ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ ঋণের সুদের হার কমছে
বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কেনায় দেওয়া ঋণের সুদহার আরেক দফা কমাচ্ছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কেনার ঋণের সুদহারে এত দিন সামান্য যে পার্থক্য ছিল, তা তুলে দিচ্ছে সংস্থাটি। ফলে এখন থেকে দুই ক্ষেত্রেই সুদের হার সমান থাকবে।
বিএইচবিএফসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, বিএইচবিএফসির পরিচালনা পর্ষদে সম্প্রতি সুদের হার কমানোর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য গত বৃহস্পতিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবেদন করেছে বিএইচবিএফসি। কারণ, নিয়মানুযায়ী এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়।
বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ আগস্টের মধ্যে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটি মানতেই সুদের হার কমানো হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’ স্বল্পবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আবাসন স্বপ্ন পূরণে বিএইচবিএফসির নতুন গৃহঋণের সুদের হার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে দেবাশীষ চক্রবর্তী আশাবাদী।
বিএইচবিএফসি সূত্রমতে, সংস্থাটি ১১ বছর পর ২০১৭ সালের ১ জুলাই সুদের হার কমায়। ২০০৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন শহরের অতি উন্নত এলাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের অন্যান্য উন্নত এলাকায় বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদের হার ছিল ১২ শতাংশ। ২০১৭ সালের ১ জুলাই তা কমিয়ে করা হয় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ৯ শতাংশের নতুন সুদহার কার্যকর হবে গত ১ জুলাই থেকে।
টঙ্গী, সাভারসহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে বাড়ি নির্মাণে দেওয়া ঋণের সুদহার ছিল ১০ শতাংশ, যা ১১ বছর পর ২০১৭ সালের ১ জুলাই কমিয়ে করা হয় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এই সুদের হারটি অবশ্য বদলাচ্ছে না। ফ্ল্যাট কেনার ঋণের ক্ষেত্রেও ১১ বছর ধরে যে সুদের হার ছিল ১২ শতাংশ, তা কমিয়ে ইতিপূর্বে করা হয় ১০ শতাংশ। এবার সেটিও হচ্ছে ৯ শতাংশ।
জানা গেছে, বিএইচবিএফসির পর্ষদ বৈঠকে ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার যৌক্তিকতা ও বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত এসেছে, ‘সাধারণ ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৯ শতাংশ এবং ফ্ল্যাট ঋণের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ শতাংশ করার সুযোগ রয়েছে।’
এতে সংস্থার আয় কমে যাবে বলে প্রশ্ন ওঠে বৈঠকে। তবে তারও একটি সমাধান বের করা হয় বৈঠকে। জানা গেছে, বিএইচবিএফসি এখন ঋণ আদায় বাড়াতে আরও বেশি নজর দেবে এবং আদায় হওয়া টাকা নতুনভাবে বিনিয়োগ করা হবে।
এরই মধ্যে যে গ্রাহকেরা ১০ এবং ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কী হবে—জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের ১ জুলাই বা তারপর যেসব ঋণ মঞ্জুর হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেই কেবল নতুন সুদের হার কার্যকর হবে। ৩০ জুনের আগে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে আগের সুদহারই বহাল থাকবে। ৩০ জুন পর্যন্ত সব কিস্তি দেওয়া থাকলে (আপটুডেট) ১ জুলাই থেকে তাঁদের ঋণের সুদ নতুন হারে কার্যকর হবে। কোনো গ্রাহক আপটুডেট না থাকলে, যে তারিখে আপটুডেট হবেন, সেই তারিখ থেকে তাঁর ঋণে নতুন সুদহার কার্যকর হবে। বিএইচবিএফসির বর্তমান গ্রাহক ৩১ হাজার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংস্থাটি ৪০১ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে এবং একই সময়ে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৬২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে।
এদিকে অনুমোদন পেলেই জারি হবে প্রজ্ঞাপন, কিন্তু অনুমোদনটি কবে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান ১১ আগস্ট প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব শিগগির অনুমোদন হয়ে যাবে।’ তবে গতকাল পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।