বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: যা বললেন ডরিন
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ড ছিল জেলার আলোচনার র্শীষে। পরিবারের দাবি, ২০২৪ সালের মে মাসের ১১ তারিখে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতায় যান। তবে তিনি ঠিক কি কারণে ভারতে গিয়ে ছিলেন তা নিয়ে রয়েছে ধুম্রজাল। ৭ মাসেও হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। আর এই সংসদ হত্যা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা কারাগারে। যা ছিল বছরজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
জানা গেছে, গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। ওই দিন দুপুরের দিকে ঝিনাইদহ থেকে সড়কপথে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে দর্শনা চেকপোস্ট পর্যন্ত যান এমপি আনার। পরে দর্শনা-গেদে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর একটি ভ্যানে চড়ে রওনা দেন ভারতের অভ্যন্তরে। কলকাতায় গিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজীম তার কথিত বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছিলেন। কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি। এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার দুই দশকের বেশি সময় ধরে সখ্যতা ছিল এবং যাতায়াত ছিল।
গত ১৪ মে থেকে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আজীমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ ছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতায় উপদূতাবাসে যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলা হয়। এদিকে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপর ২২ মে দুপুরের দিকে কলকাতা গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয় কলকতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনে হত্যা করা হয়েছে এমপি আনারকে। মুহুর্তের মধ্যেই খবর চলে আসে এলাকায়। নেতাকর্মীরা ভীড় করতে থাকে এমপির বাসভবনের সামনে। এরপর থেকেই এমপি আনার হত্যার জড়িতদের শাস্তির দাবি ওঠে। এমপি আনারের একটি মৃতদেহের ছবি পাঠানো হয় জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার কাছে। হৈচৈ পড়ে যায় জেলাজুড়ে। গত ৬ জুন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের আগে গ্যাস বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইলে দুইটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। সেই মোবাইল উদ্ধার করতে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ আসে তখনকার ডিবি প্রধান হারুন। কিন্তু কোন মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১জুন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করা হয়। পরে এই হত্যা মামলায় মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর জেলাজুড়ে শুরু হয় এমপি আনার হত্যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন। সেই থেকে কারাগারেই আছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা।
সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে কলকাতায় গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেয় এমপির ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। কয়েকদিন পরেই গণমাধ্যমে খবর বের হয় আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিলেছে।
নেতাকর্মীদের দাবি, অন্তত এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের খণ্ডাংশ যেন দেশে এনে দাফন ও তার নামাজে জানাযার ব্যবস্থা করা হয়। তার নেতাকর্মীরা যেন কবর জিয়ারত করতে পারে। এমনই আশা তাদের।
এমপির ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন মুঠোফোনে সবুজদেশ নিউজকে বলেন, গত ২৫ নভেম্বর তিনি ভারতে গিয়েছিলেন এবং ২৯ তারিখে কলকাতায় ডিএনএ টেস্টের নমুনা দিয়েছেন। ভারতের সিআইডির এক কর্তকর্তা আনঅফিশিয়াল জানিয়েছে যে ডিএনএ মিলেছে। কিন্তু অফিশিয়ালভাবে কোন কাগজপত্র পাইনি।
তিনি আরো বলেন, তারা আমাকে সব কিছু ম্যানেজ করে বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ দিবে বলে জানিয়েছে। তবে আমাদের পরিবারের দাবি, দ্রুতই যেন বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ হস্তান্তর করে। তাহলে এলাকায় দাফন ও জানাযার ব্যবস্থা করতে পারবো।
সবুজদেশ/এসএএস