জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো চক্রান্তে এনসিপি নেই। বরং, দলটি দ্রুততম সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি ফেব্রুয়ারির প্রথমে নির্বাচন দেয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমরা চাই, দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন হোক।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে হাফিজাবাদ ইউনিয়নের হুদুপাড়া দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পূজামণ্ডপগুলোতে আর্থিক সহায়তা দেন।
সারজিস আলম বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার জায়গা থেকে বলেছেন, বিদেশি কিছু শক্তি নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু, এনসিপি সব সময় বলেছে, বিচার ও সংস্কারের মধ্যে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরি। এটা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, প্রতীক পাওয়া না পাওয়া বা নির্বাচন পেছানো, এ দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পাই। এখানে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনের উচিত বাইরের চাপকে উপেক্ষা করে তাদের মেরুদণ্ডের পরিচয় দেওয়া এবং আইন অনুযায়ী এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতীক পাওয়ার লড়াইটা আইনগত। প্রয়োজনে আমরা রাজপথেও নামব। তবে, নির্বাচন পেছানোর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যারা নির্বাচন বিলম্বিত করার পাঁয়তারা করছে, তাদের উদ্দেশ্য কালো, তারা দেশকে অস্থির করতে চাইছে।
দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন প্রসঙ্গে এনসিপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আমরা শুধু উপহার নিয়ে আসিনি, বরং মন্দির ও শ্মশানের পারিপার্শ্বিক অবস্থা জেনে তা নথিভুক্ত করছি। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের খাস জমি ও ধর্মীয় সম্পত্তি ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে দখলের চেষ্টা হয়েছে অতীতেও, অভ্যুত্থানের পরেও। তাই, আমরা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানাবো, যেন এসব জমি ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও প্রকৃত অপরাধীদের কোনো দৃশ্যমান শাস্তি হয়নি। এতে ষড়যন্ত্রকারীরা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার সুযোগ পায়। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সারজিস আলম আরো বলেন, কিছু ভারতীয় মিডিয়া প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এআই টুল ব্যবহার করে প্রতীমার ছবি বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে, যেন বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নেই। কিন্তু, বাস্তবে আমরা দেখেছি, পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সন্তোষজনক এবং পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। আমাদের সমাজে এখনো সম্প্রীতির বন্ধন অটুট। একই হোটেলে বসে খাওয়া, একই যানবাহনে চলাচল, উৎসবে একে অপরকে নিমন্ত্রণ—এগুলোই প্রমাণ করে আমাদের ধর্মীয় সহাবস্থান কতটা দৃঢ়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী তানবিরুল বারী নয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি, জেলা যুবশক্তির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু কায়েস বাবু প্রমুখ।
সবুজদেশ/এসএএস