সবুজদেশ ডেক্সঃ ফুল চাষিরা সামনে তিন দিবসে ফুল বিক্রি করে ভাল দামের জন্য ব্যাস্ত সামনে আসছে পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি। এই দিন গুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হয় বলে ফুলের চাহিদা থাকে ব্যপক হারে। আর এই উপলক্ষকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালীগঞ্জের ফুল চাষিরা। জমিতে সেচ, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যায় দিন কাটছে তাদের। ফুল চাষিরা আশা করছে সামনে দিবস গুলোতে ফাল মানের ফুল বানাতে পারলে অনেক ভাল দাম পাওয়া যাবে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর ফুল চাষ হয়েছে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে রয়েছে গোলাপ ৯ হেক্টর, গাঁদা ৩৩০ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৩৩ হেক্টর, গ্লাডিওলাস ১১ হেক্টর, জারবেরা ১.৫ হেক্টর ও লিলিয়াম ১ হেক্টর জমিতে।সারা বছর ফুল উৎপাদন করলেও বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রয়ারি. ১৬ ডিসেম্বর বাজার ধরাটাই থাকে চাষিদের মূল লক্ষ্য। এ দিবসে ফুল বিক্রি করেই মূলত সারা বছরের লাভ লোকসানের হিসেব মেলান চাষিরা। এ ছাড়া বার মাস বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল বিক্রি করে থাকে।ইকড়া গ্রামের ফুল চাষি রফিক উদ্দীন বলেন, ২ বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের আবাদ করেছি। ফেব্রুয়ারিতে বাজার ধরতে এখন জমিতে ওষুধ স্প্রে করছি। ক’দিন পর বাজার ভালো পাওয়ার আশা করছি। কৃষক আদম আলি জানান, তিনি ১ বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। এখন জমিতে সেচ ও সার দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২ থেকে ৩ টাকা দরে গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে ফুলের দাম ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রির আশা করছি।ফুলচাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফুল খুবই লাভবান চাষ। সামনে ভালো দাম পাব এই আশায় পরিচর্যা করছি। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে কালীগঞ্জের ফুলের গুণগত মান ভালো থাকায় ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে ফেরিঘাটের জ্যামের কারণে অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়। হৃদয়ের মধ্যে জমে থাকা পাহাড়সম যেন অসম্পন্নই থেকে যায় একটি ফুল ছাড়া। তাই প্রিয় মানুষটিকে মূল্যবান কোন উপহার দিতে পারুক আর নাই পারুক একটি ফুল দিয়ে প্রকাশ করতে পারে কথা। একটি ফুল অগণিত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ সকল বয়সের মানুষের হাতে তুলে দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে কালীগঞ্জের ফুল কন্যারা। প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভালবাসা দিবসের মতো দিন গুলোতে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে কালীগঞ্জএলাকার ফুল চাষীরা।এলাকায় মাঠের পর মাঠ চাষ করা হয়েছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল ক্ষেত। এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাথা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত এলাকার অধিকাংশ মেয়েরা ফুলের কাজে ব্যাস্ত থাকে। ফলে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহর গুলোতে। জাতীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও সারাবছর এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফুল সারাদেশের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলনগরী বলে খ্যাত বালিয়াডাঙ্গার ফুলকন্যা আয়েশা বেগম ও জরিনা খাতুন জানায়,আমরা বছরের বারো মাসই ফুল তোলাও মালা গাথার কাজ করি। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ একটু বেশি করতে হয়।আমাদের আয় উপার্জন ও বেশি হয়। তারা জানায়, প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ফুল মালিক ১০ টাকা করে দেয়। প্রতিদিন তারা ১৫ থেকে ২০ ঝোপা ফুল তুলতে পারে।কালীগঞ্জ কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্রমান্বয়ে ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গান্না, বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকুপ, গুটিয়ানী, কামালহাট, বিনোদপুর, দৌলতপুর, রাড়িপাড়া, মঙ্গলপৈতা, মনোহরপুর, সাইটবাড়িয়া, বেথুলী, রাখালগাছি, রঘুনাথপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে ব্যাপক হারে।সবচেয়ে বেশি গাধা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারণে সবাই এখন এই এলাকাকে ফুলনগরী বলেই চেনে। ১৯৯১ সালে এ এলাকায় সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন বালিয়াডাঙ্গার ছব্দুল শেখ। সামাজিক অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবস গুলোতে ক্ষেত থেকেই বিক্রি করে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এরপর থেকে এ চাষ বিস্তার লাভ করতে থাকে। ধান পাট সবজি প্রভৃতি ফসলের চাষ করে উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব বেশি একটা লাভ থাকেনা। কিন্তু ফুল চাষ করলে আবহাওয়া যদি অনুকুলে থাকে তাহলে যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে ১ লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব। ফলে দিন যত যাচ্ছে এ অঞ্চলে ফুল চাষ ততই বাড়ছে। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলকন্যা স্বরসতী জানায়, আমরা বাড়ির সব কাজ শেষ করে মাঠে ফুল তুলতে যায়। ফুল তুলে বাড়িতে নিয়ে আসার পর ঝুপা তৈরি করি। এক ঝুপায় ১ হাজার গাধা ফুল থাকে। এক ঝুপা ফুল গেথে দিলে মালিক আমাদের ১০ টাকা দেয়। সারাদিনে আমরা ১০ থেকে ১৫ টি ঝোপা তৈরি করি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here