনের ইসরায়েলি অবৈধ বসতি আন্তর্জাতিক আইনে বেআইনি বলে বিবেচিত হয় এবং সংকট সমাধানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অংশ হিসাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হিসাবে মনে করা হয়।
এদিকে নেতনিয়াহুর জোটে থাকা রিলিজিয়াস জায়োনিজম নামক ওই উগ্রবাদী দলটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণকে সমর্থন করে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে থাকে। নেতানিয়াহুর নতুন ওই জোটে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের তত্ত্বাবধানের জন্য একটি পদও বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাম-ঘেষা ইসরায়েলপন্থি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জে স্ট্রিটের সাথে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। এসময় তিনি নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানান। যদিও ওয়াশিংটনের পূর্ববর্তী ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসনের সঙ্গে প্রবীণ এই ইসরায়েলি নেতার সম্পর্ক অনেকটা সাংঘর্ষিক ছিল।
রোববার ব্লিংকেন বলেন, ‘আমরা একক কোনও ব্যক্তি নয় বরং সরকার যেসব নীতি অনুসরণ করে কাজ করছে সেটির মাধ্যমে তাদের মানদণ্ড পরিমাপ করব।’
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ‘নিরলসভাবে’ কাজ করবে।
ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের দ্ব্যর্থহীনভাবে বিরোধিতা করব আমরা। যার মধ্যে (ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে) অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া, পবিত্র স্থানগুলোর ঐতিহাসিক স্থিতাবস্থায় ব্যাঘাত, ধ্বংস এবং উচ্ছেদসহ সহিংসতার প্ররোচনাও রয়েছে।’
তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন ‘এলজিবিটিকিউ জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ইসরায়েলের সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচারের সমান প্রশাসনসহ মূল গণতান্ত্রিক নীতিগুলোর ওপর জোর দেবে।’
আল জাজিরা বলছে, নেতানিয়াহুর অতি-ডানপন্থি জোটে নোয়াম নামে একটি গোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যার নেতা আভি মাওজ এলজিবিটিকিউ অধিকারের ঘোর বিরোধী। এছাড়া নেতানিয়াহুর জোটের অন্য অংশীদার কট্টরপন্থি জিউশ পাওয়ার পার্টিও অবৈধ বসতি সম্প্রসারণকে সমর্থন করে।
জিউশ পাওয়ার পার্টির নেতা ইতামার বেন-গভির গত বছর পর্যন্ত ফিলিস্তিনি-বিদ্বেষী ধর্মীয়-অতি-ডানপন্থি উস্কানি প্রদানকারী হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী উস্কানি এবং সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি এলজিবিটিকিউ-বিরোধী সক্রিয়তার জন্য ২০০৭ সালে বেন-গভিরতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
বেন-গভির অবশ্য বলছেন, তিনি এখন আর সকল ফিলিস্তিনিকে তাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে নন। তবে শুধুমাত্র যাদেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বা ‘সন্ত্রাসী’ বলে মনে করা হবে সেসব ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কার পক্ষে তিনি।