মোবাইল ফোনে কল করার একটি সর্বজনীন সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ফলে এখন থেকে ৫০ পয়সায় মোবাইল ফোনে কল করা যাবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে ফোনকলের খরচ কমবে। তবে এতে একই অপারেটরের কোনো গ্রাহককে ফোন করলে খরচ বাড়বে। মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকের ফোন করার সার্বিক খরচ আগের চেয়ে কমবে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সর্বনিম্ন কলরেট নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রধান নির্বাহীসহ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে টেলিযোগাযোগ খাতবিষয়ক আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হার ৫ শতাংশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, বিটিআরসির নিজস্ব ভ্যাট নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, নম্বর পরিবর্তন না করে অপারেটর বদলের সুবিধা বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা দুই মাস পর চালু এবং গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের জন্য নতুন নম্বর সিরিজ বরাদ্দ দেওয়া। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বর্তমানে একই অপারেটরে (অননেট) কল করার সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা আর অন্য অপারেটরে (অফনেট) কল করার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ পয়সা। নতুন কলরেট চালু হলে অননেট ও অফনেটের এই পার্থক্য আর থাকবে না। সব অপারেটরে কথা বলার সর্বনিম্ন মূল্য হবে ৫০ পয়সা। এর মধ্যে যে অপারেটর থেকে কল যাবে, সেই অপারেটর পাবে ৩৬ পয়সা, যে অপারেটরের নেটওয়ার্কে কল যাবে, তারা পাবে ১০ পয়সা ও ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) পাবে ৪ পয়সা।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এখন অননেট কলে সর্বনিম্ন মূল্য কাগজে-কলমে ২৫ পয়সা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কলে গড়ে গ্রাহকের খরচ হয় ৪০ পয়সা। আর অফনেট, অর্থাৎ অন্য অপারেটরে কল করার খরচ পড়ে ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৫ পয়সা। একক কলরেট চালু হলে অননেট কলের খরচ ১০ পয়সা বাড়বে, কিন্তু অফনেট কলের খরচ কমবে ৪৫ থেকে ৫০ পয়সা।

মোবাইল ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট কার্যকর

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে এনবিআর একটি ব্যাখ্যা দেওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেটের ভ্যাটও ৫ শতাংশ হবে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনার পর গতকাল থেকেই ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় শুরু করেছে অপারেটররা।

এমএনপি দুই মাস পেছাল

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমএনপি চালুর সর্বশেষ নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর আগে এমএনপি সেবা চালুর সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ৩১ জুলাই। এমএনপি সেবা চালুর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক জানায়, এটি চালু করতে তাদের দিক থেকে কারিগরি সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের অংশের কাজ এখনো শেষ করতে না পারায় সেবাটি চালুর তারিখ পিছিয়েছে। এদিকে এমএনপি সেবা চালুর সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এনবিআরের পক্ষে এত দিন বিটিআরসি ভ্যাট আদায় করে এলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নিজস্ব ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর নেই। এ কারণে ভ্যাট পরিশোধ নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা হতো। কারণ, নিবন্ধন না থাকায় বিটিআরসি ভ্যাট চালান অপারেটরদের দিতে পারত না। এই সমস্যার সমাধানে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিটিআরসিকে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে নির্দেশ দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের জন্য নতুন দুটি নম্বর সিরিজ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি গতকালের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোন বর্তমানের ০১৭ সিরিজের পাশাপাশি ০১৩ সিরিজ পাবে। আর ০১৯-এর পাশাপাশি অন্য সিরিজের জন্য বাংলালিংককে আবেদন করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here