ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্দরে আসা নামিদামি ১৪৭ গাড়ি উঠছে নিলামে

Reporter Name

খুলনাঃ

অবশেষে নিলামে উঠেছে মোংলা বন্দরের বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৪৭টি নামিদামি গাড়ি। জাপান থেকে মোংলা বন্দরে আমদানির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড় না হওয়ায় মোংলা কাস্টমস হাউস রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) এই গাড়িগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে। আগামী ৫ জুন এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এর আগে ২৩, ২৪ ও ২৫ মে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য শিডিউল বিক্রি করা হয়। আগামী ৩১ মে ঢাকা দক্ষিণ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনা এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্রগ্রাম কাস্টম হাউস ও মোংলা কাস্টম হাউসে রক্ষিত দরপত্র বক্সে দরদাতার ১০ শতাংশ জামানতসহ দরপত্র (শিডিউল) জমা দিবেন নিলামে অংশগ্রহণকারীরা। প্রতি মাসে এই নিলাম প্রক্রিয়ার নিয়ম থাকলেও সৃষ্ট জটিলতার কারণে এবার চার মাস পর এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানায় মোংলা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এবারও গাড়ির নিলামে অনলাইন থেকে বিড করা যাবে।

মোংলা কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ছবি রাণী দত্ত বলেন, ৩০ মে পর্যন্ত মোংলা বন্দরে গিয়ে নিলামে তোলা গাড়ি দেখার সুযোগ পাবেন। নিলামে ওঠা এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে নিশান, পাজারো, এক্সিও হাইব্রিড, পিয়ার্স হাইব্রিড, টয়োটা ভিজ, প্রোবক্স, এ্যাকুয়া হাইব্রিড, টয়োটা হাইব্রিড, করোলা ফিল্টার, হাইয়েচ, মাইক্রো ও এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৪৭টি গাড়ি।

এসব গাড়ির মধ্যে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ১৭, ১৮. ১৯, ২০, ২১ ও ২২ সাল মডেলের গাড়ি রয়েছে। ৩১ মে সকাল ৯টা থেকে পর্যন্ত বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই নিলামের প্রস্তাবিত মূল্য গ্রহন করা হবে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা তা করেননা। এরপর আমদানিকারকদের আরও ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়ার পরও গাড়ি ছাড় না করায় নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে নিলামে ওঠানো হচ্ছে এসব গাড়ি। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশের পর এই গাড়িগুলো বিক্রি হবে। পরে সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিলামে ক্রয় করা গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মোংলা কাস্টমস হাউস সুত্র জানায়, গত চার মাস মোংলা বন্দরে গাড়ির নিলাম বন্ধ ছিল। গত বছরের নভেম্বরে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। সর্বশেষ কাস্টমসের নিয়োগকৃত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ‘আল আমিন ট্রেডার্স’। এরপর নিলামকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়। তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কমমূল্য কমিশন দাখিল করে। এরপর আবার ২৮ মার্চ দরপত্র আহবান করা হলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান কমিশন দাখিল করে। এরমধ্যে চট্রগ্রমের ‘কে এম কর্পোরেশন’ কোম্পানি নিয়োগ পায়। তারাই আগামী ৫ জুন মোংলা বন্দরে ১৪৭টি গাড়ি নিলামের আয়োজন করছে।

এদিকে এই নিলাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিবুল্লা ডন বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বি ক মন্দা চলছে, সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও এখন গাড়ি কিনছে না। এর মধ্যে আমাদের আরেকটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে কাস্টমস নিলাম প্রক্রিয়া। আমরা এই সময়ে নিলাম তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের কথা রাখছেননা’।

এ বিষয়ে মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ন কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মোংলা কাস্টমসের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। দীর্ঘদিন আমদানীকৃত গাড়ি বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়। নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিাধাও হবে, অন্যদিকে সঠিক সময় সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে’।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ কুদরত আলী বলেন, জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয় ২০০৯ সালের ৩ জুন। প্রথম চালানে এ বন্দর দিয়ে ২৫৫টি গাড়ি রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) গাড়ি আমদানি করে হক-বে অটোমোবাইল কোম্পানি। এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৪৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। যা মোট আমদানি গাড়ির শতকরা ৬০ ভাগ। আমদানি করা গাড়িগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেড ও গোডাউনে রাখা আছে। আইনানুযায়ী এসব গাড়ি ডেলিভারি দেওয়া হবে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
৮৪ Time View

বন্দরে আসা নামিদামি ১৪৭ গাড়ি উঠছে নিলামে

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

খুলনাঃ

অবশেষে নিলামে উঠেছে মোংলা বন্দরের বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৪৭টি নামিদামি গাড়ি। জাপান থেকে মোংলা বন্দরে আমদানির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড় না হওয়ায় মোংলা কাস্টমস হাউস রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) এই গাড়িগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে। আগামী ৫ জুন এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এর আগে ২৩, ২৪ ও ২৫ মে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য শিডিউল বিক্রি করা হয়। আগামী ৩১ মে ঢাকা দক্ষিণ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনা এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্রগ্রাম কাস্টম হাউস ও মোংলা কাস্টম হাউসে রক্ষিত দরপত্র বক্সে দরদাতার ১০ শতাংশ জামানতসহ দরপত্র (শিডিউল) জমা দিবেন নিলামে অংশগ্রহণকারীরা। প্রতি মাসে এই নিলাম প্রক্রিয়ার নিয়ম থাকলেও সৃষ্ট জটিলতার কারণে এবার চার মাস পর এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানায় মোংলা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এবারও গাড়ির নিলামে অনলাইন থেকে বিড করা যাবে।

মোংলা কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ছবি রাণী দত্ত বলেন, ৩০ মে পর্যন্ত মোংলা বন্দরে গিয়ে নিলামে তোলা গাড়ি দেখার সুযোগ পাবেন। নিলামে ওঠা এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে নিশান, পাজারো, এক্সিও হাইব্রিড, পিয়ার্স হাইব্রিড, টয়োটা ভিজ, প্রোবক্স, এ্যাকুয়া হাইব্রিড, টয়োটা হাইব্রিড, করোলা ফিল্টার, হাইয়েচ, মাইক্রো ও এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৪৭টি গাড়ি।

এসব গাড়ির মধ্যে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ১৭, ১৮. ১৯, ২০, ২১ ও ২২ সাল মডেলের গাড়ি রয়েছে। ৩১ মে সকাল ৯টা থেকে পর্যন্ত বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই নিলামের প্রস্তাবিত মূল্য গ্রহন করা হবে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা তা করেননা। এরপর আমদানিকারকদের আরও ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়ার পরও গাড়ি ছাড় না করায় নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে নিলামে ওঠানো হচ্ছে এসব গাড়ি। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশের পর এই গাড়িগুলো বিক্রি হবে। পরে সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিলামে ক্রয় করা গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মোংলা কাস্টমস হাউস সুত্র জানায়, গত চার মাস মোংলা বন্দরে গাড়ির নিলাম বন্ধ ছিল। গত বছরের নভেম্বরে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। সর্বশেষ কাস্টমসের নিয়োগকৃত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ‘আল আমিন ট্রেডার্স’। এরপর নিলামকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়। তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কমমূল্য কমিশন দাখিল করে। এরপর আবার ২৮ মার্চ দরপত্র আহবান করা হলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান কমিশন দাখিল করে। এরমধ্যে চট্রগ্রমের ‘কে এম কর্পোরেশন’ কোম্পানি নিয়োগ পায়। তারাই আগামী ৫ জুন মোংলা বন্দরে ১৪৭টি গাড়ি নিলামের আয়োজন করছে।

এদিকে এই নিলাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিবুল্লা ডন বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বি ক মন্দা চলছে, সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও এখন গাড়ি কিনছে না। এর মধ্যে আমাদের আরেকটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে কাস্টমস নিলাম প্রক্রিয়া। আমরা এই সময়ে নিলাম তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের কথা রাখছেননা’।

এ বিষয়ে মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ন কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মোংলা কাস্টমসের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। দীর্ঘদিন আমদানীকৃত গাড়ি বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়। নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিাধাও হবে, অন্যদিকে সঠিক সময় সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে’।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ কুদরত আলী বলেন, জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয় ২০০৯ সালের ৩ জুন। প্রথম চালানে এ বন্দর দিয়ে ২৫৫টি গাড়ি রিকন্ডিশন (ব্যবহৃত) গাড়ি আমদানি করে হক-বে অটোমোবাইল কোম্পানি। এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৪৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। যা মোট আমদানি গাড়ির শতকরা ৬০ ভাগ। আমদানি করা গাড়িগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেড ও গোডাউনে রাখা আছে। আইনানুযায়ী এসব গাড়ি ডেলিভারি দেওয়া হবে।